ভয়ে কথা নেই ছোট্ট অসিতের

গভীর রাতে অসিতকে ঘুম থেকে তুলে যখন নীচে নামিয়ে আনেন পড়শি কাকুরা, ততক্ষণে তার মা এবং দিদি মারা গিয়েছে।

Advertisement

কৌশিক চৌধুরী

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৭ ০১:৪৩
Share:

চিকিৎসাধীন: নার্সিংহোমে গৃহকর্তা অভিনন্দন সাহা। নিজস্ব চিত্র

সাত বছরের ছোট্ট অসিত। বাড়ির উল্টো দিকের শিশু পাঠ উদ্যানের প্রথম শ্রেণির ছাত্র। মায়ের হাত ধরে রাস্তা পার হয়ে প্রতিদিন স্কুলে ঢুকে পড়ত। মা রীতাদেবী দোতলার বারান্দায় এসে মাঝে মাঝে দেখে যেতেন। বাড়ির নিচতলায় বাবার দোকান ও গুদাম। সেখানে দিনভর ব্যস্ত তিনি। এরই ফাঁকে মাঝেমধ্যে দিদি পায়েলের হাত ধরে নীচে এসে খেলা করত অসিত। বুধবার রাতে দিদির সঙ্গেই শুয়েছিল সে।

Advertisement

গভীর রাতে অসিতকে ঘুম থেকে তুলে যখন নীচে নামিয়ে আনেন পড়শি কাকুরা, ততক্ষণে তার মা এবং দিদি মারা গিয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বারবার মা, দিদির খোঁজও করে অসিত। বাবা কোথায়, তা-ও জানতে চায়। প্রতিবেশীরা জানান, সকলে একটু ব্যস্ত। তাই এখানেই এখন থাকতে হবে তাকে। পরে বাড়ি ফেরার জেদ ধরায় টিভিতে কার্টুন দিয়ে বসিয়ে দেওয়া হয় ছোট্ট ছেলেটিকে। দুপুরে মাসি ও মামার বাড়ির লোকজন আসা অবধি সে টিভিতেই মগ্ন ছিল। তবে বাড়িতে যে কিছু একটা হয়ে গিয়েছে, তা সম্ভবত দুপুরের বুঝতে পারে অসিত। বিকালের পর থেকে সে গুম মেরে যায়।

Advertisement

স্থানীয় বাসিন্দা সোনা সাহা বলেন, ‘‘অভিনন্দনের সঙ্গে অসিতকেও যখন নীচে নামানো হয়, জেগে ভয় পেয়ে গিয়েছিল ও। পাশেই একটা বাড়িতে তখন রাখা হয় তাকে। অভিনন্দনকে হাসপাতালে পাঠাই আমরা।’’

এ দিন ভোর থেকেই গোটা এলাকায় শোকের ছায়া। দলে দলে মহিলা, পুরুষেরা বাড়িটির সামনে ভিড় করতে থাকেন। ব্যবসায়ীর কর্মচারী, দাদা এবং রাজনৈতিক নেতারাও জড়ো হন। এলাকাটি রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবের বিধানসভা আসনের মধ্যে। তিনি সকালেই এলাকায় যান। পরে বলেন, ‘‘পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলছি। দোষী যেই হোক, পুলিশকে ধরে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।’’

অভিনন্দনদের প্রতিবেশী পঙ্কজ বিশ্বাস বলেন, ‘‘ছোট পরিবার। ভালই তো ছিল। রাতারাতি কীই যে হয়ে গেল! খুনি কে, তা গোটা এলাকা জানতে চায়। বাড়ির সামনে সিসিটিভি রয়েছে। তা ভাল করে দেখা দরকার।’’

পাশের বাড়িতে থাকেন সুমিত্রা সিংহ, নামেশ্বরী সিংহ’রা। তাঁরা জানান, ‘‘বৃষ্টি হচ্ছিল। সবাই ঘুমিয়ে ছিলাম। প্রথমে মেয়েটার আওয়াজ, পরে অভিনন্দনের চিৎকার শুনি। বাইরে আসতেই দেখি, ব্যালকনিতে পড়ে আছেন উনি। ও বাড়িতে প্রথমে যারা ঢোকে, সবাই ভেবেছিল অভিনন্দনও মরে গিয়েছেন। পরে দেখা যায়, তিনি বেঁচে। ছেলেটাও বেঁচে আছে।’’

সকাল থেকে একটি ব্যাঙ্ক ছাড়া পাঁচকেলগুড়ি, ভালবাসা মোড়ের সব দোকানপাট বন্ধ ছিল। অভিনন্দনবাবুর দোকানের তিন কর্মীর মধ্যে বিহারের বাসিন্দা এক জন ছুটিতে। বাকিদের এক জন চন্দন সাহা বলেন, ‘‘পরিবারে তেমন কোনও গোলমাল খেয়াল করিনি। রাত অবধি সব স্বাভাবিক ছিল। কী যে হল!’’

অভিনন্দনের দাদা আনন্দ সাহারও বাড়ি এই এলাকাতেই। আনন্দবাবু বলেন, ‘‘আমরা চাই, দ্রুত খুনের কিনারা হোক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন