এই চিঠি নিয়েই অভিযোগ। —নিজস্ব চিত্র।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবের নাম করে সরকারি আধিকারিককে চিঠি দিয়ে সরকারি গুদামে কারা নিরাপত্তারক্ষী হিসাবে কাজ করবেন, তা ঠিক করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূল কংগ্রেসের এক ব্লক সভাপতির বিরুদ্ধে। গৌতমবাবুর নির্বাচনী ক্ষেত্রে ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি বিধানসভা এলাকায় দলের ব্লক সভাপতি দেবাশিস প্রামাণিকের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ তুলেছে আরএসপি-র শ্রমিক সংগঠন ইউটিইউসি।
সংগঠনের অভিযোগ, ফুলবাড়িতে শিলিগুড়ি পুরসভার পানীয় জলের ‘ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের’ গুদাম রয়েছে। সম্প্রতি, নতুন ঠিকাদার সংস্থা কাজ পেয়েছে। এতে পুরানো ঠিকাদার সংস্থার অধীনে থাকা ছ’জন নিরাপত্তারক্ষীর বদলে নতুন ছ’জন কাজ করবেন বলে ঠিক করেছেন তৃণমূলের ওই ব্লক সভাপতি। শুধু তাই নয়, মন্ত্রী গৌতমবাবুর নির্দেশের কথা উল্লেখ করে শিলিগুড়ির জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের নির্বাহী বাস্তুকারকে চিঠি দিয়ে, ওই ছ’জনের নামের তালিকাও তিনি পাঠিয়েছেন।
উল্টো দিকে, রাজ্যের আরেক মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী, পুরানো কর্মীরা মালদহের বাসিন্দা হওয়ায় তাঁদেরই কাজে রাখার পক্ষে সওয়াল করেছেন। মন্ত্রী গৌতমবাবুকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি দেখার কথা বলেছেন তিনি। আরএসপি নেতাদের বক্তব্য, ‘‘রাজ্যের এক মন্ত্রী যখন পুরানো লোকদের পক্ষে দাঁড়াচ্ছেন, তখন আরেক মন্ত্রী’র দলের লোক তাঁদের তাড়িয়ে দেওয়ার কাজে নেমেছে। এতো মনে হচ্ছে, তৃণমূলের অন্দরে বোঝাপড়ার কোনও সমস্যা হচ্ছে।’’
যদিও বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে বলে দাবি করেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতমবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘বিষয়গুলি আমি জানি না। কে কোথায় চিঠি দিয়েছে তা বলতে পারছি না। আমি কলকাতায় আছি। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। ওই ব্লক সভাপতির সঙ্গেও কথা বলব।’’
আরএসপি নেতাদের একাংশের বক্তব্য, দেবাশিসবাবু কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি থাকাকালীনও তাঁর সঙ্গে গৌতমবাবুর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল বলে শোনা যায়। পরবর্তীতে তিনি তৃণমূলে যোগ দিতেই তাঁকে ব্লকের সভাপতি করা হয়। দেবাশিসবাবু রাজগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতিরও সদস্য। তাঁকে বিভিন্ন সময়ে নানা অনুষ্ঠানে গৌতমবাবু’র সঙ্গেও দেখা যায়। সেখানে মন্ত্রী বিষয়টি জানেন না বললেও গৌতমবাবুকে না জানিয়েই দেবাশিসবাবু এই কাজ করতে পারেন না বলে মনে করছেন বাম সংগঠনের নেতারা।
উত্তরবঙ্গ পিএইচই মেকানিক্যাল ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভ-সভাপতি তাপস গোস্বামী বলেন, ‘‘ওই তৃণমূল নেতা সরকারি অফিসারের কাছে ব্লক সভাপতি হিসাবে নিজের পরিচয় দিয়ে কারা কাজ করবেন, সেই নামের তালিকাও তুলে দিচ্ছেন। আর সবই মন্ত্রীর নির্দেশে তিনি করছেন বলে চিঠিতে দাবিও করছেন। দীর্ঘদিনের লোকদের তাড়ানো হচ্ছে। এতো মারাত্মক ব্যাপার।’’ তাপসবাবু জানান, এমন হলে তো সরকারি দফতরগুলি তুলে দিয়ে কিছু ক্ষেত্রে তৃণমূলের ব্লক সভাপতিদের বিভিন্ন দায়িত্ব দিয়ে দিলেই হয়।
পুরসভার অধীনে ওই ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের গুদামের নিরাপত্তার বরাত ছিল কলকাতার একটি সংস্থার হাতে। তাঁরা মালদহের বাসিন্দা ছয় জনকে গুদামের নিরাপত্তারক্ষী হিসাবে নিয়োগ করেছিল। ২০১০ সাল থেকে তাঁরা কাজ করছেন। নতুন সংস্থা বরাত পেতেই গোলমালের সূত্রপাত। পুরানো কর্মীরা দাবি করেন, তাঁদেরই কাজে বহাল রাখতে হবে। মালেক শেখ, আবদুল মজিদের মতো ওই কর্মীদের দাবি, তৃণমূল নেতাদের চাপেই নতুন ঠিকাদার তাঁদের সরাতে চাইছে। মাসিক ৭ হাজার টাকার পরিবর্তে আরও কম বেতনের কথা বলা হয়েছিল। এ বার বলা হচ্ছে কাজ ছেড়ে দিতে। না চলে গেলে প্রাণে মারার হুমকি দিচ্ছে। তাঁরা বলেন, ‘‘সব জায়গায় লিখিত ভাবে আমরা বিষয়টি জানিয়েছি। আপাতত আমরাই কাজ করছি।’’
সেই চিঠি। সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন।
পিএইচই সূত্রের খবর, বর্তমানে সরকারি ওই গুদামে কারা কাজ করছেন, তা ঠিকাদার সংস্থাকে লিখিত ভাবে জানাতে বুধবারই নির্দেশ দিয়েছেন নর্থ বেঙ্গল মেক্যানিক্যাল ডিভিশনের নির্বাহী বাস্তুকার দীপক সিংহ। সেই সঙ্গে তিনি কর্মী নিয়োগ সম্পর্কিত বিষয়ে তৃণমূল নেতা দেবাশিসবাবুকেও চিঠি দিয়ে ঠিকাদার সংস্থার সঙ্গেই কথা বলার জন্য বলেছেন। দীপকবাবু বলেন, ‘‘অনেক চিঠি পেয়েছি ঠিকই। তবে নিরাপত্তার কাজটা ঠিকাদার সংস্থার দায়িত্ব। তাঁরাই সব লোক ঠিক করবেন। তাই ওখানে কারা কাজ করছেন, তা জানাতে বলেছি। এতে আমাদের কোনও ভূমিকা নেই।’’
দেবাশিসবাবু’র যুক্তি, ‘‘আমি দলের নেতা ছাড়া এলাকার জনপ্রতিনিধিও। তাই চিঠি দিয়ে স্থানীয় লোকেদের কাজের কথা বলতেই পারি। এতে তো কোনও অন্যায় নেই। আর যাঁরা কাজ করছিলেন, সকলেই তো মালদহের। ওঁদের ঠিকাদারের হাতে তো আর বরাতও নেই।’’ তিনি জানান, ১৯৯৪ সালে পুরসভা ফুলবাড়িতে ৮২ একর জমি নিয়ে প্রকল্পটি শুরু করে। বহু মানুষ জমি দেন। মাত্র ১৭ জন সরকারি কাজ পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘সেখানে আরও স্থানীয়দের কাজ পাইয়ে দেওয়াটা আমার দায়িত্বই। মন্ত্রী গৌতমবাবুকে আমি সব জানিয়েও ছিলাম।’’ আর ঠিকাদার সংস্থার মালিক দেবারু মহম্মদ বলেন, ‘‘আমি এক বছরের জন্য কাজ পেয়েছি। আমার লোকেদের দিয়ে কাজ করাব। পুরানোরা তা মানছেন না। সরকারি গুদামে কিছু হলে, সেই দায়িত্ব কে নেবে ? আর ভয় দেখানোর অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’