টাকার লোভে খুন বলেই সন্দেহ

ব্যবসার লক্ষাধিক টাকা বাড়িতে ছিল। তা লুঠের জন্য বাগডোগরায় দম্পতিতে ঘরের মধ্যে কুপিয়ে, থেঁতলে খুন করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের সন্দেহ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৮ ০১:৫৮
Share:

শোকস্তব্ধ: কফিনবন্দি দেহ এসেছে বাড়িতে। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন খুশওয়া দম্পতির আত্মীয় ও পড়শিরা। —নিজস্ব চিত্র।

ব্যবসার লক্ষাধিক টাকা বাড়িতে ছিল। তা লুঠের জন্য বাগডোগরায় দম্পতিকে ঘরের মধ্যে কুপিয়ে, থেঁতলে খুন করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের সন্দেহ।

Advertisement

সোমবার সকাল থেকে অজয় কুশওয়া’র সংস্থার ৭ জন কর্মীকে দফায় দফায় জেরা শুরু করেছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, নিহত দম্পতির ও কয়েকজন কর্মীর মোবাইলের তথ্য খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে। সেখানে বেশ কিছু নম্বর পুলিশের হাতে পৌঁছেছে। সেগুলি কাদের, কেনই বা তারা সংস্থার কর্মীদের সঙ্গে সম্প্রতি যোগাযোগ রাখছিলেন তা দেখা হচ্ছে। তেমনিই, বাগডোগরায় ওই বাড়়ির তিনতলার ঘরে যে মহিলা ছিলেন তার সম্পর্কেও পুলিশ খোঁজখবর করছে। ঘটনার পরে দেখা গিয়েছে, মহিলার ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ ছিল। তিনি ভিতর থেকে কিছুই শোনেনি বলে দাবি করেছেন। রাতে বাড়িটিতে একাধিক লোকজন ঢুকল, দোতলার দু’জন খুন হল তার পরেও কোনও আওয়াজ বা শব্দ তিনি পাননি বলায় পুলিশের সন্দেহ বেড়েছে।

তদন্তকারীরা কয়েকজন জানান, শনিবার গভীর রাতে খুনের আগে অজয় এবং তাঁর স্ত্রী’র হাতে ব্যবসা সংক্রান্ত লক্ষাধিক টাকা এসেছিল। তা সংস্থার কয়েকজন জানতেন। কর্মীদের বেতন, বকেয়া মেটানোর জন্যই তা বাড়িতে রাখা হয়েছিল বলে মনে করা হচ্ছে। এই টাকার লোভের সঙ্গে ব্যক্তিগত কোনও আক্রোশ ছিল কিনা তা খুঁজে দেখা হচ্ছে। শিলিগুড়ি পুলিশের ডিসি (পশ্চিম) তরুণ হালদার বলেন, ‘‘আমরা বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখে তদন্ত এগোচ্ছি।’’

Advertisement

নিহত মিনার বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে রবিবারই খুনের মামলা রুজু হয়েছে। তবে এখনও পরিবারের কাউকে জেরার জন্য ডাকা হয়নি। ক্যাটারিং সংস্থায় কর্মী সরবরাহ করতেন অজয়। বিয়ের মরসুমে মিরিক, কার্শিয়াং, কালিম্পং থেকেও অনেকে এসে কাজ করতেন শিলিগুড়িতে। বিহার, অসমেও কর্মী পাঠাতেন অজয়।

বাগডোগরার অজয়ের ভাড়া নেওয়া বাড়িতে রয়ে গিয়েছেন ৩০ জন কর্মী। তাঁদের এখনই এলাকা ছাড়তে না করেছে পুলিশ। শনিবার রাতে কর্মীরা বাইরে কাজ করতে গিয়েছিল। দোতলায় একটি ঘরে ছিলেন অজয়, অন্য ঘরে মিনা ছেলেমেয়েদের নিয়ে। তিন তলার ঘরে ক্যাটারিং সংস্থার এক মহিলা কর্মী ছিল। ঘটনার পর রাত দেড়টা নাগাদ পরিবেশনের কাজ সেরে কর্মীরা ফিরে দম্পতির দেহ উদ্ধার করে। এ দিন বিকালে উত্তরপ্রদেশ থেকে অজয়ের দাদা প্রদীপ কুশওয়া বাগডোগরা এসে পৌঁছন। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশ দোষীদের গ্রেফতার করুক।’’ পরিবার জানিয়েছে, শিলিগুড়িতে আজ, মঙ্গলবার দম্পতির শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়ার কথা।

সকাল থেকেই মাকে খুঁজেছে নিহত দম্পতির বছর চারেকের ছেলে বিভান। আপাতত সে ওই পাড়াতেই মিনার এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের বাড়িতে রয়েছে। মেয়ে ভিনায়া রয়েছে তার দাদুর বাড়িতে। মিনার বাবা রায়কুমার রাই বলেন, ‘‘বড় মেয়ে মারা গিয়েছে কয়েক বছর আগে। এ বার ছোট মেয়েও এভাবে চলে গেল। ছেলেটা নিখোঁজ। আমি কীভাবে চলছি তা আমিই জানি।’’ মিনার ভাই তেগ বাহাদুর প্রায় চার বছর হল বাড়ি থেকে চলে গিয়েছে। মিনার মা দেওকুমারী দেবী অসুস্থ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন