নির্বিঘ্নে পরীক্ষা মালদহের গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষাও হল এ দিন। বাংলা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস ও দর্শনের পরীক্ষা হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা সকলেই এসেছিলেন। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।
কোচবিহার
দুটো বাসে হামলা। ঢিলের ঘায়ে কাচ ভাঙল এনবিএসটিসি-র বাসের। তখন ভোর সাড়ে পাঁচটা। শিলিগুড়িগামী সেই বাসে ভাঙচুর চালানোর পরে চম্পট দিয়েছে বন্ধ সমর্থকেরা। দু’ঘণ্টা বাদে খাগরাবাড়িতে বন্ধ সমর্থকদের আক্রমণে ঘায়েল হল আলিপুরদুয়ারগামী এনবিএসটিসি-র আরও একটি বাস। কোনও ক্ষেত্রেই যে হামলাকারীদের ধরা যায়নি, সেটা মেনে নিলেন সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুবল রায়। সকাল দশটাতেই সাগরদিঘির পাড়ে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে হাজির হয়ে যান এসইউসিআইয়ের কর্মীরা। একটু পরে, তাঁদের সামলাতে পুলিশও। কোচবিহারে ভবানীগঞ্জ বাজারে বেশির ভাগ দোকান বন্ধ ছিল। তবে খোলা ছিল স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়। বন্ধের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াল চকচকা শিল্পতালুকও। আর পাঁচটা দিনের মতো হাজার হাজার শ্রমিক সেখানে কাজে যোগ দিয়েছে। সকলেরই এক কথা, ‘‘এক দিন কাজ না হলে অনেকটাই ক্ষতি। তাই আমরা বন্ধের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছি।’’
মালদহ
ইংরেজবাজারের কার্নি মোড়ে একটি ডাম্পারে বন্ধ সমর্থকেরা ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। কোতুয়ালি থেকে পাথর নিয়ে কালিয়াচক যাচ্ছিল ডাম্পারটি। বন্ধ সমর্থকেরা পথ আটকে গাড়ির কাচ ভেঙে দেয়। তবে পুলিশ ধরার আগেই চম্পট দেয় তারা। ইংরেজবাজারে নিমাইসরা এলাকায় এক টোটো চালককে মারধরের অভিযোগও উঠেছে বন্ধ সমর্থকদের বিরুদ্ধে। গাজোলের আলমপুরে কিছুক্ষণ ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কও অবরোধ করে তারা। সরকারি অফিসে অবশ্য হাজিরা ছিল খুব ভাল। স্কুল, কলেজও খোলা ছিল। পড়ুয়া অবশ্য বিশেষে আসেনি। তবে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে এ দিন স্নাতকোত্তর স্তরের দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা নির্বিঘ্নেই হয়েছে। ইতিহাস, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, বাংলা ও দর্শনের পরীক্ষা ছিল। সব পরীক্ষার্থীই হাজির পরীক্ষার হলে। যদিও পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছতে তাঁদের বেগ পেতে হয়েছে, অভিযোগ করেছেন অনেকেই। শহরের অধিকাংশ বাজারই এ দিন খোলেনি। অনেক রাস্তাই ছিল সুনসান। বন্ধ নিয়ে সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে তাই দাবির লড়াই চলেছে পুরোদস্তুর।
উত্তর দিনাজপুর
