ক’দিন আগে সে গা ঘেঁষে বেরিয়ে যাওয়ায় খানিক বর্ষার আমেজ পোয়ানো গিয়েছিল। আর তার দেখা নেই। ফলে আবার যে-কে-সে-ই।
আষাঢ় পেরোতে চললেও ঝেঁপে বৃষ্টির পালা যেন উধাও হয়ে গিয়েছে দক্ষিণবঙ্গ থেকে। কারণ, তেমন বৃষ্টি বয়ে আনবে যে, সেই মেঘদূতই এসে হাজির হয়নি! সে গিয়ে থাবা গেড়েছে উত্তর ভারতে। তাই সব মেঘ গিয়ে যেন রাজস্থান-উত্তরাখণ্ডের আকাশে গিয়ে জমা হয়েছে। ভাসিয়ে দিচ্ছে সেখানকার মাটি। অথচ এই সময়টায় মেঘদূতের কল্যাণে যেখানে অঝোরধারে বৃষ্টি হওয়ার কথা, সেই দক্ষিণবঙ্গ সমেত তামাম পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারত প্রায় নির্জলা।
আবহবিদদের কাছে ‘মেঘদূত’ হল নিম্নচাপ, নিদেনপক্ষে ঘূর্ণাবর্ত। সে থাকলেই বাদল মেঘের আনাগোনা বাড়ে। যেমন, মরসুমি নির্ঘণ্ট মেনে জুনের গোড়ায় কেরলে তার হাজির থাকার কথা ছিল। থাকেনি। পরিণামে এ বার সেখানে বর্ষা ঢুকেছে নির্দিষ্ট সময়ের সাত দিন বাদে। আবার ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ সীমানায় তৈরি ঘূর্ণাবর্তের টানে কেরল থেকে ৯ দিনে বর্ষা এসেছে দক্ষিণবঙ্গে। কিন্তু থিতু হয়নি। এখানে বুড়ি ছুঁয়ে ছুট লাগিয়েছে উত্তরে, সাত দিন ‘বিফোর টাইমে’ পৌঁছেছে জয়পুর-দেহরাদুনে। কারণ, ততক্ষণে মেঘদূত রাজস্থান-উত্তরাখণ্ডে গিয়ে হাঁকডাক শুরু করেছে।
আর তারই দাপটে উত্তরাখণ্ড বন্যায় ডুবুডুবু। রাজস্থানে অতিবৃষ্টির হুঁশিয়ারি। অন্য দিকে বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, অসম-সহ গোটা উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণবঙ্গে একেবারে উল্টো ছবি। মৌসম ভবনের হিসেবে, জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহের শেষে পূর্ব ও উত্তর-পূর্বে বৃষ্টির ঘাটতি ১৭%। দক্ষিণবঙ্গে ১১%। জাঁকিয়ে বর্ষা না-আসায় দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে চাষিরা বীজতলায় হাত দিতে পারেননি। এমতাবস্থায় রাজ্যের কৃষি দফতর বিকল্প কিছু ভাবছে?
কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু অবশ্য আশাবাদী। ‘‘পরিস্থিতি এখনও খারাপের দিকে যায়নি।’’— বলছেন তিনি। তবে এ-ও জানিয়ে রাখছেন, জুলাইয়ের বাকি দিনগুলোয় যথেষ্ট বৃষ্টি না-হলে সমস্যা হতে পারে।
তুলনায় উত্তরবঙ্গের অবস্থা বেশ ভাল। সৌজন্য, মেঘদূত। গত দু’সপ্তাহ ধরে ওখানে একটা ঘূর্ণাবর্ত ঘাঁটি গেড়ে বসে আছে। তার দৌলতে উত্তরবঙ্গে গত এক মাসে বৃষ্টি হয়েছে ৭১৩.৬ মিলিমিটার, যা কিনা এ সময়ের স্বাভাবিকের ১৬% বেশি!
দক্ষিণবঙ্গের কপাল আর খুলবে না? মেঘদূত কি নিরুদ্দেশই থাকবে?
কেন্দ্রীয় আবহবিজ্ঞান মন্ত্রকের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথ হাল ছাড়ছেন না। ‘‘দক্ষিণবঙ্গের উপরে একটা ঘূর্ণাবর্ত দানা বাঁধছে। তাতে আগামী সপ্তাহটা দক্ষিণবঙ্গ ভাল বৃষ্টি পাবে।’’— আশ্বস্ত করছেন তিনি। আবহবিদদের আশা, ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে বায়ুপ্রবাহ অনুকূল থাকলে ঘূর্ণাবর্তটি বেশ কিছু দিন পূর্ব-উত্তর পূর্বে থিতু হবে। তার টানে বঙ্গোপসাগর থেকে জোলো মেঘ ঢুকে ভরিয়ে দেবে দক্ষিণবঙ্গের আকাশ। বর্ষার আসল চেহারা তখনই খুলবে বলে ভরসা দিচ্ছে হাওয়া অফিস।