সরব অভিভাবকেরা

খুঁত ঢাকতে সরব মালিক, নালিশ

নিজেদের খুঁত ঢাকতে স্কুলবাস মালিকরা ‘পুলকারে’র বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন অভিভাবকদের একাংশ। শনিবার স্কুলবাস চালকদের সংগঠনের সদস্যদের সাংবাদিক বৈঠক করে অভিযোগ করা হয়, শহরে বিধি ভেঙে স্কুলপড়ুয়াদের নিয়ে ‘পুলকার’ (ছোট গাড়ি) চলাচল করলেও, কোনও অভিযান হচ্ছে না, তা নিয়ে কেউ অভিযোগও করছে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৬ ০২:৪১
Share:

দড়ি দিয়ে বাঁধা রয়েছে বাসের দরজা। এমন লড়ঝড়ে বাসেই ঝুঁকি নিয়ে রোজ যেতে হয় খুদে স্কুলপড়ুয়াদের। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

নিজেদের খুঁত ঢাকতে স্কুলবাস মালিকরা ‘পুলকারে’র বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন অভিভাবকদের একাংশ। শনিবার স্কুলবাস চালকদের সংগঠনের সদস্যদের সাংবাদিক বৈঠক করে অভিযোগ করা হয়, শহরে বিধি ভেঙে স্কুলপড়ুয়াদের নিয়ে ‘পুলকার’ (ছোট গাড়ি) চলাচল করলেও, কোনও অভিযান হচ্ছে না, তা নিয়ে কেউ অভিযোগও করছে না। সেই সঙ্গে বেশ কিছু স্কুলবাসে যে যথাযথ নিয়ম মানা হচ্ছে না তাও স্বীকার করে নিয়েছে শিলিগুড়ির স্কুল বাস ও চার্টার্ড বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা। তবে সেই নিয়ম মানতে কী পদক্ষেপ হবে তা নিয়ে কোনও নির্দিষ্ট আশ্বাস দিতে পারেননি তাঁরা।

Advertisement

শিলিগুড়িতে স্কুলবাস চলাচল নিয়ে ভুরিভুরি অভিযোগ ওঠা নতুন কোনও ঘটনা নয়। স্কুলবাসে কী ধরনের পরিকাঠামো থাকবে, কেমন সর্তকতা নিতে হবে তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট নির্দেশিকা রয়েছে। যদিও, শহরের অধিকাংশ স্কুলবাসের ক্ষেত্রে তা মানা হয় না বলে অভিযোগ। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে গত সাত দিনে পর পর দু’টি ঘটনা। গত মঙ্গলবার এক মদ্যপ ব্যক্তির বিরুদ্ধে স্কুলবাস চালানোর অভিযোগ ওঠে। মদ্যপ অবস্থায় বাসের স্টিয়ারিং হাতে নিয়ে পরপর তিনটি ছোট দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে বলে অভিযোগ। ভয়ে আতঙ্কে বাসে থাকা পড়ুয়ারা কেঁদে ফেলে, ঝাকুনিতে অল্পবিস্তর জখমও হয় কয়েকজন। অল্পের জন্য বড় দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছিল বলে বাসিন্দাদের দাবি। এর পরে গত বৃহস্পতিবার শিলিগুজড়ির রবীন্দ্রনগর মোড়ে এক মদ্যপ স্কুলবাস চালককে হাতেনাতে ধরে ফেলেন অভিভাবকরা। মদ্যপ চালককে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে বাসের বেহাল দশা নিয়েও ক্ষোভ দেখান অভিভাবকরা। বাস মালিক সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগও দায়ের করা হয়। পরপর এমন ঘটনায় আতঙ্কিত অভিভাবকরা প্রশ্ন তোলেন পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে। অভিযোগ পৌঁছয় ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছেও। উপরমহলের নির্দেশে স্কুলবাসে যথাযথ নির্দেশ মানা হচ্ছে কি না তা দেখতে অভিযান শুরু করে জেলা পরিবহণ দফতর। প্রথম দিনের অভিযানেই স্কুলবাস চলাচল নিয়ে একাধিক অনিয়ম হাতেনাতে ধরে পরিবহণ দফতরের দল। সংশ্লিষ্ট বাস কর্তৃপক্ষকে সর্তকও করে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিলিগুড়ির এআরটিও (সহ পরিবহণ আধিকারিক) নবীন অধিকারী।

গত বৃহস্পতিবারের অভিযানের পরে সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনায় গতকাল শুক্রবার বৈঠকে বসেছিলেন শিলিগুড়ির বাস মালিকদের সংগঠনের সদস্যরা। শনিবার সাংবাদিক বৈঠক করে তাঁরা দাবি করেন, একান্ত নিরুপায় হয়েই সব আইন মানা সম্ভব হয় না। বাস চালাতে সুপ্রিম কোর্টের সমস্ত আইন মেনে চলতে গেলে তাঁদের ছাত্র প্রতি ভাড়া অনেক বাড়িয়ে দিতে হবে বলেও দাবি করেছেন তাঁরা। সংগঠনের সম্পাদক শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করে বলেন, ‘‘আমরা আইন মেনেই বাস চালানোর চেষ্টা করছি। তবে পুরোপুরি মানা সম্ভব হয় না। শহরে পুলকারগুলি বেআইনিভাবে শহরে বাচ্চাদের স্কুলে নিয়ে যাচ্ছে। সেগুলি দিব্যি চলছে, অথচ তাঁরা কর দিয়ে, বিধি মেনে ব্যবসা করা সত্বেও আমাদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।’’ বেআইনি পুলকার রুখতে অভিযান শুরু হয়েছে বলে জানান শিলিগুড়ির এআরটিও নবীন অধিকারী। তিনি বলেন, ‘‘অভিযোগ আমাদের কাছেও এসেছে। অভিযান চলছে। বহু গাড়িকে পুলকার হিসেবে চালানোর জন্য জরিমানা করা হয়েছে। তবে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার জন্য আপাতত স্থগিত রয়েছে। প্রক্রিয়া মিটলেই ফের অভিযানে নামা হবে।’’

Advertisement

বেশ কিছু অভিযোগ মিথ্যে বলে শুভ্রবাবু এ দিন দাবি করেছেন। তবে কী তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ মিথ্যে? সাংবাদিক বৈঠকে এই প্রশ্নের উত্তরে শুভ্রবাবু বলেন, ‘‘আমরা অভিভাবকদের আর্থিক অবস্থার কথা চিন্তা করে কম ভাড়া নিই। তাই সব আইনি নির্দেশ মানা সম্ভব হয় না।’’ অভিভাবকদের চাপেই ভাড়া বাড়ানো সম্ভব হয় না বলে দাবি করেন তিনি। সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, তাঁদের ৮০ শতাংশ বাসই নতুন। বাকিগুলি পুরনো। তাও ধীরে ধীরে বদলানো হবে বলে তাঁর দাবি। যদিও, অভিভাবকদের কেউ কেউ পাল্টা দাবি করেছেন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা মানা বাধ্যতামূলক। অভিভাবকদের কথা চিন্তা করে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানা হচ্ছে না এমন দাবি নেহাতই বালখিল্য বলে কটাক্ষ করেছেন অভিভাবকদের অনেকেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement