এটিএমে গোঙানি, চোখ কপালে আইনজীবীর

কোনও এক ফাঁকে এটিএমের মধ্যে ঢুকে পড়ে কুকুর। দু’দিন বেরোনোর সুযোগ পায়নি।একে এটিএমের ঠান্ডা, তায় খাবারদাবার নেই। সোমবার সকালে শিলিগুড়ির বাবুপাড়া মেন রোডের এটিএম থেকে উদ্ধার করার পরে সে থরথর করতে করতে রাস্তায় নেমে তো যায়, কিন্তু কয়েক পা এগিয়েই এলিয়ে পড়ে রাস্তায়।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৬ ০৪:২২
Share:

তখনও যেন ভয় কাটেনি। উদ্ধার হওয়ার পরে কুকুরটি। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

কোনও এক ফাঁকে এটিএমের মধ্যে ঢুকে পড়ে কুকুর। দু’দিন বেরোনোর সুযোগ পায়নি।

Advertisement

একে এটিএমের ঠান্ডা, তায় খাবারদাবার নেই। সোমবার সকালে শিলিগুড়ির বাবুপাড়া মেন রোডের এটিএম থেকে উদ্ধার করার পরে সে থরথর করতে করতে রাস্তায় নেমে তো যায়, কিন্তু কয়েক পা এগিয়েই এলিয়ে পড়ে রাস্তায়। পাড়া-পড়শিরাই তাকে প্রথমে জল, খাবার দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করেছে। পরে তাকে বাড়ি নিয়ে গিয়েছেন আইনজীবী অখিল বিশ্বাস। ছোট্ট কুকুরটিকে রেখেছেন জুতোর র‌্যাকে। তাঁদের অনুমান, কুকুরটির বয়স মাত্র ছ’সাত মাস।

অখিলবাবুই এ দিন সকালে চার ঘণ্টা ধরে চেষ্টা করে কুকুরটিকে বার করতে পেরেছেন। সোমবার সকাল ৭টা নাগাদ শিলিগুড়ি থানার কাছে শক্তিসোপান ক্লাবের উল্টো দিকে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ওই এটিএম-এ যান অখিলবাবু। ঢুকেই কানে আসে গোঙানির আওয়াজ। এটিএম যন্ত্রটি যেখানে আছে, তার পিছনে রয়েছে আর একটি ছোট ঘর। তার বন্ধ দরজায় কান পেতে অখিলবাবু বুঝতে পারেন, ভিতরে একটি কুকুর রয়েছে।

Advertisement

সঙ্গে সঙ্গেই ব্যাঙ্কের এক সিনিয়র ম্যানেজারকে ফোন করেন তিনি। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ কিন্তু তখন জানিয়ে দেন, একটি বেসরকারি সংস্থাকে এটিএম দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেই বেসরকারি সংস্থার এক প্রতিনিধি আবার পাহারাদারের উপরে দায়িত্ব চাপিয়ে ফোন কেটে দেন। অখিলবাবু তখন ব্যাঙ্কের ম্যানেজারকে ফোন করে পশু নির্যাতনের অভিযোগে মামলা দায়েরের হুমকি দেন। তাতেও কাজ হয়নি। তখন ১০০ নম্বরে ফোন করে অভিযোগ করেন। শিলিগুড়ি থানার আইসি দেবাশিস বসুকে জানান। দেবাশিসবাবু সেখানে হাজির হন। কিন্তু, ব্যাঙ্কের তরফে বেলা ১০টা পর্যন্ত কেউ না যাওয়ায় অখিলবাবু পুলিশের কাছে অভিযোগও দায়ের করে দেন। শেষ পর্যন্ত বেলা ১১টা নাগাদ পাহারাদার গিয়ে তালা খুলে দেন। ব্যাঙ্কের এক সিনিয়র ম্যানেজার জানান, এটিএম-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থার কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করা হয়েছে।

তালা খোলার পরে পশুদের উপরে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগে পাহারাদারকে পুলিশ গ্রেফতার করতে চেয়েছিল। কিন্তু ওই পাহারাদার সকলের সামনে নাক-কান মুলে ক্ষমা চেয়ে এমন আর কোনদিন হবে না বলে কান্নাকাটি করায় অখিলবাবু অভিযোগ তুলে নিয়েছেন। পাড়া-পড়শির ধারণা, চৈত্রের গরমে কোনও সময়ে ফাঁকা পেয়ে ঠান্ডা এটিএম-এ ঢুকে পড়েছিল কুকুরটি। পাহারদার দেখেননি। শনিবার দুপুরে ঘরে তালা দিয়ে পাহারাদার চলে যান। কুকুরটি নিশ্চয়ই তারপরে ডেকেছিল। কিন্তু ব্যস্ত রাস্তার ধারের এটিএমের ভিতর থেকে সে আওয়াজ দিনের বেলায় টের পাননি কেউ। তারপরে কেটে গিয়েছে দু’টি দিন।

কিন্তু এই সময়ে তো অনেকে এটিএম-এ গিয়েছেন। তাঁরা কিছু শুনতে পাননি?

ভয়ে, ঠান্ডায়, খিদেয় তত ক্ষণে কুকুরটির গলার জোরও কমেছে। অখিলবাবু বলেন, ‘‘কেউ শুনতে পেলেও হয়তো ভেবেছিলেন, কুকুরটি পাহারাদারেরই হবে। আমার সকালে সন্দেহ হয়, কুকুরটি যেন কাঁদছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন