—প্রতীকী চিত্র।
একটা জায়গা ছিল, যেখানে যত দূর চোখ যেত ন্যাড়া মাঠ। আরেকটা জায়গায় ধূ ধূ করত তোর্সার চর। ইতিউতি কলাবাগান। সন্ধ্যা নামলেই শেয়ালে হুক্কাহুয়া, কুকুরের চিৎকার। টিমটিমে বাল্বের আলোয় রাস্তাঘাটে চলাফেরা করা দায় ছিল। প্রতি পদে বিপদের আশঙ্কা ছিল। কিন্তু, সরকারি প্রকল্পে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে দৌলতে ওই দু’টি এলাকার চেহারা যেন আমূল বদলে গিয়েছে। জনজীবনের মানও পাল্টাচ্ছে দ্রুতগতিতে। এক লাফে কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে জমির দাম। দোকানপাট, হোম স্টে, পেয়িং গেস্ট রাখার জন্য বোর্ডের ছড়াছড়ি। জেরক্সের দোকান, চা, কফির দোকানও বাড়ছে। গত ৫ বছরে দু’টি যমজ গণ্ডগ্রামের এ হেন বদলে যাওয়া দেখে অনেককেই বলতে শোনা যাচ্ছে, গুড়িয়াহাটি ১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের পুরসভা হওয়াটা স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। সৌজন্য, একটি বিশ্ববিদ্যালয় ও একটি করে ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেডিক্যাল কলেজ।
কোচবিহার এক নম্বর ব্লকের গুড়িয়াহটি ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতে সদ্য চালু হওয়া ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের গেটের পাশেই ৬ কাঠা জমির উপরে বাড়ি সাহিমুর মিয়াঁর। বাড়িতেই একটা ছোট্ট চা, জলখাবারের দোকান রয়েছে। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ শুরুর পরে সেখানে ভাত-রুটির বন্দোবস্তও হচ্ছে। দেখাদেখি আরও একটি দোকান হয়েছে উল্টো দিকে। অদূরে গজিয়ে উঠেছে চা-কফি-ঘুগনির দোকান। সাহিমুর বলেন, ‘‘ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হওয়ার আগে কেমন অন্ধকার ছিল আমাদের গ্রামটা। এখন আলো ঝলমল করে। জমির দামও বহু বেড়েছে।’’ সাহিমুরের আক্ষেপও রয়েছে। তা হল, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ক্যান্টিন চালুর পরে তাঁর দোকানে বিক্রি কমেছে। সে জন্য ব্যাঙ্ক ঋণ নিয়ে দোকানটা বড় করার স্বপ্ন দেখছেন সাহিমুর।
কলেজের নির্মাণের কাজ এখনও সম্পূর্ণ হতে অন্তত দু’বছর লাগবে। তত দিন এলাকার দিনমজুর, মিস্ত্রি, তাঁদের সহকারীদের কাজের অভাব হবে না। শুধু তাই নয়, ওই কর্মীদের চা জলখাবারের জোগানের জন্য এলাকায় ছোটখাট দোকানের সংখ্যাও বাড়ছে। ওই এলাকার বাসিন্দারা অবশ্য জানান, গ্রামের রাস্তাগুলি সব আরও চওড়া করাতে হবে। কারণ, আগে কালেভদ্রে গাড়ি ঢুকত। এখন রোজই বড় মাপের গাড়ি যাতায়াত করছে। ফলে, রাস্তা প্রায়ই ভেঙে যাচ্ছে। কোচবিহার ১ নম্বর ব্লকের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ খোকন মিয়াঁ বলেন, “দেখতে দেখতে ওই জায়গা পাল্টেছে। রাস্তাও চওড়া হবে। সেই মতো প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে।’’
(চলবে)