বীজতলার দরকার নেই, সরাসরি যন্ত্রের সাহায্যে ধানের বীজ বপন

জিরো টিলেজ যন্ত্রের সাহায্যে একসঙ্গে নয়টি বা ছয়টি সারিতে ধানের বীজ বুনে সার দিয়ে ঢেকে দিন একেবারে। খরচ কম, ফলন বেশি।

Advertisement

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৬ ০১:০২
Share:

বীজতলার দরকার নেই।

Advertisement

জমি কাদা করতে হবে না।

নুয়ে-নুয়ে চারা রুইতে হবে না।

Advertisement

জিরো টিলেজ যন্ত্রের সাহায্যে একসঙ্গে নয়টি বা ছয়টি সারিতে ধানের বীজ বুনে সার দিয়ে ঢেকে দিন একেবারে। খরচ কম, ফলন বেশি।

বিনা কর্ষণ পদ্ধতির এই চাষকে জনপ্রিয় করতে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্যের কৃষি দফতর। কয়েক বছর ধরেই রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় পরীক্ষামূলক ভাবে এই পদ্ধতিতে ধান চাষ করা হচ্ছিল। সফল হওয়ায় এবারে জোরটা একটু বেশি। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট মহকুমার বেশ কিছু ব্লকে জুন মাসের শুরু থেকেই এই পদ্ধতিতে ধান বোনার কাজ চলছে। উত্তর ২৪ পরগনায় ৪০০ হেক্টর জমিতে জিরো টিলেজ পদ্ধতিতে প্রতীক্ষা জাতের ধান চাষে লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। ব্লকে কর্মশালা করে অনভিজ্ঞ চাষিদের এই পদ্ধতি শেখাচ্ছে কৃষি দফতর।

সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনার বাগদায় কৃষি দফতরে এই রকমই একটি কর্মশালা হয়। বাগদা, বনগাঁ, গাইঘাটা, হাবরা ১, হাবরা ২, ব্যারাকপুর ১, ব্যারাকপুর ২-সহ জেলার প্রায় সব ব্লক থেকে দেড়শো চাষি এসেছিলেন। উপস্থিত ছিলেন জেলার উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) অরূপ দাস, বাগদা ব্লকের সহ-কৃষি অধিকর্তা বিদ্যুৎ সাহা, গাইঘাটা ব্লকের সহ-কৃষি অধিকর্তা তারিকুল ইসলাম প্রমুখ। চাষিদের জমিতে নিয়ে গিয়ে হাতে-কলমে জিরো টিলেজ পদ্ধতির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। গাইঘাটার চাষি তাপস কুমার চৌধুরী, হাবরার জগদীশ পাল বলেন, ‘‘জমিতে লাঙল দেওয়ার দরকার হবে না। ফলে খরচ কমবে। শুধু আগাছা সরালেই হল। এখন থেকে এই পদ্ধতিতেই চাষ করব।’

জিরো টিলেজ পদ্ধতি কী?

জিরো টিলেজ হল বীজ বোনার একটি যন্ত্র, যা ৩৫-৪৫ এইচপি ট্রাক্টরের সাহায্যে চালানো হয়। যন্ত্রের পিছনে সার ও বীজ রাখার আলাদা দু’টো জায়গা আছে। যন্ত্রের সামনের কাঁটাযুক্ত চাকা ঘোরালে নির্দিষ্ট পরিমাণ সার ও বীজ পাইপের সাহায্যে ফালের পিছনে নির্দিষ্ট গভীরতায় পড়তে থাকবে। প্রয়োজন মতো সারি থেকে সারির দূরত্ব, সার ও বীজের পরিমাণ ও বীজ ফেলার গভীরতার পরিবর্তন করা যায়।

এই পদ্ধতির সুবিধা কী?

কৃষি আধিকারিকদের বক্তব্য, প্রথাগত পদ্ধতিতে আমন ধান চাষে যতটা জল লাগে তার প্রায় ৩০ শতাংশ জমি কাদা করা ও চারা রোপণের পিছনে ব্যয় হয়। কিন্তু জল কই? খামখেয়ালি বর্ষা কবে আসবে, কতটা জল ঝরাবে? মাটির নীচের জলস্তরও ক্রমশ নামছে। তাছাড়া বারবার কাদা করলে জমি খারাপ হয়ে যায়। আর এই সব কাজের জন্য মজুর আজকাল বিশেষ মেলে না। বীজতলা থেকে চারা তুলে রোয়ার সময় টানাটানিতে ক্ষতির সম্ভাবনাও থাকে। সেই তুলনায় বিনা কর্ষণ বা জিরো টিলেজ পদ্ধতিতে—

• সময় কম লাগে। এক বিঘা জমিতে ধান বুনতে এক ঘণ্টা।

• বীজ সারিতে বোনা যায় এবং বীজের পরিমাণ কম লাগে। প্রতি একরে ১২-১৫ কেজি বীজ।

• শিকড়ের সঠিক গভীরতায় সার দেওয়ায় অপচয় কমে।

• সহজে আগাছা দমন করা যায়।

• শিকড়ের মাটিকে ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়ে, গাছ হেলে পড়ে না।

• জলের ব্যবহার কম হয়।

• মাটির স্বাস্থ্য বজায় থাকে, ভূমিক্ষয় রোধ করা যায়।

• প্রথাগত পদ্ধতির তুলনায় ধানের ফলন বেশি হয়। কম খরচে বেশি ফলন হয় বলে লাভ বাড়ে।

বাগদা ব্লকের সহ-কৃষি অধিকর্তা বলেন, ‘‘সাধারণ পদ্ধতির তুলনায় এই পদ্ধতিতে বিঘা প্রতি দেড় হাজার টাকা কম খরচ। এই সাশ্রয়টুকুও চাষিদের কাছে অনেক।’’ এক ধাপ এগিয়ে উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) অরূপ দাস বলেছেন, ‘‘চাষিরা দফতরে যোগাযোগ করলে বিনামূল্যে শোধিত বীজ, সার এবং যন্ত্র দিয়ে সাহায্য করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন