শুধু উচ্চশিক্ষা নয়, মাথাহীন স্কুলশিক্ষাও।
অধ্যক্ষ বা উপাচার্যের পাশাপাশি রাজ্যের প্রায় আড়াই হাজার স্কুলে খালি রয়েছে প্রধান শিক্ষকের পদও। দীর্ঘদিন নিয়োগ না হওয়াতেই এত শূন্যপদ বলে মনে করছে শিক্ষক মহল।
স্কুলশিক্ষা দফতরের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ২০১২ সালের পরে প্রধান শিক্ষক পদে কোনও নিয়োগই হয়নি। এই পদ খালি হলেই সংশ্লিষ্ট স্কুলকে তা জানাতে হয় জেলা স্কুলপরিদর্শক অফিসে। সেই মতো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)। গত চার বছরে সেই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়নি।
কেন নিয়োগ পদ্ধতি এত দিন আটকে রেখেছে এসএসসি? স্কুল শিক্ষা দফতরের খবর, প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পদ্ধতিতে কিছু পরিবর্তন হচ্ছে। প্রধান শিক্ষকদের অভিজ্ঞতার সময়সীমা শিথিল করার পাশাপাশি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের জন্য বিশেষ কোনও পদ তৈরি করা যায় কি না এবং তাঁদের কাজের গণ্ডি নির্দিষ্ট করে দেওয়া যায় কি না তা নিয়েও চিন্তাভাবনা চলছে। এখন ১০ বছর পড়ানোর অভিজ্ঞতা থাকলে প্রধান শিক্ষক হওয়া যায়। সেই সময়সীমা কমানোর কথা ভাবা হচ্ছে বলে স্কুল শিক্ষা দফতরের সূত্রটি জানিয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘প্রধান শিক্ষক নিয়ে আগেও উদ্যোগ নিয়েছি। এ নিয়ে ক্রমাগত আলোচনা চলছে।’’ পদ্ধতি পরিবর্তনে চার বছর কেন লাগল, তার ব্যাখ্যা অবশ্য তাঁর দফতর দেয়নি।
মাথাহীন রাজ্যের ২৫০০ স্কুলে প্রশাসনিক কাজকর্ম চলছে কী ভাবে? আপাতত স্কুলের একজন শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক (টিচার ইনচার্জ) পদে বসিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে নিজের ক্লাস নেওয়ায় অসুবিধায় পড়ছেন ভারপ্রাপ্তরা। স্কুলের মাথা না থাকায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া এবং তা বাস্তবায়িত করাও সম্ভব হচ্ছে না বলে মনে করছেন শিক্ষকদের একাংশ। রাজ্য প্রধান শিক্ষক সমিতির সম্পাদক নীহারেন্দু চৌধুরী জানান, বর্তমানে সরকার নানা প্রকল্প নেওয়ায় বিভিন্ন সময়েই স্কুল থেকে নানা তথ্য সরকারের কাছে নথিভুক্ত করতে হয়। প্রধান শিক্ষক না থাকায় তাতেও সমস্যা হচ্ছে।
এ রাজ্যে নিয়োগ বন্ধ অশিক্ষক কর্মীদেরও। ইতিমধ্যেই ১০ হাজার পদ শূন্য বলে স্কুল শিক্ষা দফতর জানিয়েছে। কেন এই অবস্থা? ২০১৫ সালে শিক্ষাকর্মী নিয়োগ বিধির পরিবর্তন করেছিল রাজ্য। পরিবর্তিত বিধিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৭ থেকে বাড়িয়ে ৪০ করার পাশাপাশি চতুর্থ শ্রেণির কর্মী পদে আরও তিনটি পদ যোগ করা হয়।
সুপারিন্টেনডেন্টের একটি পদ বাড়ানোও হয়। এই নবনিযুক্ত পদগুলিতেও কোনও নিয়োগ হয়নি। বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির রাজ্য সহ সম্পাদক স্বপন মণ্ডলের প্রশ্ন, ‘‘শিক্ষক নিয়োগে জট থাকলেও প্রধান শিক্ষক বা শিক্ষাকর্মী নিয়োগে তা নেই। সরকার তাতেও টালবাহানা কেন করছে?’’
তবে শিক্ষাকর্মী নিয়োগে জট কাটতে চলেছে বলেই জানিয়েছে শিক্ষা দফতরের সূত্রটি। পুরনো নিয়মে, তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের ক্ষেত্রে দু’টি ধাপে লিখিত পরীক্ষা হতো। তার পর ইন্টারভিউ। তা সংশোধন করে এখন একটিই লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ‘‘নিয়ম পরিবর্তনের জেরেই আটকে ছিল নিয়োগ প্রক্রিয়া। খুব তাড়াতাড়িই প্রকাশিত হতে চলেছে বিজ্ঞপ্তি,’’ বললেন স্কুল শিক্ষা দফতরের এক কর্তা। শিক্ষামন্ত্রীও জানান, শিক্ষাকর্মী নিয়োগের জট কেটেছে।