রায়গঞ্জে বন্ধের প্রভাব বিশেষ চোখে পড়েনি। সকাল থেকেই পুলিশ ও প্রশাসন তৎপরতার সঙ্গে বন্ধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। সকালে বন্ধ সমর্থকরা রায়গঞ্জের শিলিগুড়ি মোড় এলাকায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে পুলিশ তাঁদের হঠিয়ে দেয়। রায়গঞ্জ পুরসভা, উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসকের দফতর, জেলা পরিষদ, রায়গঞ্জ জেলা আদালত-সহ সমস্ত সরকারি দফতরে কাজকর্ম স্বাভাবিক হয়েছে। পিকেটিং হতে পারে, এই আশঙ্কায় কিছু সরকারি অফিসে এ দিন সকাল ৮টাতেই কর্মী-আধিকারিকরা ঢুকে পড়েন। বিকেলে শহরের দোকান-বাজারও খুলে যায়। ট্রেন চলাচলও ছিল স্বাভাবিক। তবে ব্যাঙ্ক, এটিএম এ দিন বন্ধ ছিল। ছন্দে ছিল ইসলামপুর শহরও। চোপড়া, গোয়ালপোখর, চাকুলিয়া, করণদিঘিতেও কাজকর্ম স্বাভাবিক ভাবেই হয়েছে। তবে স্কুলগুলিতে পড়ুয়া প্রায় আসেইনি। আর ইসলামপুর পুরসভায় বেশইরভাগ কর্মী না আসায় সেখানে আধিকারিককে ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখায় তৃণমূল।
আলিপুরদুয়ার
স্কুল খোলা ছিল। তবে পড়ুয়ারা বিশেষ আসেনি। শুধু রাজাভাতখাওয়া পানিঝোরা পিভি প্রাথমিক স্কুলে ছাত্ররা এলেও প্রধান শিক্ষক গরহাজির! রাস্তায় অটো-টোটো চললেও গরহাজির বেসরকারি বাস। বন্ধ সমর্থকেরা পথে নামার চেষ্টা করতেই আটকেছে পুলিশ। বেলতলা মোড়ে সিপিএম পার্টি অফিস থেকে মিছিল বের হতেই পুলিশ তাদের থামায়। কয়েক জনকে টেনে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করলে সকলে ফের কার্যালয়ে ঢুকে যান। পরে তাঁরা পুলিশকে দোষারোপ করেন। আর তৃণমূল জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী ‘বন্ধ ব্যর্থ করার জন্য’ সাধুবাদ দেন সাধারণ মানুষকে। এ দিন সিঙ্গুর উৎসবও পালন করেন তিনি।
জলপাইগুড়ি
সকালে ডেঙ্গুয়াঝাড় চা-বাগান এলাকায় গ্রেপ্তার করা হয় সিটু নেতা জহুরু ওরাও-সহ চার জনকে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক সলিল আচার্য, জীতেন দাস ও সুভাষ দেবকে নিয়ে ধৃতদের ছাড়াতে কোতোয়ালি থানায় যান। সিটু ও সিপিএমের একটি মিছিলও থানায় আসে। সেখানে পুলিশের সঙ্গে এক দফা ধস্তাধস্তিও হয়। পরে বিকেলে চার জনকে পুলিশ ছেড়ে দিলে বিক্ষোভ ওঠে। ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার জেলার চা-বাগানগুলিতেও ৷ ধর্মঘট সত্ত্বেও অনেক বাগানে কাজ হয়েছে। তেমনি বেশ কিছু বাগানে ধর্মঘট হয়েছে সর্বাত্মক ৷ ধর্মঘটের জেরে কিছু বাগানে আবার কাজ হয়েছে আংশিক ৷
দার্জিলিং
পাহাড়ের জনজীবন ছিল স্বাভাবিক ছন্দেই। পর্যটকদেরও পাহাড়ি রাস্তায় ঘোরাফেরা করতে দেখা গিয়েছে। শিলিগুড়িতে দোকান-বাজার বেশিরভাগ বন্ধ থাকলেও, সরকারি অফিসে স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে। এ দিন সকালে হাসমিচক লাগোয়া এলাকায় থেকে বন্ধ সমর্থকারীদের গ্রেফতার করে পুলিশ। প্রতিবাদে সিপিএমের জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার, শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্যরা মিছিল করলে পুলিশ তাঁদেরও গ্রেফতার করে। অশোক হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘‘আমাদের হেনস্থার অভিযোগে হাইকোর্টে মামলা করব।’’
বনধে মুখ্যমন্ত্রীর শাখা সচিবালয় উত্তরকন্যায় স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর দফতর (সিএমও), ভূমি সংস্কার, পেনশন, উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর-সহ বিভিন্ন দফতর মিলিয়ে ৬৫ জনের অফিসার-কর্মীর সবাই হাজির ছিলেন। তবে বাসিন্দাদের বিশেষ চোখে পড়েনি।