কারচুপিতে ধৃত। — নিজস্ব চিত্র
সরকারি চাকরির বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নের উত্তর এসএমএস বা সোশ্যাল নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার এক চক্রের হদিস মিলল মালদহে। শুধু তাই নয়, ওই চক্রের একাধিক সদস্য অন্য পরীক্ষার্থীর হয়েও পরীক্ষা দিত বলে অভিযোগ। গোপন সুত্রে খবর পেয়ে শনিবার রাতে কালিয়াচক ২ ব্লকের চামাগ্রামে হানা দিয়ে চার ভাইকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের মধ্যে এক ভাই আবার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। অভিযোগ, ধৃতরা মোটা টাকার বিনিময়ে এসব কারবার চালাতো।
ধৃত চারজনকে রবিবার মালদহের ভারপ্রাপ্ত সিজেএম শর্মিষ্ঠা ঘোষের এজলাসে তোলা হয়েছিল। সরকারি আইনজীবী উৎপল মণ্ডল বলেন, ‘‘পুলিশের সুয়োমোটো মামলার ভিত্তিতে চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির ৪২০, ৪৬৫, ৪৬৮ ও ১২০ (বি) ধারায় মামলা হয়েছে। ধৃতদের ১০ দিনের হেফাজত চেয়েছিল পুলিশ। বিচারক ৬ দিন মঞ্জুর করেছেন।’’
রবিবার, মালদহ জেলার গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির ১১৮টি সহায়ক পদের নিয়োগ পরীক্ষা ছিল। অভিযোগ, চক্রটি এই পরীক্ষাতেও টাকার বিনিময়ে পরীক্ষার্থীদের কাছে প্রশ্নের উত্তর পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু তার আগেই শনিবার রাতে তাঁদের গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ বলেন, ‘‘ধৃতদের জেরা করে তারা কীভাবে কারবার চালাত তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।’’ অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী দেবাঞ্জন দত্ত অবশ্য দাবি করেন, তাঁর মক্কেলদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার মালদহ জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েতের সহায়ক পদের পরীক্ষায় একটি চক্র পরীক্ষার্থীদের কাছে প্রশ্নের উত্তর এসএমএস বা হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে সরবরাহ করতে পারে এমন খবর আসে। সেই সূত্রে কালিয়াচক থানার মোথাবাড়ি ফাঁড়ির পুলিশ শনিবার রাতে হামিদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের চামাটোলার ওই বাড়িতে হানা দেয়। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের নাম মাসুদ রানা বিশ্বাস, একরাম হক, সেরাজুল ইসলাম ও উজির আলি। মাসুদ নুরপুর ভগতটোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। ধৃতদের বাড়ি থেকে সরকারি নিয়োগ পরীক্ষা সংক্রান্ত নানা নথি উদ্ধার করে পুলিশ। এরমধ্যেই মিলেছে ২০১২ সালের টেট পরীক্ষার বেশ কয়েকজনের আসল অ্যাডমিট কার্ড ও কিছু অ্যাডমিট কার্ডের জেরক্স। পুলিশের দাবি, ধৃতদের আরও তিন ভাইও একই কারবারে যুক্ত। মোট সাত ভাইয়ের বিরুদ্ধেই পুলিশ সুয়োমোটো মামলা রুজু করেছে। বাকি ভাইরা পলাতক।
এদিকে, এ দিন মালদহ জেলার ৬৫টি পরীক্ষা কেন্দ্রে ১১৮টি সহায়ক পদের জন্য লিখিত পরীক্ষা ছিল। বেলা ১১টা থেকে ১টা ও বিকেল আড়াইটে থেকে সাড়ে চারটে দু’টি অর্দ্ধে পরীক্ষা হয়। মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৬৭ হাজার। জেলা পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন আধিকারিক সুকান্ত সাহা বলেন, ‘‘পরীক্ষা শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে। নিষেধ থাকা সত্ত্বেও পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে ৩৮টি মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে এবং ওই ৩৮ জনের প্রার্থীপদও বাতিল করা হয়েছে। পরীক্ষায় নকল রুখতে প্রতিটি কেন্দ্রেই ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ছিল ভিডিওগ্রাফির ব্যবস্থা।