শীঘ্রই নবান্নে তোলা-রিপোর্ট পাঠাচ্ছেন উত্তরের ব্যবসায়ীরা

সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত এক বছরে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি জেলার অন্তত দশটি জায়গায় কারখানা করতে গিয়ে সিন্ডিকেট ও তোলাবাজদের বাধার মুখে পড়েছেন লগ্নিকারীরা।

Advertisement

শুভঙ্কর চক্রবর্তী

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ ০৪:৩১
Share:

প্রতীকী ছবি।

সিন্ডিকেট ও তোলাবাজদের দৌরাত্ম্য নিয়ে উত্তরবঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে শিল্পমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন নর্থ বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের কর্তারা। এ বার তাঁরা সমস্ত অভিযোগের বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরি করে মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠাচ্ছেন। রিপোর্টের প্রতিলিপি একই সঙ্গে পাঠনো হবে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী, শিল্পসচিব ও দফতরের শীর্ষ আধিকারিকদের কাছেও।

Advertisement

সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত এক বছরে দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি জেলার অন্তত দশটি জায়গায় কারখানা করতে গিয়ে সিন্ডিকেট ও তোলাবাজদের বাধার মুখে পড়েছেন লগ্নিকারীরা। কোন শিল্পের ক্ষেত্রে কী ধরনের বাধা তৈরি হয়েছে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলির ভূমিকাই বা কী, এই যাবতীয় বিষয় রিপোর্টে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হবে বলেই জানিয়েছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সুরজিৎ পাল। তিনি বলেন, ‘‘মূল সমস্যায় কেউ হাত দিচ্ছে না। তাই মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারির পরেও সিন্ডিকেট, তোলাবাজি বন্ধ হয়নি। আসল সমস্যাগুলি সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরেই মুখ্যমন্ত্রীকে রিপোর্ট দেব।’’

সিন্ডিকেট, তোলাবাজির বেশি অভিযোগ এসেছে রাজগঞ্জ ব্লক থেকে। উন্নত প্রযুক্তিতে ইট এবং পেভার্স ব্লক তৈরির জন্য রাজগঞ্জের আখরিগছ এলাকায় প্রায় ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে কারখানা করছেন শিলিগুড়ির এক ব্যবসায়ী। কাজ শুরু হতেই নির্মাণ সামগ্রী ও শ্রমিক নেওয়ার জন্য সিন্ডিকেটের কারবারিরা হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। ওই ব্লকের বলরাম এলাকায় নির্মীয়মান একটি রাইসমিল মালিককেও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। ওই মিলের এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রায় ২০ কোটি টাকা লগ্নি করেছি। এখন মস্তানরা এসে শাসাচ্ছে।’’

Advertisement

রাজগঞ্জ ব্লকের জটিয়াখালিতে প্লাস্টিক ব্যারেল ও ওয়াটার ট্যাঙ্কের নির্মীয়মান কারখানা কর্তৃপক্ষকেও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। আরও অভিযোগ, আমবাড়ির একটি ফোম তৈরির কারখানা এবং ফুলবাড়ি ক্যানেল রোডের উন্নত প্রযুক্তির ইট তৈরির কারখানায় দীর্ঘদিন ধরেই শ্রমিক সমস্যা তৈরি করে রেখেছিল সিন্ডিকেটের কারবারিরা। সম্প্রতি প্রশাসনের সক্রিয়তায় তাদের দেখা যাচ্ছে না বলেই মালিকপক্ষ জানিয়েছে। তবে তাঁদের আশঙ্কা, নজরদারি শিথিল হলেই সমস্যা তৈরি করতে পারে সিন্ডিকেট।

ফাঁসিদেওয়া ও মাটিগাড়াতেও একাধিক জায়গায় কারখানা তৈরিতে সিন্ডিকেটের দাদাগিরির অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি সামনে এসেছে ফুলবাড়িতে থাকা ফুড পার্কের ঘটনা। বণিক সংগঠনের কর্তারা জানান, মাটিগাড়ার খাপরাইল মোড় এলাকায় বিহারের এক লগ্নিকারী ফ্লাওয়ার মিল তৈরির জন্য ১৫ কোটি টাকা লগ্নি করেছেন। অভিযোগ, কারখানার কাজ শুরুর আগেই লগ্নিকারীকে তাদের দাবি-দাওয়ার কথা জানিয়ে দেয় সিন্ডিকেট। তাদের দাবি না মানা পর্যন্ত নির্মাণ কাজ করা যাবে না বলে হুমকিও দেওয়া হয়েছে। সুরজিৎবাবু বলেন, ‘‘বিহারের ওই লগ্নিকারীকে নিয়ে প্রয়োজনে নবান্নে যাব।’’

বণিক সংগঠন সূত্রে জানা গিয়েছে, সংগঠনের পক্ষ থেকে পাঁচ জনের একটি দল গঠন করা হয়েছে। তাঁরা প্রতিটি কারখানার জন্য আলাদা করে ফাইল ও রিপোর্ট তৈরি করছেন। সেই রিপোর্টের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কারখানার সমস্ত নথিপত্র জুড়ে দেওয়া হবে। সুরজিৎ বলেন, ‘‘এক মাসের মধ্যেই আমরা রিপোর্ট তৈরি করে ফেলব। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা আছে। রিপোর্ট পেলে উনি দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেই আমরা আশাবাদী।’’ রাজ্যের শিল্প সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কারখানা তৈরির ক্ষেত্রে কেউ বাধা দিলে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সব ক্ষেত্রেই অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন