রাত বাড়লেই চেনা শহর বদলে যায়, অর্ধেক আকাশ ঢাকা পড়ে মেঘে

ভয়ে হাত-পা কাঁপছিল

শহরের বিদ্রোহী মোড় এলাকা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম আমি। রাস্তাঘাট তখন একেবারে সুনসান। হঠাৎ দেখতে পাই...।

Advertisement

রেশমি চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৫:১৬
Share:

কতটা নিরাপদ: রায়গঞ্জের পথে। নিজস্ব চিত্র

আমি একটি হাইস্কুলে পড়াই। সেই সঙ্গে অনেক দিন ধরেই স্থানীয় ছেলেমেয়েদের এবং আমার স্কুলের পড়ুয়াদের আবৃত্তি শেখাই। মাঝেমধ্যেই শহরের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশনের জন্য আমাদের ডাক আসে।

Advertisement

এ বার কালীপুজোর ক’দিন পর শহরের দেবীনগর এলাকায় আমাদের একটা অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ ছিল। সেই অনুষ্ঠান সন্ধে ৭টা নাগাদ শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অনুষ্ঠান শেষ পর্যন্ত শুরু হয় রাত সাড়ে ৮টায়। আমার শিক্ষার্থীরা রাত ১০টার মধ্যে আবৃত্তি পরিবেশন করে তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে নিরাপদে নিজেদের বাড়ি ফিরে যায়। কিন্তু আমার অনুষ্ঠান শেষ করতে করতে রাত সাড়ে ১১টা বেজে গিয়েছিল। এবং সমস্যা তৈরি হয় অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর বাড়ি ফেরার জন্য কোনও টোটো বা রিকশা না পাওয়ায়। কী করব বুঝতে না পেরে খুব চিন্তিত হই! অগত্যা নিতান্ত বাধ্য হয়ে একাই হেঁটে বাড়ির দিকে রওনা হই। ঘড়িতে তখন রাত ১২টা ছুঁই-ছুঁই।

শহরের বিদ্রোহী মোড় এলাকা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম আমি। রাস্তাঘাট তখন একেবারে সুনসান। হঠাৎ দেখতে পাই, রাস্তার ধারে একটি দোকানের সামনে নিকাশি নালার স্ল্যাবের উপর চার-পাঁচজন যুবক দাঁড়িয়ে রয়েছে। বুঝতে পারলাম, ওরা সবাই নেশা করছিল। আমায় দেখেই নিজেদের মধ্যে গল্প থামিয়ে ওরা এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে শুরু করল! আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়ে আরও জোরে হাঁটতে শুরু করি। কিছুক্ষণ পর দেখি, ওরা দু’টি বাইকে চেপে আমার পাশ দিয়ে এগিয়ে গিয়ে কিছুটা দূরে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে পড়েছে। আশপাশের এলাকায় কোনও লোকজন ছিল না। আতঙ্কে আমার হাত-পা কাঁপতে শুরু করে। কিন্তু আমি ভয় পেয়েছি বুঝতে পারলে ওরা আরও পেয়ে বসতে পারে, এই ভেবে আতঙ্ক নিয়েই কোনও দিকে না তাকিয়ে ওদের সামনে দিয়ে জোরে হেঁটে চলে যাই। কপালজোরে সেই সময় একটি খালি টোটো সেখান দিয়ে যাচ্ছিল। চালককে কিছু না বলেই টোটোয় উঠে যাই।

Advertisement

টোটোচালক সুদর্শনপুর যাওয়ার ভাড়া ২০ টাকার বদলে ৫০ টাকা দাবি করেন। আমি তাতেই রাজি হয়ে তাঁকে তাড়াতাড়ি টোটো চালাতে বলি। এর পর অবশ্য ওই চার যুবক আর টোটোর পিছু নেয়নি।

কর্মসূত্রে মাঝেমধ্যেই বাড়ি ফিরতে আমার রাত হয়ে যায়। রাত ১০টার পর সত্যিই শহরের কসবা মোড় থেকে শিলিগুড়ি মোড় পর্যন্ত শহরের প্রধান রাস্তায় হাঁটাচলা করতে ভয় হয়। কারণ, সেই সময় বেপরোয়া বাইক বাহিনী ও নেশাগ্রস্ত যুবকেরা শহরের দখল নিয়ে নেয়! আমাদের শহরের বিভিন্ন পাড়ার রাস্তাতেও এই একই পরিস্থিতি তৈরি হয়। রাতে মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পুলিশের নজরদারি আরও বাড়ানো উচিত। শহরের বিভিন্ন সংগঠন ও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন বাসিন্দাদেরও ভাবা উচিত বিষয়টি নিয়ে। হায়দরাবাদ-কাণ্ডের পর শুধু প্রতিবাদ মিছিল করলেই মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হবে, এমন নয়।

রায়গঞ্জ শহরের সুদর্শনপুর এলাকার বাসিন্দা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন