বাবার বকুনিতে পালিয়ে বাড়ি ফিরতে ১৭ বছর

দুপুর আড়াইটে। জুব্বের আলি তাঁর গরু মোষের পরিচর্যা করছিলেন। তাঁর স্ত্রী জারেখা বিবি রান্না প্রায় সেরে ফেলেছেন। আচমকা তাঁদের উঠোনে এসে দাঁড়ালেন এক যুবক। জারেখা বিবির দিকে তাকিয়ে বললেন, “মা আমি ওয়াহেদ।” এক পলক দেখেই পালিয়ে যাওয়া ছেলেকে চিনতে অসুবিধে হয়নি বৃদ্ধ দম্পতির।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চাঁচল শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৪ ০২:৪৪
Share:

মায়ের সঙ্গে ওয়াহেদ। ছবি: বাপি মজুমদার।

দুপুর আড়াইটে। জুব্বের আলি তাঁর গরু মোষের পরিচর্যা করছিলেন। তাঁর স্ত্রী জারেখা বিবি রান্না প্রায় সেরে ফেলেছেন। আচমকা তাঁদের উঠোনে এসে দাঁড়ালেন এক যুবক। জারেখা বিবির দিকে তাকিয়ে বললেন, “মা আমি ওয়াহেদ।” এক পলক দেখেই পালিয়ে যাওয়া ছেলেকে চিনতে অসুবিধে হয়নি বৃদ্ধ দম্পতির।

Advertisement

মালদহের রতুয়ায় চাঁদমনি এলাকার হলদিবাড়ি গ্রামের জুব্বের আলির সন্তান ওয়াহেদ্দুজামান ১৭ বছর আগে বাড়ি ছেড়েছিলেন। পেশায় দুধ ব্যবসায়ী জুব্বেরের ছয় ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে ওয়াহেদই বড়। বাজারে দুধ বিক্রি করতে যেতে না চাওয়ায় তাঁকে বকাবকি করেছিলেন জুব্বের। অভিমানে সে রাতেই বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিল ওয়াহেদ। তখন ওয়াহেদের বয়স ছিল ১৬। তারপর কয়েকমাস ধরে প্রায় প্রতিদিন ছেলের খোঁজ করলেও তার আর সন্ধান মেলেনি। এক সময় বড় ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আশাও ছেড়ে দিয়েছিলেন জুব্বের-জারেখা।

বছর চারেক আগে পাশের দেবীপুর গ্রামে এক মানসিক ভারসাম্যহীন যুবককে খুঁজে পাওয়া গিয়েছে শুনে জুব্বেররা গিয়ে হাজির হন। ওই যুবকের সঙ্গে তাঁদের হারিয়ে যাওয়া ছেলের মুখের সাদৃশ্য রয়েছে দেখে, তাকেই ছেলে ভেবে বাড়িতে নিয়ে আসেন জুব্বের। তাঁকে ওয়াহেদ বলে ডাকতেনও তাঁরা। এ দিন বুঝতে পারলেন, সেই যুবক তাঁদের হারিয়ে যাওয়া ছেলে নন। জারেখা বিবির অবশ্য বক্তব্য, “আজ আমার খুব খুশির দিন। এক ছেলেকে হারিয়েছিলাম। দুই ছেলেকে ফিরে পেয়েছি। দুই ওয়াহেদকে নিয়েই থাকব।” পাড়া প্রতিবেশীরা এই খবর শুনে জুব্বেরের বাড়ি চলে আসেন। ফিরে আসা যুবক সত্যিই ‘ওয়াহেদ’ কি না, তা যাচাই করা শুরু হয়। জুব্বের বলেন, “৪ বছর আগে দেবীপুরে ওই যুবককে দেখে নিজের হারানো ছেলে বলেই মনে হয়েছিল। ভেবেছিলাম ১৩ বছরে মুখের আদল হয়ত কিছুটা পাল্টে গিয়েছে। তখন থেকে ও আমাদের কাছেই রয়েছে। ওয়াহেদকে ফিরে পেয়ে আরও ভাল লাগছে।”

Advertisement

ওয়াহেদ্দুজামান জানান, বাড়ি থেকে পালিয়ে ট্রেনে চেপে প্রথমে কাশ্মীরে গিয়ে একটি হোটেলে কাজ নেন। কয়েক মাস পরে মুম্বই গিয়ে একটি ক্যাটারিং সংস্থায় কাজ শুরু করেন। বছর চারেক আগে বিয়েও করেছেন। ৩ বছরের এক সন্তানও রয়েছে তাঁর। ওয়াহেদ জানান, সবসময় তাঁর বাড়ির কথা মনে পড়ত। কিন্তু বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন বলে ফিরতে ভয় করত। তিনি বলেন, “ভাবতাম বাবা যদি ফের তাড়িয়ে দেন। আর থাকতে না পেরেই বাড়ি ফিরেছি।” ওয়াহেদ জানান, নিজে এসেছেন। এ বার স্ত্রী-ছেলেকে নিয়ে আসবেন। তাঁর এক ভাই নাসির আলি বলেন, “দাদা পুরোপুরি এখানে চলে এলে ভাল হয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন