ভাড়া গাড়িতে দেওয়া হল নিরাপত্তা

মোর্চার ডাকা বন্‌ধে পর্যটকদের এবং কাজেকর্মে বাসিন্দাদের পাহাড়ে যেতে যাতে সমস্যায় পড়তে না-হয় সে জন্য বুধবার নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন (এনজেপি) থেকেই তাঁদের সাহায্য করতে তৎপর ছিল পুলিশ প্রশাসন।

Advertisement

সৌমিত্র কুণ্ডু

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০২:৪৯
Share:

বন্‌ধের দিনও সচল পাহাড়। কার্শিয়াঙে স্বাভাবিক জনজীবন। নিজস্ব চিত্র।

মোর্চার ডাকা বন্‌ধে পর্যটকদের এবং কাজেকর্মে বাসিন্দাদের পাহাড়ে যেতে যাতে সমস্যায় পড়তে না-হয় সে জন্য বুধবার নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন (এনজেপি) থেকেই তাঁদের সাহায্য করতে তৎপর ছিল পুলিশ প্রশাসন। বন্‌ধের জন্য এ দিন বেসরকারি গাড়ির পরিষেবা কিছু কম থাকলেও নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনের প্রিপেড বুথ থেকে দার্জিলিং, কালিম্পং, মিরিক, গ্যাংটকের গাড়ি চলেছে। এমনকী ভাড়া করা গাড়ির ক্ষেত্রেও যারা নিরাপত্তা চেয়েছেন, তাঁদের পুলিশ ‘এসকর্ট’ দিয়ে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও করেছে। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন চত্বরে বাইরে থেকে আসা পাহাড়ের পর্যটকদের সহায়তা করতে ক্যাম্প করে আইএনটিটিইউসি। যাত্রীরা কোথায় যাবেন, কী ভাবে যেতে চান, জেনে তাঁদের সেই ব্যবস্থা করে দিতে সক্রিয় ছিলেন তাঁরা।

Advertisement

এ দিন কালিম্পং যাওয়ার জন্য পদাতিক এক্সপ্রেসে এনজেপি পৌঁছন শ্যামল চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গে স্ত্রী এবং দুই মেয়ে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘বন্‌ধ হচ্ছে বলে সব গাড়ি যেতে চাইছে ছিল না। তবে পুলিশ নিরাপত্তা ব্যবস্থা দিয়ে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে বলায় তাঁরা রাজি হন। দুই বছরের ছোট মেয়েকে নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। গোলমাল হলে যদি সমস্যায় পড়ি। তবে পুলিশ এবং স্থানীয় গাড়ির চালকেরা সাহায্য করতে এগিয়ে আসায় যাওয়ার সমস্যা হয়নি।’’ তিনি কালিম্পঙে ৫ দিন থেকে সেখান থেকে নামচিতে যাবেন।

ইজরায়েল থেকে পাহাড়ে ঘুরতে এসেছেন অমরি গ্যারিনি, ইংল্যান্ড থেকে ইনব্যাল অভনার, লায়লা জোনাস। বেসরকারি গাড়ি ‘বুকিং’ করতে কথা বলছিলেন। পাহাড়ে বন্‌ধ হচ্ছে শুনে তাঁরা ঘবড়ে যান। তবে সরকারি বাসের ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানালে তাঁরা ওই গাড়িতে যেতে সম্মত হন। পুলিশ এবং তৃণমূলের সহায়তা শিবিরের লোকজনেরা তাদের উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা (এনবিএসটিসি)-র বাসে তুলে দেন। তাঁরা দার্জিলিং যাবেন। বিদেশি ওই পর্যটকেরা বলেন, ‘‘সরকারি বাসে নিরাপদে আমাদের পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। পুলিশের তরফেও সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। পর্যটন মরসুমে এ ধরনের বন্‌ধ হলে তো অনেকের ক্ষতি, দুর্ভোগে পড়তে হবে। আন্দোলনকারীদের তা বোঝা উচিত।’’ বন্‌ধের কথা শুনে সমস্যায় পড়েছিলেন আরও অনেকে। কলকাতার বাসিন্দা তন্ময় চক্রবর্তীর হস্টেলের ব্যবসা রযেছে দার্জিলিঙে। দার্জিলিঙের বাসিন্দা পলজোর ভুটিয়া ইস্টার্ন রেলে চাকরি করেন। ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছেন। ঝাড়গ্রাম থেকে পরিবারকে নিয়ে দার্জিলিঙে ঘুরতে এসেছেন উত্তম কর। তাঁরা সকলেই এ দিন সরকারি বাসে এনজেপি থেকে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। বিভিন্ন পর্যটন সংস্থাগুলির সঙ্গেও পুলিশ প্রশাসনের তরফে যোগাযোগ করে তাদের কোনও পর্যটকদের সাহায্য দরকার কি না তা নিয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হয়েছে। ইস্টার্ন হিমালয়া ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘‘পুলিশ প্রশাসনের তরফে সাহায্য মেলায় এ দিন বাইরে থেকে আসা পর্যটকেরাও বন্‌ধের মধ্যেও ভাল ভাবে পাহাড়ে যেতে পেরেছেন।’’

Advertisement

দার্জিলিং স্টেশনে টয় ট্রেনের পরিষেবা ছিল স্বাভাবিক। বিদেশি পর্যটকেরা ট্রেনে ওঠার অপেক্ষায়।

প্রিপেড বুথ সূত্রেই জানা গিয়েছে, এ দিন বন্‌ধের জেরে পাহাড়ে যাওয়ার যাত্রী কম ছিল।

তবে যাঁরা যেতে চেয়েছেন তাঁদের সুষ্ঠু ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। বেলা একটা পর্যন্ত প্রিপেড বুথ থেকে অন্তত ৩৫ টি ভাড়া গাড়ি সিকিম-সহ দার্জিলিং, কালিম্পঙের মতো বিভিন্ন জায়গায় যাত্রীদের নিয়ে গিয়েছে। স্টেশন চত্বরে প্রিপেড ছাড়াও আরও অন্তত ৫৫টি গাড়ি সকাল থেকে ওই সময়ের মধ্যে পাহাড়ে যাত্রী নিয়ে রওনা হয়েছে। সিকিম ছাড়া পর্যটনের মরসুমে প্রতিদিন অন্তত দেড়শো গাড়ি পাহাড়ে যায়। এ ধরনের বন্‌ধ হলে তাই ক্ষতি হবে বলে জানান চালকদের অনেকেই। যাত্রী সহায়তা শিবির থেকেই জানানো হয়, কালিম্পঙে থাকলেও এনজেপি’র পরিস্থিতি নিয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন পর্যটন মন্ত্রী। উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয়পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে এ দিন দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াঙে অন্তত ৭ টি গাড়ি অতিরিক্ত চালানো হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন