রাজ্যে কোনও অনাহারে মৃত্যু হয়নি। ঝাড়গ্রামের জামবনিতে এক প্রশাসনিক সভায় জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
সরকারি বরাদ্দ মাথাপিছু মাসিক ৮ কিলো চাল এবং ৩ কিলো গম। তাই কেউ ‘ভাত খেতে পায়নি’ বললে তা বিশ্বাস করতে রাজি নন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই কারণে রাজ্যে অনাহার রয়েছে বলেও মুখ্যমন্ত্রী মানেন না।
সোমবার ঝাড়গ্রামের জামবনিতে এক প্রশাসনিক সভায় তাই মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এখানে এক এক জন ৮ কিলো চাল ও ৩ কিলো গম পান। পরিবারে পাঁচ জন থাকলে পঞ্চান্ন কিলো। তাই কেউ যদি বলে বেচারা ভাত খেতে পায়নি, বিশ্বাস করি না।’’
লালগড়ের পূর্ণাপানিতে সম্প্রতি অনাহারে সাত শবরের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পূর্ণাপানির কয়েক কিলোমিটার দূরে দাঁড়িয়ে এই সভায় এ ভাবেই সেই অভিযোগ খারিজ করে দেন মমতা। অনাহারের কথা না মানলেও খাদ্য-সহ তাঁর সরকারের অন্য প্রকল্পে ফাঁকফোকরের কথা স্পষ্ট হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতায়। তিনি বলেন, ‘‘রেশন ডিলারদের বলছি, সরকার দু’টাকা কিলো চাল দেয় বিলি করার জন্য। চাল দেওয়ার নাম করে টাকা নিয়ে তা থেকে পঞ্চাশ গ্রাম কেটে নিলে ডিলারের লাইসেন্সও কেটে নেব।’’
এ দিন বিকালে প্রশাসনিক বৈঠকেও এই বিষয় উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বিডিও-রা, থানার ওসি-রা এলাকায় ঘোরেন? রাস্তায় দাঁড়িয়ে রেশন দোকানে একটু খোঁজ নেবেন। দেখবেন যে মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁদের কাজ হচ্ছে কি না।’’ অনাহার সম্পর্কে জামবনির সভায় তিনি অবশ্য বলেন, ‘‘অনেক চাল-গম পান। শুনেছি, অনেকে তা বিক্রি করে দেন।’’ সেই সূত্রেই মমতা বলেন, ‘‘পেট ভরে ভাত খান। মায়ের দেওয়া মোটা কাপড়...।’’ প্রশাসনিক সভায় অফিসারদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান, ‘‘আপনাদের প্রচারটাও করতে হবে। দেখতে হবে মানুষ যেন ভাতটা খায়। প্রচার করুন, ভাত খান। ওটা বিক্রি করার জন্য দেওয়া হয় না।’’
সরকারি প্রকল্প মানুষের কাছে পৌঁছনোয় ‘বাধা’ হচ্ছে, তা যে তিনি জানেন, সেই ইঙ্গিত করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যাঁর রেশন কার্ড তাঁর কাছে থাকবে। অন্য কারও কাছে নয়। যাঁর নামে অ্যাকাউন্ট তিনিই পেনশনের টাকা পাবেন। সরকারি প্রকল্পটির কার্ড অন্য কারও রাখার অধিকার নেই।’’
মুখ্যমন্ত্রী যে নজরদারি চাইছেন সে কাজে দলের জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকাতেও মমতা সন্তুষ্ট নন। জামবনির সভায় তিনি বলেন, ‘‘মানুষের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করুন। কেউ কাজের জন্য গেলে যদি পারেন, সেই কাজ করুন।’’ জনপ্রতিনিধিদের একাংশ যে তা করেন না, আগেও প্রকাশ্যে সে কথা বলেছেন তিনি। এ দিন আরও এক ধাপ এগিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘এ সবের জন্য সরকার দায়ী নয়। দলও দায়িত্ব নেবে না। কেউ অন্যায় করলে ঈশ্বর শাস্তি দেবেন।’’
এ দিন অবশ্য রাজ্যের উন্নয়ন নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগ নস্যাৎ করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, সবুজসাথী প্রকল্পের উল্লেখ করে মমতা বলেন, ‘‘আর কী পাওয়ার আছে? সারা দেশে তো বটেই পৃথিবীতে এত কাজ কোথাও হয়নি। এ দিন প্রশাসনিক বৈঠকে জঙ্গলমহলের এই কোর এলাকার আরও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।