দেড় বছর নার্সিংহোমে ফিরদৌসি

সরকারি প্রকল্পে চিকিৎসা করাতে গিয়ে এক কিশোরী পঙ্গু হয়ে দেড় বছর ধরে শিলিগুড়ির মাটিগাড়ার এক নার্সিংহোমে পড়ে রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, এত দিন ধরে নার্সিংহোমে পড়ে থাকলেও যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থা করাতে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কোনও গরজ নেই।

Advertisement

সৌমিত্র কুণ্ডু

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:২৮
Share:

সরকারি প্রকল্পে চিকিৎসা করাতে গিয়ে এক কিশোরী পঙ্গু হয়ে দেড় বছর ধরে শিলিগুড়ির মাটিগাড়ার এক নার্সিংহোমে পড়ে রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, এত দিন ধরে নার্সিংহোমে পড়ে থাকলেও যথাযথ চিকিৎসা ব্যবস্থা করাতে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কোনও গরজ নেই। তাতে ওই কিশোরী জান্নাতুন ফিরদৌসিকে নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন তার বাবা তথা পেশায় দিনমজুর আমজাদ আলি এবং তাঁর পরিবার।

Advertisement

তাঁদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে লিগাল এড ফোরাম। ফোরামের সম্পাদক অমিত সরকারের তরফে শিশু পাচার-সহ শিশুদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে নানা অনিয়ম নিয়ে হাইকোর্টে জনস্বার্থে মামলা করা হয়। তার মধ্যে জান্নাতুনের বিষয়টিও ছিল। গত ২৭ জানুয়ারি এই মামলার প্রথম শুনানি ছিল। ফোরামের আইনজীবী মধুসূদন সাহা রায় বলেন, ‘‘আদালত সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন, পুলিশ সুপারদের বিভিন্ন বিষয়গুলির ক্ষেত্রে পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত জানাতে বলা হয়েছে।’’

তবে আলিপুরদুয়ারে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক পূরণ শর্মা বলেন, ‘‘ওই কিশোরী শিলিগুড়ির নার্সিংহোমে এক বছরের বেশি ভর্তি রয়েছেন বলে আগে কেউ আমাকে জানায়নি। সম্প্রতি তা জানার পর ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং নার্সিংহোমের কাছ থেকে বিস্তারিত শুনেছি। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। আদালত যে ভাবে বলবে সেই ভাবেই ব্যবস্থা নেব।’’ তিনি জানান, স্কুলে স্বাস্থ্য শিবিরে ওই কিশোরীর পেটেন্ট ডাক্টস আর্টেরিওসিস (পিডিএ) ধরা পড়ে। তাতে ফুসফুস এবং হৃৎপিন্ডে পরিবহণের ক্ষেত্রে অক্সিজেন যুক্ত বিশুদ্ধ রক্ত এবং কার্বন ডাই অক্সাইড যুক্ত দূষিত রক্তের সংমিশ্রণের সম্ভবনা রয়েছে। এমনি কিছু বোঝা না গেলেও ভবিষ্যতে তা ক্ষতিরকারণ হতে পারত। আচমকা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ সংশয় ঘটতে পারে। নার্সিংহোমের কর্ণধার ওয়াই এস চ্যাংয়ের দাবি, ‘‘অস্ত্রোপচারের পর কিছু জটিলতা সৃষ্টি হয়। ধীরে ধীরে ভাল হচ্ছে ওই কিশোরী।’’

Advertisement

ডুয়ার্সের মাদারিহাট ব্লকের রাঙালিবাজনার বাসিন্দা জান্নাতুন। পরিবারের দাবি, ফিরদৌসির তেমন কোনও সমস্যা ছিল না। ৬ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে রোজ স্কুলে যেত, বাড়ির কাজ করত। নিয়মিত পড়াশোনা করে ডুয়ার্সের খিদিরপুর রহমানিয়া হাই মাদ্রাসা থেকে ২০১৫ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল। ওই বছর জুলাইয়ে স্কুলে স্বাস্থ্য শিবির হলে সেখানে চিকিৎসক তাকে দেখেন। হৃৎপিণ্ডে ফুটো রয়েছে জানালে চিন্তায় পড়ে পরিবার। জলপাইগুড়ি জেলা স্বাস্থ্য দফতর তথা ব্লক স্বাস্থ্য বিভাগের তরফে জানানো হয়, সরকারের শিশুসাথী প্রকল্পে নিখরচায় চিকিৎসা ব্যবস্থা মিলবে। এরপর বারবার নার্সিংহোম থেকে ফোন করে এক রকম জোর করে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ। অভিযোগ, ওই বছর ২৭ জুলাই অস্ত্রোপচারের পর ওই কিশোরী পঙ্গু হয়ে পড়েছে, হাঁটাচলা করতে বা কথা বলতে পারছে না। কোনটা কী সঠিক ভাবে বুঝতেও পারছে না বলে দাবি। স্কুলের স্বাস্থ্য শিবিরের চিকিৎসক বিশ্বজিৎ কুমার জানান, স্বাস্থ্য পরীক্ষায় হৃৎপিণ্ডে সমস্যা রয়েছে মনে হওয়াতেই সরকারি প্রকল্পে ওই নার্সিংহোমে চিকিৎসার জন্য রেফার করা হয়েছিল।

এক সময় জলপাইগুড়ি জেলার অংশ থাকলেও বর্তমানে রাঙালিবাজনা এলাকা আলিপুরদুয়ার জেলার অধীনে।

আমজাদ আলির অভিযোগ, প্রতি মূহূর্তেই নার্সিংহোম থেকে চলে যেতে চাপ দেওয়া হচ্ছিল। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের সাড়া না-পেয়ে পরিচিতদের নিয়ে গিয়ে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে চাপ দিলে তবে তারা রাখতে বাধ্য হয়েছে। মেয়ের খাবার এলাকার কয়েকটি গুমটি হোটেল থেকে চেয়ে আনতে হচ্ছে। বিষয়টি জানিয়ে স্বাস্থ্য দফতর থেকে জেলাপ্রশাসন সব জায়গাতেই চিঠি দিয়েছেন।

আমজাদ আলি বলেন, ‘‘জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে কেউ গত দেড় বছরে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তাঁরা কোনও কথাই শুনতে চাননি। মেয়ের চিকিৎসা জন্য শিলিগুড়ি থাকতে ভিটেমাটি বন্ধক রেখে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা নিয়েছি। মেয়েকে সুস্থ না করে বাড়ি নিয়ে যেতে চাই না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন