নাম: এলাকার অনেকেই জানেন না লেনিন কে। নিজস্ব চিত্র
লেনিনের মূর্তি সেখানে নেই। তাতে কী? এলাকার নাম যে লেনিনপুর। ত্রিপুরায় লেনিনের মূর্তি ভাঙার ঘটনা নিয়ে হইচইয়ের মধ্যেও অবশ্য অনেকটাই নিরুত্তাপ শিলিগুড়ির এই লেনিনপুর। বাসিন্দাদের অনেকেই যে ‘লেনিন’ কে জানেন না।১৯৬৮ সালে উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছনের অংশে খাস জমিতে বর্তমানের ওই লেনিনপুরে কলোনি গড়ে উঠেছিল। তার আগে মৌজার নামে একাংশ বৈরাতিশাল এবং একাংশ জিতু বলেই পরিচিত ছিল। কলোনি গড়ে উঠলে মূলত বাম মনোভাবাপন্ন বাসিন্দারাই বসবাস শুরু করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সে সময় উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের তৎকালীন সহকারী অধ্যাপক তথা পরবর্তীতে বিদ্যুৎমন্ত্রী শঙ্কর গুপ্তের নেতৃত্বে বাসিন্দারা মিলে ওই কলোনির নাম দিয়েছিলেন লেনিনপুর। শঙ্করবাবু জ্যোতিবাবুর সচিবও ছিলেন। ১৯৬৭ সালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজে যোগ দিয়েছিলেন। সে সময় এলাকায় বামপন্থী আন্দোলনকে জোরদার করেন। তবে লেনিনের কোনও মূর্তি এখানে বসানোর কথা কেউ ভাবেননি। লেনিনপুরের অনেক বাসিন্দাই জায়গার নাম হিসাবেই ওই নামটির সঙ্গে পরিচিত। কে লেনিন তা নিয়ে তাদের কোনও মাথাব্যথা নেই। বরং বিবেকানন্দ, নেতাজির মূর্তি বসেছে।
তৃণমূলের স্থানীয় নেতা দুর্লভ চক্রবর্তীর কথাও, ‘‘একটা সময় এই অঞ্চলে বাসিন্দাদের ৯৮ শতাংশই ছিলেন বাম কর্মী-সমর্থক। সে কারণেই এলাকার নাম তারা লেনিনপুর রেখেছিলেন।’’ সরকারি নথিতেও ওই নাম স্বীকৃত হয়েছে গোড়ার দিকেই। চিঠিপত্র আসে লেনিনপুর নামেই।
পুরনো বাসিন্দাদের মধ্যে দুর্লভবাবুর বাবা দুলালবাবু ১৯৬৯ সালেই এলাকায় এসেছিলেন। তাঁর কথায়, তখন লোকজন বেশি ছিল না। সেই সময় তাঁরা জমির পাট্টা পান লেনিনপুরের নামেই।
সত্তরের দশকের শেষের দিক থেকে এলাকায় বসবাস করতে শুরু করেন জীবন ভৌমিক, অসীম চৌধুরীর মতো বাসিন্দারা। তাঁরা বলেন, ‘‘শঙ্করবাবুর সময় তিনিই এলাকার নামকরণ লেনিনপুর করেছিলেন। সরকারি ভাবেই এই নাম স্বীকৃত।’’
এলাকার বাসিন্দা চা দোকানি শ্যামলচন্দ্র সরকার বা তরুণ প্রজন্মের তাপস মণ্ডলরা লেনিনকে তা নিয়ে অন্ধকারে। তবে এলাকার নামে লেনিনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। নির্বাচনের সময় এখানেই লেনিনপুর বুথ বা ভোটগ্রহণ কেন্দ্র হয়। এলাকায় বর্তমানে ৯৮৬ জন ভোটার।
তবে লেনিনের মূর্তি ভাঙার বিষয়টি ভাল নজরে দেখছেন না লেনিনপুরের সচেতন বাসিন্দারা। এক সময় সেনাবাহিনীতে কর্মরত ৮৮ বছরের বৃদ্ধ কনকরঞ্জন দেব সত্তরের দশকের শেষ থেকে লেনিনপুরে বসবাস শুরু করেন। তাঁর কথায়, ‘‘মূর্তি ভাঙাকে আমরা তখনও সমর্থন করি না।’’ ৩৫ বছরের বিশ্বনাথ মন্ডল বলেন, ‘‘লেনিন কমিউনিস্ট নেতা ছিলেন এটুকুই জানি। তবে মূর্তি ভাঙার ঘটনা নোংরা রাজনীতি। আমরা এলাকার নাম লেনিনপুরই চিরকাল রাখতে চাই।’’
এলাকাটি আঠেরোখাই গ্রাম পঞ্চায়েতর অধীনে। বামেদের দখলেই রয়েছে গ্রাম পঞ্চায়েতটি। মূর্তি ভাঙার ঘটনা নিয়ে এ দিন শিবমন্দির এলাকায় প্রতিবাদ মিছিলও করেন স্থানীয় সিপিএম নেতৃত্ব। লেনিনপুরে দিকে অবশ্য মিছিল যায়নি।