দু’পারে বাংলা, কাঁটাতার কই

লোকজন ডেকে জিজ্ঞেস করার বিশেষ প্রয়োজন নেই। চোখের দেখাতেই স্পষ্ট হয়ে যায়, ওই শিশুরা ভারতীয়। আর বালি-পাথর তুলছেন বাংলাদেশিরা। 

Advertisement

সজল দে

চ্যাংরাবান্ধা শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৫:৪৭
Share:

ধরলা দেখে তো বোঝারই উপায় নেই, সীমান্তের ‘দাগ’ ঠিক কোথায়।

নদীর নাম ধরলা। তার এক প্রান্তে শিশু স্নান করছে। অন্য প্রান্তে চলছে বালি পাথর তোলার কাজ।

Advertisement

লোকজন ডেকে জিজ্ঞেস করার বিশেষ প্রয়োজন নেই। চোখের দেখাতেই স্পষ্ট হয়ে যায়, ওই শিশুরা ভারতীয়। আর বালি-পাথর তুলছেন বাংলাদেশিরা।

ধরলা দেখে তো বোঝারই উপায় নেই, সীমান্তের ‘দাগ’ ঠিক কোথায়। একটা বিভাজন আছে ঠিকই। তা এ পাড় আর ও পাড়ের হিসেবে ধরলে গোটা ছবি স্পষ্ট হয়ে যায়।

Advertisement

নদী থেকে ৫০ মিটার দূরে দাঁড়িয়ে আছেন সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর এক জওয়ান। যদিও কোনও বাংলাদেশের দিকে কোনও রক্ষীকে চোখে পডল না। দু’দিন আগে কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গিহানার পরে সীমান্তে কড়া নজরদারির কথা বলা হচ্ছে। তবে চ্যাংরাবান্ধার খোলা সীমান্তে শনিবারও তেমন কোনও বাড়তি নজরদারি চোখে পড়েনি। যদিও তা মানতে চায়নি বিএসএফ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ধরলা নদীর কারণে চ্যাংরাবান্ধা বিএসএফ ক্যাম্প থেকে পানিশালা বিএসএফ ক্যাম্প পর্যন্ত বাংলাদেশে সীমান্তে তিন কিলোমিটার এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নেই। আর এই ফাঁককে কাজে লাগিয়ে এই এলাকা গরুপাচারের করিডোর হয়ে উঠেছে বলে তাদের অভিযোগ।

সেই গরুপাচারে বাধা দেওয়ার কারণে বছর দুয়েক আগে চ্যাংরাবান্ধা হাড়িপাড়া এলাকায় দু’জনকে ব্যাপক মারধর করা হয় বলেও এলাকার একাংশের দাবি। তাঁদের আরও অভিযোগ, মারধর করে বাংলাদেশি পাচারকারীরাই। তাই এই নিয়ে এখন বিশেষ মুখ খুলতে চান না স্থানীয় মানুষ।

এখন সন্ধ্যা নামলেই সিঁটিয়ে থাকেন চ্যাংরাবান্ধা সীমান্তের গ্রামগুলিতে বসবাসকারীরা। মেখলিগঞ্জ ব্লকের ৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যে ৬টিই বাংলাদেশ সীমান্তে। যার মধ্যে চ্যাংরাবান্ধা ছাড়াও নিজতরফ, বাগডোকরা-ফুলকাডাবরি ও কুচলিবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের কিছু সীমান্ত এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নেই। স্থানীয়দের অভিযোগ, এর ফলে এই এলাকায় পাচার চলছেই।

একই সঙ্গে তাঁদের অভিযোগ, সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকছে অপরাধীরা। প্রশ্ন উঠছে গরু পাচারের পাশাপাশি বিস্ফোরক বা অস্ত্র পাচার হচ্ছে না তো এই এলাকা দিয়ে ?

গোয়েন্দা সূত্রের বক্তব্য, এই এলাকায় পাচার অনেক দিনের সমস্যা। এখানে বাংলাদেশিদের সাহায্য করার জন্য এ পাড়েও লোক রয়েছে বলে তাদের দাবি। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নাশকতার ছক সাজানো কঠিন ব্যাপার নয়।

স্থানীয়রাও এই বিষয়ে একমত। তাঁরা খোলা সীমান্তে বাড়তি নজরদারির দাবি তুলছেন। অন্য দিকে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর আধিকারিকরা জানান, নজরদারি যথেষ্টই কড়া। পাশাপাশি খোলা সীমান্তগুলিতে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে এবং পাচার বন্ধে সক্রিয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী।

চ্যাংরাবান্ধা চেক পোস্ট ও জিরো পয়েন্টে নিয়মমাফিক নিরাপত্তা রক্ষী অবশ্য রয়েছে। এই চেক পোস্ট দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৬০০ মানুষ মধ্যে যাতায়াত করেন। এখানে বাণিজ্যিক লেনদেনও হয়।

এ দিন এই সীমান্ত দিয়ে ভারতে আসেন বাংলাদেশের নীলফামারি জেলার ডোমার পুরসভার কাউন্সিলর সেলিম রেজা ও তাঁর ভাই আওয়ামি লিগের মইনুল হক। সেলিম সাহেব বলেন, ‘‘কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ভারতের পাশেই রয়েছে বাংলাদেশের মানুষ।’’

পুলওমার ঘটনার নিন্দা করেন হলদিবাড়ির হুজুর সাহেবের নাতি বাদশা হুজুর। এ দিন তিনি হুজুর সাহেবের মেলায় যোগ দিতে রংপুর থেকে চ্যাংরাবান্ধা সীমান্ত দিয়ে ভারতে আসেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন