রায়গঞ্জ হাসপাতালে আহত জামিরুল হক। —নিজস্ব চিত্র।
মাথায় হেলমেট নেই। তাই থামতে বলেছিলেন কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ। তাঁর নজর এড়িয়ে দ্রুত পালাতে গিয়েই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনায় জখম হলেন হেলমেটহীন এক বাইক চালক। জখম হয় বাইকে থাকা দুই কিশোরীও। তাদের কারও মাথাতেই হেলমেট ছিল না। শুক্রবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে রায়গঞ্জ থানার কুলিক পক্ষিনিবাস এলাকার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে। রায়গঞ্জ থানার আইসি গৌতম চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওঁদের কারও হেলমেট তো ছিলই না, উপরন্তু ট্রাফিক আইন অমান্য করে তাঁরা একই বাইকে তিনজনে চেপেছিলেন। চালকের বিরুদ্ধে ট্রাফিক আইনে মামলা দায়ের করা হচ্ছে।’’
গত কয়েকদিন ধরেই রায়গঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ ও সাধারণ পুলিশকর্মীরা হেলমেটহীন মোটরবাইক চালকদের বাইক থামিয়ে তাঁদের হেলমেট পরার জন্য সতর্ক করছেন। সেইমতো এ দিনও সকাল থেকে পক্ষিনিবাস সংলগ্ন এলাকার জাতীয় সড়কে একদল ট্রাফিক পুলিশ হেলমেটহীন বাইক চালকদের বাইক থামিয়ে সতর্ক করছিলেন। বেলা ১১টা নাগাদ জামিরুল হক নামে ওই বাসিন্দা তাঁর মাসতুতো বোন হাবিবা ও মাসতুতো দাদার শ্যালিকা কুসমিনকে নিয়ে বাইকে চেপে রায়গঞ্জে কেনাকাটা করতে যাচ্ছিলেন। জামিরুলের মাথায় হেলমেট দেখতে না পেয়ে তাঁকে হাত দেখিয়ে থামতে বলেন পুলিশকর্মীরা। বেগতিক বুঝে জামিরুল বাইকের গতি বাড়িয়ে পালানোর চেষ্টা করতেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আচমকা বাইকটি জাতীয় সড়কের মাঝামাঝি জায়গায় চলে আসে। সেই সময় মালদহগামী একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পেরে পিছন থেকে বাইকটিকে ধাক্কা মারে। বাইক-সহ জামিরুল, হাবিবা ও কুসমিন রাস্তার ধারে ছিটকে পড়েন। পুলিশের হস্তক্ষেপে এরপর বাসিন্দারা জখমদের হাসপাতালে নিয়ে যান। প্রাথমিক চিকিত্সার পর কুসমিনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। জামিরুল ও হাবিবার মাথা ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত লাগায় তাঁদেরকে ভর্তি নিয়ে চিকিত্সা শুরু করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পুলিশ ট্রাকটিকে আটক করলেও সেটির চালক পালিয়ে গিয়েছেন।
পেশায় রাজমিস্ত্রী বছর বাইশের জামিরুলের বাড়ি রায়গঞ্জের দীপনগর উত্তর গোপালপাড়া এলাকায়। এ দিন হাসপাতালের বেডে শুয়ে জামিরুল অবশ্য দাবি করেন, মোটরবাইকের গতি বেশি থাকায় তিনি ট্রাফিক পুলিশের সামনে বাইকটিকে থামাতে পারেননি। তবে হেলমেট না থাকার শিক্ষা পেয়ে গিয়েছেন বলে নিজেই বলছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘হেলমেটের গুরুত্ব কতটা, তা দুর্ঘটনার পর বুঝতে পারলাম। বরাতজোরে আমরা প্রাণে বেঁচে গিয়েছি! এরপর থেকে হেলমেট ছাড়া আর বাইক চালাব না। বাইকে হেলমেট-সহ এক আরোহী ছাড়া অতিরিক্ত কাউকে তুলবও না।’’