জাতীয় সড়কের পাশে ভ্যাটের মধ্যে পড়ে ছিল সদ্যোজাত ফুটফুটে এক শিশু। স্থানীয় মানুষ উদ্ধার করেছিলেন তাকে। শিশুটির ঠাঁই হয় বারাসত জেলা হাসপাতালে। পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতার হোমে।
একই ভাবে দমদম স্টেশনের পাশে পড়ে থাকা এক সদ্যোজাতকে আগলে রেখেছিল রাস্তার এক দল কুকুর। উদ্ধার হওয়া সেই শিশুটিরও ঠাঁই হয় আরজিকর হাসপাতালে।
অনাথ শিশু উদ্ধারের পর তাদের স্টেট অ্যাডপশন এজেন্সি (সা) বা শিশু হোমে রাখাটাই নিয়ম। তবে কোনও বাচ্চা অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার হলে প্রথমে হাসপাতালে পাঠানো হয়। সুস্থ হওয়ার পরে তাকে পাঠানো হয় শিশু হোমে। কিন্তু উত্তর ২৪ পরগনার শিশুদের জন্য এই মুহূর্তে এমন কোনও হোম নেই। তাই সম্প্রতি বারাসত এবং দমদমে উদ্ধার হওয়া দুই সদ্যোজাতকে হোমে রাখা যায়নি। হাসপাতালেই ব্যবস্থা করতে হয়। পরে তাদের পাঠানো হয় কলকাতার শিশু হোমে।
আর সেখানেই সমস্যা। কারণ পরে বাচ্চাকে সেই হোম থেকে জেলার শিশু কল্যাণ সমিতির সামনে হাজির করাতে আনতে হয়। ফলে বার বার অন্য জেলার থেকে বাচ্চাকে এনে শিশু কল্যাণ সমিতির কাছে হাজির করানো বেশ ঝুঁকির। অথচ করার কিছু নেই। আর এই সমস্যা শুধু উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ক্ষেত্রেই নয়, নদিয়া, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং এবং আলিপুরদুয়ারেও কোনও শিশু হোম নেই। নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি জেলায় একটি করে শিশু হোম থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু এই পাঁচটি জেলায় তা নেই কেন? রাজ্যের শিশু ও সমাজকল্যাণ দফতর সূত্রের খবর, নদিয়া, দার্জিলিং এবং আলিপুরদুয়ারে এখনও পর্যন্ত এ ধরনের শিশু হোম তৈরিই হয়নি। তবে উত্তর ২৪ পরগনা এবং জলপাইগুড়িতে এক সময়ে শিশু হোম ছিল। কিন্তু গত কয়েক বছরে সেগুলির বিরুদ্ধে একের পর এক শিশু বিক্রির অভিযোগ ওঠায় সেগুলির লাইসেন্স বাতিল করা হয়। তার বদলে নতুন কোনও শিশু হোম তৈরি করা সম্ভব হয়নি। অথচ শিশু হোম ছাড়া এত ছোট বাচ্চাকে রাখার মতো পরিকাঠামো অন্য কোনও হোমে থাকে না। ফলে সদ্যোজাত বা শিশু উদ্ধার হলে শিশু হোমের অভাবে বিপাকে পড়তে হয় এই পাঁচ জেলার শিশু কল্যাণ সমিতিগুলিকে। এ প্রসঙ্গে উত্তর ২৪ পরগনার শিশু কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান অরবিন্দ দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘শিশু হোম না থাকায় আমাদের জেলায় শিশু উদ্ধার হলে আমরা আতঙ্কে থাকি। ছোট্ট বাচ্চাকে রক্ষণাবেক্ষণ বা বাঁচিয়ে রাখা তো সহজ কথা নয়। তাই নিরুপায় হয়েই শিশুদের হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে চিঠিচাপাটি করে তাদের পাঠানো হয় কলকাতা বা হাওড়ার শিশু হোমে।’’ তবে পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা আয়োগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নদিয়ায় একটি হোম চালুর প্রক্রিয়া চলছে।
শিশু হোম না থাকায় যে সমস্যা হচ্ছে তা স্বীকার করে নিয়ে আয়োগের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘উদ্ধার হওয়া শিশুর শারীরিক সমস্যা না থাকলে তাকে হাসপাতালে রাখার কথা নয়। শিশু হোমেই রাখার নিয়ম। তাই যে সব জেলায় শিশু হোম নেই, সেখানে তা তৈরির জন্য তদ্বির করা হবে।’’