নয়া জেলা কালিম্পং, রডোডেনড্রন ফোটেনি এখনও, তবু পাহাড়ে বসন্ত

রডোডেনড্রন ফুটতে এখনও একটু দেরি আছে। তাতে কী! কালিম্পঙে যেন বসন্তের আমেজ। পাহাড়ি প্রথা মেনে ফুলপাতা দিয়ে একের পর এক গেট সাজানো। চড়াই-উতরাইয়ে পাহাড়ের গায়ে, পাইনের ডালে ছবি-ফ্লেক্সের ছড়াছড়ি।

Advertisement

কিশোর সাহা

কালিম্পং শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:০৭
Share:

কাঞ্চনজঙ্ঘা কালিম্পং থেকে।—ফাইল চিত্র।

রডোডেনড্রন ফুটতে এখনও একটু দেরি আছে। তাতে কী! কালিম্পঙে যেন বসন্তের আমেজ।

Advertisement

পাহাড়ি প্রথা মেনে ফুলপাতা দিয়ে একের পর এক গেট সাজানো। চড়াই-উতরাইয়ে পাহাড়ের গায়ে, পাইনের ডালে ছবি-ফ্লেক্সের ছড়াছড়ি। মিষ্টি হাসির পাহাড়ি শিশু কোলে হাসছেন মুখমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ, সোমবার তিনি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় চার হাজার একশো ফুট উঁচুতে এই পাহাড়ি শহরে আসছেন। পাহাড়ও পাবে নতুন জেলা। স্বাধীনতার পরে এই প্রথম।

তবে এই উৎসবের অন্তরালে রয়েছে উত্তেজনার চোরা স্রোতও।

Advertisement

গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নেতারা বাতাসে ভাসিয়ে দিয়েছেন, একটা সময়ে তাঁরাই কালিম্পং জেলার দাবি তুলেছিলেন। কিন্তু মুশকিল হল, কালিম্পঙের আম জনতা সে সবে আমল দিচ্ছেন না। বরং, গা সিরসির করে দেওয়া ঠান্ডা বাতাস উপেক্ষা করে সকাল থেকে সন্ধেয় দলে দলে নামছেন রাস্তায়। কেউ বাড়ির বাগানের গ্ল্যাডিওলাস তুলে দিচ্ছেন অভ্যর্থনা কমিটির হাতে। কেউ আবার নিজের গাড়ি, মোটরবাইক নিয়ে মিছিলে যোগ দিচ্ছেন স্বেচ্ছায়।

এমনকী, কালিম্পঙে মোর্চার একাধিক কট্টর কর্মীও ভাবছেন, এ হল কালিম্পঙের ‘ঘুরে দাঁড়ানো’র উৎসব। মোর্চার এক নেতাও বললেন, ‘‘এত দিন সব নজরের নিউক্লিয়াস ছিল দার্জিলিং। কালিম্পং কিছুটা বঞ্চিত ছিল। নতুন জেলা হলে অর্থনীতি মজবুত হবে বলে ভাবছেন সবাই। তাই হয়তো খুশি মনেই সকলে রাস্তায় নামছেন। তবে কতটা কী হবে, তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’’


আসছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁকে স্বাগত জানাতে কালিম্পঙের রাস্তায় ফ্লেক্স।—নিজস্ব চিত্র

এক সময়ে ভারত থেকে চিন বাণিজ্যের অন্যতম ‘রুট’ ছিল জালেপ লা। তিব্বতের দিকে যাওয়া এই রাস্তা ধরে রেশম থেকে শুরু করে বহু দামি পণ্যের আমদানি-রফতানি হতো। সেই পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই অর্থনীতিতেও ভাটাঁর টান লাগে। পাহাড়ি এই শহরের বাসিন্দাদের দাবি, বাণিজ্যপথ বন্ধ হয়ে গেলেও আদা এবং গ্লাডিওলাসের হাত ধরেই বদলে যেত পারত অর্থনীতি। পুরো দেশে যে পরিমাণ গ্লাডিওলাস ফুল বিক্রি হয় তার আশিভাগই কালিম্পং থেকে জোগান হয়। আদা-রেশম-অর্কিডের জন্য বিখ্যাত হলেও কালিম্পঙে কোনও কিছুরই অনুসারী শিল্প তৈরি হয়নি। যাকে ‘বঞ্চনা’ বলেই মনে করেন নেতারা। পোড়খাওয়া মোর্চা নেতা রোশন গিরিও যে বঞ্চনার অভিযোগ উড়িয়ে দিতে পারেননি।

মোর্চার সাধারণ সম্পাদক ছাড়াও রোশন জিটিএ-র সভাসদও। গুরুঙ্গের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এই নেতা বলেন, ‘‘কালিম্পঙের ভৌগোলিক সীমানা অনেকটাই বড়। সে কারণে প্রশাসনিক কাজকর্মে অসুবিধে বরাবরই হতো। তাকেই অনেকে বঞ্চনা মনে করেন। নতুন জেলা হলে উন্নয়নে অনেক সুবিধে হওয়ার কথা। অবশ্য যদি বিভাজনের রাজনীতির উপরে জোর দেওয়া না হয়।’’ নতুন জেলা ঘোষণার সভায় যাবেন না গুরুঙ্গ। তবে জিটিএ-র প্রতিনিধি থাকবেন। কারণ, জেলা ঘোষণা নিয়ে শহরবাসীর উৎসবের মেজাজ টের পেয়েছেন গুরুঙ্গরাও। তৃণমূল নেতা বিন্নি শর্মা তো প্রতিটি মোড়ে নিয়ম করে বলছেন, ‘‘জেলা ঘোষণার বিরুদ্ধে যাঁরা, তাঁরা কালিম্পঙের ভাল চান না। আগামী দিনে সব কিছুরই জবাব দেবেন পাহাড়বাসী।’’

সব ঠিক থাকলে এপ্রিলেই পাহাড়ে পঞ্চায়েত কিংবা পুরভোটে হতে পারে। তাই জেলা ঘোষণা নিয়ে আপাতত বিরোধিতায় সুর চড়ানোর রাস্তায় হাঁটছে না মোর্চা। রেশম-কৃষি-ফুল চাষ যে কোনও কিছুর বিপণন কেন্দ্র তৈরি হলে একল্পে অনেক কর্মসংস্থান হতে পারে বলে আশায় বাসিন্দারা।

জেলা ঘোষণার পরে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বোর্ডের সদস্যদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক রয়েছে কালিম্পঙে। থাকবেন নতুন জেলার প্রশাসনিক কর্তারাও। সে বৈঠকেও উন্নয়নের একগুচ্ছ পরিকল্পনা মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করতে পারেন বলে আশা করছেন হরকাবাহাদুর ছেত্রী। কালিম্পঙের প্রাক্তন বিধায়ক হরকাবাহাদুর মোর্চা ছেড়ে জন আন্দোলন পার্টি গড়ার পরে নতুন জেলা ঘোষণার দাবিতে টানা আন্দোলন করেছিলেন। তার জেরে গত ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে মুখ্যমন্ত্রী কালিম্পংকে জেলা ঘোষণার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। হরাকাবাহাদুর বললেন, ‘‘কালিম্পং জেলা জিন্দাবাদ স্লোগানে দলমত নির্বিশেষে সকলে গলা মেলাচ্ছেন। মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন