উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে ফের ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ

এ মাসের গোড়ায় ছাত্রী-আবাস থেকে উদ্ধার হয়েছিল এক তরুণীর ঝুলন্ত দেহ। এ বারে ক্যাম্পাসের মধ্যে আর এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করা হয়েছে বলে উঠল অভিযোগ। পনেরো দিনে দু’টি ঘটনায় উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় বুঝিয়ে দিল, তারা রয়েছে সেই তিমিরেই।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:১৯
Share:

বিজ্ঞপ্তিই সার। মানা হয় না কোনও নিয়ম। নিজস্ব চিত্র

এ মাসের গোড়ায় ছাত্রী-আবাস থেকে উদ্ধার হয়েছিল এক তরুণীর ঝুলন্ত দেহ। এ বারে ক্যাম্পাসের মধ্যে আর এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানি করা হয়েছে বলে উঠল অভিযোগ। পনেরো দিনে দু’টি ঘটনায় উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় বুঝিয়ে দিল, তারা রয়েছে সেই তিমিরেই।

Advertisement

গত ৩ ফেব্রুয়ারি ‘ওয়াচ অ্যান্ড ওয়ার্ডের’ কাছে ক্যাম্পাস লাগোয়া একটি মেস থেকে এক তরুণীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রেমে প্রত্যাখ্যাত এক যুবক তাঁকে উত্যক্ত করছিল বলেও অভিযোগ করে পরিবারের লোকেরা। পুলিশ এখনও তাকে ধরতে পারেনি। তার মধ্যেই ঘটল শুক্রবার রাতের ঘটনা।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রভানু মঞ্চের পিছনের দিকের রাস্তা দিয়ে আড়াই নম্বর গেটে যাচ্ছিলেন ওই ছাত্রী। ওই অংশে জলা জায়গা, জঙ্গল রয়েছে। আলোও নেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের অংশ থেকে অল্প সময়ে ওই হাঁটা পথে আড়াই নম্বর গেটে সহজে যাওয়া যায় বলে অনেকে রাস্তাটি ব্যবহার করেন। ছাত্রীটির সঙ্গে এক বান্ধবীও ছিলেন। হঠাৎই অপরিচিত এক যুবক তাঁদের সামনে চলে আসে। অন্ধকার থাকায় তাকে ভাল করে দেখা যায়নি। আচমকাই সে কাছে এসে ছাত্রীটির হাত ধরে টানাটানি করতে থাকে। ছাত্রীটি নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করেন। একই সঙ্গে চেঁচিয়েও ওঠেন। সেই চিৎকারে অভিযুক্ত লাগোয়া জঙ্গলে গা ঢাকা দেয়।

Advertisement

ছাত্রীটির ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, তিনি এতটাই আতঙ্কিত ছিলেন যে, রাতে পুলিশে অভিযোগ জানাতে পারেননি। শনিবারও মাটিগাড়া থানায় যেতে সন্ধ্যা হয়ে যায়। এর আগেই পড়ুয়াদের নিরাপত্তার দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। ওয়াচ অ্যান্ড ওয়ার্ড বিভাগে গিয়ে নিরাপত্তার দাবিতে বিক্ষোভ দেখান ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক ও তাঁর সদস্যরা। কেন ক্যাম্পাসে একের পর এক এ ধরনের ঘটনা ঘটবে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। খবর পেয়ে উপাচার্য সোমনাথ ঘোষ গিয়ে পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। ক্যাম্পাসে পুলিশি টহলদারিও শুরু হয়েছে।

শুধু এ দু’টি ঘটনাই নয়, গত অগস্টেও অঙ্ক বিভাগের কাছে এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে। তখন ওই এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীরা কেউ ছিলেন না বলে অভিযোগ। সেই কর্মীদের শো-কজ করা হলেও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। বস্তুত, নিরাপত্তা কর্মীদের কাজের সময়ে পাওয়া যায় না বলেও প্রায়ই অভিযোগ আসে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় দিয়ে অহরহ বাইরের লোকজন যাতায়াত করে।

বিশেষ করে রবীন্দ্রভানু মঞ্চের পিছনে যেখানে শুক্রবার ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে না আছে আলো। না থাকে টহলদারি। তা ছাড়া ক্যাম্পাসের পিছনে অংশে যে মাঠ রয়েছে, সেখানেও অনেকটা জায়গা অন্ধকার। সেখানে মদ্যপান থেকে নানা ধরনের আপত্তিমূলক কাজকর্ম চলে বলেও শিক্ষক-পড়ুয়া-কর্মীদের অনেকেই অভিযোগ তুলেছেন। তার পরেও হেলদোল নেই কর্তৃপক্ষের। পড়ুয়ারা বলছেন, দেখা যাক, শুক্রবারের ঘটনার পরে তাদের টনক নড়ে কি না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন