মজে যাওয়া কানা দ্বারকেশ্বর। ছবি: মোহন দাস।
এর আগে এমন সঙ্কটে পড়তে হয়নি। কারণ সেটা ছিল প্রথম নির্বাচন। কিন্তু এ বার মাথায় হাত পড়েছে প্রার্থীর।
পাঁচ বছর আগে বিধানসভায় প্রার্থী হয়ে ভোট চাইতে গিয়ে যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তার অধিকাংশই পূরণ হয়নি বলে তাঁর কেন্দ্রের লোকজনেরই অভিযোগ রয়েছে। এ বার ভোটারদের কাছে গিয়ে কী বলে তাঁকে সমর্থন করতে বলবেন তা নিয়েই কপালে ভাঁজ পড়েছে আরামবাগ কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরার। আর সেই কারণেই এখনও প্রতারই শুরু করতে পারেননি প্রার্থী, এমনটাই বলছে বিরোধী সিপিএম।
কৃষ্ণচন্দ্রবাববুর কথায়, ‘‘এটা ঠিক যে, কবে থেকে প্রচার শুরু হবে তার ব্লু-প্রিন্ট এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে আরামবাগ শহরকে যানজটমুক্ত করতে একটা উড়ালপথ নির্মাণ এবং পল্লিশ্রীর কাছে দ্বারকেশ্বর নদীর উপর একটি বিকল্প সেতু নির্মাণে বেশি জোর দেওয়া হবে।’’ একইসঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে বিরোধীদের অভিযোগের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘যে সব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, সে সব রাখার চেষ্টা করছি সে সম্পর্কেও প্রামাণ্য তথ্য প্রয়োজনে প্রচারে রাখা হবে।”
গত বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরার প্রচারের অন্যতম বিষয় ছিল বন্যাপ্রবণ আরামবাগে বন্যা নিয়ন্ত্রণ। তাঁর নির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি ছিল “কানা দ্বারকেশ্বর নদী (বর্তমানে মজে যাওয়া খাল) সংস্কার এবং বাতানল পঞ্চায়েত এলাকায় তেলুয়া-ভালিয়া জলা সংস্কার করা হবে’’। পাঁচ বছর কেটেছে। কিন্তু কানা দ্বারেকেশ্বর এবং তেলুয়া-ভালিয়া জলা আগের অবস্থাতেই থেকে গিয়েছে। তেলুয়া-ভালিয়া জলা সংস্কার না হওয়ার ফলে সরাসরি জলা সংলগ্ন ৬টি পঞ্চায়েত এলাকার অন্তত ২০টি মৌজার ৩০ হাজার মানুষ আমন চাষ থেকে বঞ্চিত রয়েছেন বছরের পর বছর। শুধু আমন ধানই নয়, আলু চাষও হয় না বললেই চলে। ফলে কেবল বোরো চাষের উপর ভরসা করে বেঁচে থাকতে হচ্ছে বাতানল, মায়াপুর ১ ও ২, মলয়পুর ২, মাধবপুর ও আরান্ডি ১ পঞ্চায়েতে এলাকার মানুষকে। এই সব এলাকার বাসিন্দাদের কথায়, ‘‘বাম জমানাতেও তেলুয়া-ভালিয়া জলা সংস্কারের কথা শুনেছিলাম। সংস্কার হলে নাকি আমাদের বন্যা দুর্গতি কাটবে। চাষ বাড়বে। কাজ না করেই বামেরা চলে গেল। সবকিছু পরিবর্তনের ডাক দিয়ে তৃণমূল এসে আগের ভোটে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তেলুয়া-ভালিয়া সংস্কার করা হবে। কিন্তু পাঁচ বছরে কোথায় কী? সেই তো একই অবস্থা। কাজ হল কোথায়?’’
কানা দ্বারকেশ্বর সংস্কার না হওয়ায় একটু বৃষ্টি হলেই ২ থেকে ৫ দিন পর্যন্ত আরামবাগ শহর সহ পুর এলাকার ১৯টি ওয়ার্ডেই জল জমে থাকে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রতিশ্রুতি দিলেই যে তা পালন করার দায় থাকে না নেতাদের তার সঙ্গে আগের বাম আমলেই পরিচয় ঘটেছে। কিন্তু পরিবর্তনের ডাক দিয়ে যারা এল, তারাও যে একই পথে হাঁটবে ভাবিনি। কিন্তু গত পাঁচ বছরে সেটাই হল।
প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর কাজ হয়েছে এমন উদাহরণ বলতে, বন্যা নিয়ন্ত্রণে সালেপুর ২ পঞ্চায়েত এলাকায় দ্বারকেশ্বর নদীর শাখা ভোমরা খালের উপর একটি স্লুইস গেট নির্মাণ। তবে ওই এলাকারই ডোঙ্গলে গার্লস স্কুল তৈরি হয়নি এখনও। যদিও গত নির্বাচনে এ নিয়ে প্রতিশ্রুতি ছিল।
গতবার নির্বাচনী প্রচারে দেওয়া প্রতিশ্রুতির পরিণতি নিয়ে বিদায়ী বিধায়ক ও এ বারের প্রার্থী কৃষ্ণচন্দ্রর দাবি, “কানা দ্বারকেশ্বর এবং তেলুয়া-ভালিয়া জলা সংস্কার-সহ আরামবাগে বন্যা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আমরা যে কাজ করেছি, তার প্রমাণ গত বছরেই সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন আরামবাগ মহকুমার জন্য পৃথক একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তার মধ্যেই এগুলি সব রাখা হচ্ছে।”
কিন্তু প্রার্থীর এ হেন ‘সাফাই’ নিয়ে কোনও হেলদোল নেই আরামবাগের মানুষের। তাঁদের বক্তব্য, আরামবাগে যে কোনও ভোটেই বন্যা নিয়ন্ত্রণের প্রতিশ্রুতি থাকে সব রাজনৈতিক দলের। আর প্রতিশ্রুতি মানেই যে ফাঁকা বুলি তাও তাঁরা এত বছরে বুঝে গিয়েছেন।