জামিনদারও মিলছে না ফতুর সারদা কর্তার

কোর্ট জামিন দিলেও সে টাকা দেওয়ার কেউ নেই। একটা সময়ে সিগারেটে টোকা দিয়ে ছাই ফেলে ইনিই বলতেন, ‘‘যেখানে সুদীপ্ত সেনের সিগারেটের ছাই পড়ে, সেই জায়গাটা সুদীপ্ত সেনেরই হয়ে যায়।’’

Advertisement

শুভাশিস ঘটক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৬ ০৩:৫১
Share:

পরিবর্তন। সুদীপ্ত সেন তখন আর এখন। —ফাইল চিত্র।

কোর্ট জামিন দিলেও সে টাকা দেওয়ার কেউ নেই।

Advertisement

একটা সময়ে সিগারেটে টোকা দিয়ে ছাই ফেলে ইনিই বলতেন, ‘‘যেখানে সুদীপ্ত সেনের সিগারেটের ছাই পড়ে, সেই জায়গাটা সুদীপ্ত সেনেরই হয়ে যায়।’’

সেই মানুষটাই এখন আদালতে হাতজোড় করে বলছেন, ‘‘হুজুর আমি ফতুর। সাবান কেনার পয়সাটুকুও নেই। আপনি জামিন দিলেও, আমার জামিনদার হয়ে টাকা দেওয়ার কেউ নেই!’’

Advertisement

প্রথম পক্ষের স্ত্রী অসুস্থ। মেয়ে যোগাযোগ রাখেন না। ছেলে-বৌমাও আর দেখা করতে আসেন না। ছেলেমেয়েকে নিয়ে কলকাতা ছেড়ে চলে গিয়েছেন দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীও। এক সময়ের কোটিপতি সুদীপ্তর বন্ধু-বান্ধবরাও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। আজ তাঁর না-আছে আত্মীয়-বান্ধব, না আছে টাকা। ফলে জামিন পেলেও জামিনদার পাচ্ছেন না তিনি।

গ্রেফতার হওয়া কোনও অভিযুক্ত আদালত থেকে জামিন পেলে তাঁর হয়ে অন্য এক জনকে জামিনদার হতে হয়। ‘বেল-বন্ড’-এ সেই জামিনদার সই করলে তবেই মুক্তি পান অভিযুক্ত। এই বেল-বন্ডে একটি টাকার অঙ্ক লেখা থাকে। বিভিন্ন অপরাধের মাত্রার উপরে নির্ভর করে সেই টাকার অঙ্ক। এ জন্য আদালতকে নগদ টাকা দিতে হয় না ঠিকই, কিন্তু যে টাকার অঙ্ক সেই বেল-বন্ডে লেখা থাকে, তার সমমূল্যের সম্পত্তির কাগজপত্র জামিনদারকে আদালতে জমা দিতে হয়। জামিন পাওয়ার পরে কোনও কারণে অভিযুক্ত যদি আদালতের দেওয়া শর্ত না মানেন, কিংবা ফেরার হয়ে যান, তখন ওই বেল-বন্ডের টাকা আদালতে নগদে জমা দিতে হয়। সেই টাকা তখন সরকারি কোষাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। নগদ দিতে না পারলে জমা থাকা সম্পত্তির কাগজপত্র নিলাম করেও আদালত সেই টাকা তুলতে পারে। প্রয়োজনে জামিনদারের বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে পারে আদালত।

সাধারণত দুই ধরনের জামিনদার হন। এক, অভিযুক্তের আত্মীয়-বন্ধু। দুই, পেশাদার জামিনদার। বেল-বন্ডে যে টাকার অঙ্ক উল্লেখ করা থাকে, তার ২০ থেকে ২৫ শতাংশ টাকা দিতে হয় পেশাদার জামিনদারকে।

সারদা নিয়ে সুদীপ্ত সেনের বিরুদ্ধে ১৪৬টি মামলা করেছিল রাজ্য সরকার। তদন্তে নেমে সিবিআই তার ৭৩টি মামলা একত্র করে ৬টি মামলা দায়ের করে আদালতে। বাকি ৭৩টি মামলা রয়ে যায় রাজ্যের হাতেই।

রাজ্যের হাতে থাকা ৭৩টি মামলার মধ্যে ৬৯টি মামলাতেই আদালত সুদীপ্তকে জামিন দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে দিয়েছে। সুদীপ্তের আইনজীবী বিপ্লব গোস্বামী জানান, তার মধ্যে শুধু দু’টি মামলার ক্ষেত্রে জামিনদারকে ৪ হাজার টাকা দিয়ে মুক্তি পেয়েছেন সুদীপ্ত। বাকি ৬৭টি মামলার জন্য পেশাদার জামিনদার পেতে এখনও ৩০ হাজার টাকার প্রয়োজন। সিবিআইয়ের ৬টি মামলার মধ্যে আদালত যে একটি মামলায় জামিনের নির্দেশ দিয়েছে, তার জন্য প্রয়োজন ১০ হাজার টাকা। বিপ্লববাবুর কথায়, ‘‘জামিনের নির্দেশ দেওয়া হলেও জামিনদার দিতে না পারায় কয়েকটি ক্ষেত্রে বিচারকের ভর্ৎসনাও শুনতে হয়েছে। কিন্তু সুদীপ্তবাবুর তরফে কেউ এগিয়ে আসছেন না।’’ সুদীপ্তর সঙ্গে গ্রেফতার হওয়া সারদার কর্মী দেবযানী মুখোপাধ্যায়ও একই সংখ্যক মামলায় জামিন পেয়েছেন। জামিনদার পেতে তাঁর অবশ্য কোনও অসুবিধা হয়নি। দেবযানীর আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতা বলেন, ‘‘দেবযানীর পরিজনেরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। মেয়ের জামিনের জন্য তাঁরা সুপ্রিম কোর্টে পর্যন্ত গিয়েছেন।’’

আলিপুর সংশোধনাগারের এক কর্মীর কথায়, দেবযানী জেলে দিব্যি আছেন। মহিলা বন্দিদের নিয়ে বিউটিশিয়ান কোর্স করাচ্ছেন। অন্য দিকে কঙ্কালসার চেহারা নিয়ে জেলে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়ান সুদীপ্ত। সারা দিন শুধু বিড়ি খান অন্য বন্দিদের কাছ থেকে চেয়ে। কেউ দেখা করতে গেলে বলেন— ‘‘আমি এই জেলের অন্দরেই পচে মরতে চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন