ঘিসিঙ্গের নামে রাস্তা, উদ্বেল রোহিণী

পদ্মপতি শর্মার বাড়ি মিরিক লাগোয়া ছোট্ট গ্রামে। তার কিছু দূরেই মঞ্জু চা বাগানে ছিল সুবাস ঘিসিঙ্গের আদি বাড়ি। ছোট বেলাতে কাছ থেকে দেখেছেন ঘিসিঙ্গকে।

Advertisement

কিশোর সাহা

দার্জিলিং শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৩৫
Share:

পঁয়ষট্টিতে হাতে-পায়ে আগের মতো জোর নেই। বহু স্মৃতিও ঝাপসা। তবু কিছু এখনও সতেজ। সেই স্মৃতির টানেই মিরিক থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে রোহিণীতে এসে পৌঁছেছেন সকাল সকাল।

Advertisement

পদ্মপতি শর্মার বাড়ি মিরিক লাগোয়া ছোট্ট গ্রামে। তার কিছু দূরেই মঞ্জু চা বাগানে ছিল সুবাস ঘিসিঙ্গের আদি বাড়ি। ছোট বেলাতে কাছ থেকে দেখেছেন ঘিসিঙ্গকে। ভক্ত হয়েছেন কিশোর বেলায়। নব্বইয়ের দশকে রোহিণীর রাস্তার কাজ শুরু হলে তিনি হাত লাগিয়েছিলেন। কোদাল দিয়ে মাটি কেঁটেছেন, টিন থেকে গরম পিচ ঢেলেছেন বিছানো পাথরের ওপর। সে সব স্মৃতি এখনও টাটাকা। দেখেছিলেন, পাশে দাঁড়িয়ে কাজের তদারকি করছেন খোদ ঘিসিঙ্গ।

সে সময় দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিলের চেয়ারম্যান। একদা পাহাড়ের একচ্ছত্র অধিপতি। সোমবার রোহিণী থেকে কার্শিয়াং পর্যন্ত পাকদণ্ডি মসৃণ পিচ রাস্তার নামকরণ করা হল সুবাস ঘিসিঙ্গের নামে। রোহিনী রোড বদলে গেল সুবাস ঘিসিঙ্গ মার্গে। এই পরিবর্তনের সাক্ষী থাকতেই শীতের সকালে প্রায় ৪০ কিলোমিটার উজিয়ে মিরিক থেকে রোহিণী পৌঁছন পদ্মপতি।

Advertisement

শুধু পদ্মপতি শর্মা নয় কেউ এসেছিলেন মিরিক থেকে কেউ বা কার্শিয়াং, থরবু, সৌরিণী, মঞ্জু চা বাগান থেকে। একপাশে বিনয় তামাঙ্গ অন্যপাশে ঘিসিঙ্গ পুত্র মনকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন নতুন নামে রোহিণীর রাস্তার ফলক উদ্বোধন করলেন তখন চারপাশে থিকথিকে ভিড়। ভিড়ে প্রবীণদের সংখ্যা লক্ষণীয়। বয়সের ভারে পদ্মপতি কথাও বলেন থেমে থেমে। তিনি বললেন, ‘‘এখান দিয়ে যে রাস্তা তৈরি সম্ভব সুবাস ঘিসিঙ্গই ভেবেছিলেন। ওঁর নামে রাস্তা হওয়াটা একটা ঐতিহাসিক ঘটনা।’’

এই রাস্তা তৈরির কাজ যখন শুরু হয় তখন ছোট ছিলেন ঘিসিঙ্গ পুত্র মনও। এখন তাঁর হাতেই জিএনএলএফের দায়িত্ব। এ দিন তাঁকেও আবেগ ছুঁয়েছিল। মনের কথায়, ‘আমি ছোট্ট ছিলাম কিন্তু মনে আছে বুলডোজার দিয়ে যখন রাস্তা তৈরি হচ্ছি বাবা ঠায় দাঁড়িয়ে থাকত। নিজেও কাজে হাত লাগিয়েছেন। এতদিনে একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হল।’’ জিটিএ-এর বর্তমান চেয়ারম্যান বিনয় তামাঙ্গ বলেন, ‘‘এই রাস্তার সঙ্গে সুবাস ঘিসিঙ্গের পরিশ্রমও ছিল। সে কারণেই এই রাস্তাটি সুবাস ঘিসিঙ্গের নামে করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম।’’

বেশি দিন আগের কথা নয়। ধসে-বৃষ্টিতে পাগলাঝোরায় বারবার ধসের কারণে পাহাড়ে পণ্য ওঠা-নামাও বন্ধ হয়ে যেত। বিকল্প রাস্তাও ছিল না। আশির দশকে পাহাড়ে আন্দোলনের সময় ঘিসিঙ্গ নিজেও এই পথ দিয়ে পালিয়ে শিলিগুড়ির আশেপাশে আত্মগোপন করেছেন একাধিকবার। ক্ষমতায় বসে ঘিসিঙ্গই রোহিনী দিয়ে বিকল্প রাস্তার পরিকল্পনা করেন। এই রাস্তাকে ঘিরেই বদলে যায় আশেপাশের অর্থনীতি। গত কয়েক বছরের নানা উত্থান-পতনেও রোহিনীর বাসিন্দারা ঘিসিঙ্গের দল জিএনএলএফের থেকে মুখ ফেরাননি। কর্মীদের দাবি, তারই প্রমাণ মিলল এ দিনের অনুষ্ঠানেও উপচে পড়া ভিড়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন