চলতি মাসে দ্বিতীয় বার হাতির হামলার মুখে পড়ল ডুয়ার্সের বড়দিঘি চা বাগান। এবার এক রাতেই দোকান সহ ১১টি ঘর ভেঙে দিল বুনো দাঁতাল। সেই সঙ্গে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের রান্নাঘর এবং একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের ঘরও গুড়িয়ে দিয়েছে দাঁতালটি।
সোমবার গভীর রাতে ডুয়ার্সের গরুমারা জাতীয় উদ্যান লাগোয়া বড়দিঘী চা বাগানে হামলা চালায় বুনো দাঁতালটি। প্রবল বৃষ্টি চলছিল তখন। বৃষ্টির মধ্যেই জঙ্গল থেকে বেড়িয়ে বাগানে ঢুকে পড়ে দাঁতালটি। জঙ্গল আর চা বাগান লাগোয়া বড়দিঘী বনবস্তিতে ঢুকে বাড়িঘরের পাশাপাশি বড়দিঘী বনবস্তি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মিড ডে মিল তৈরির রান্নাঘর ভেঙে দেয়। এরপর বড়দিঘী চা বাগানের রঘুনাথ লাইন, ধুপি লাইন, তাঁতি লাইনের মত শ্রমিক মহল্লায় ঢুকে পড়ে দাঁতাল। রঘুনাথ লাইনের বিভাস দর্জির মুদি দোকান গুড়িয়ে দেয় দাঁতালটি। দোকানে মজুত জিনিস তছনছ করে চাল, ডাল বের করে খেয়েও ফেলে। বিভাস দর্জির দোকানের পাশেই সুরেশ ঠাকুরের সেলুন। সেলুনটিও গুড়িয়ে দেয়। মোট তিনটি দোকান ঘর ভাঙার পাশাপাশি আটটি শ্রমিক আবাসেও এ দিন ভাঙচুর চালায় হাতিটি।
গত ৯ জুলাই গভীর রাতে বড়দিঘী চা বাগানের রঘুনাথ লাইনে হামলা চালিয়েছিল দাঁতাল। সেসময় ৭টি শ্রমিক আবাস গুড়িয়ে দিয়েছিল সেটি। বাড়ি ভেঙে চাপা পড়ে গুরুতর জখম হয়েছিলেন এক মহিলা চা শ্রমিক। বড়দিঘী বাগানে দশ দিনের ব্যবধানে ফের হামলায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন শ্রমিকেরা। বাগানের বাসিন্দা ডিম্বু খেড়িয়া, কালো খেড়িয়া, রাম মুন্ডারা বলেন, ‘‘হাতির হামলা নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাত হলেই চোখে ঘুম উধাও হয়ে যায়। বৃষ্টির রাতে হাতি কখন বাড়ির কাছে চলে আসছে তা ঠাহর করাও সমস্যা হয়ে যাচ্ছে।’’ বনদফতরের ওপর ক্ষোভ বাড়ছে বড়দিঘী চা বাগান কর্তৃপক্ষেরও। অভিযোগ, বাগান লাগোয়া এলাকাতে জলপাইগুড়ি বনবিভাগের বড়দিঘী বিট অফিস থাকলেও তাদের কাছে হাতি তাড়াবার জন্যে নিজস্ব গাড়ি পর্যন্ত নেই। খুনিয়া বন্যপ্রাণী স্কোয়াড ১৫ কিলোমিটার দূরে রয়েছে। তাদের আসতে আসতেই যা ক্ষতি হবার হয়ে যায়। গত রাতে তাদের দেখাও মেলে নি বলে জানান বাগান কর্তৃপক্ষ। এ দিকে রাতে প্রচন্ড বৃষ্টি থাকার বন্যপ্রাণী স্কোয়াডের কর্মীরা বাগানে ঢুকতে পারেন নি বলে বনকর্মীদের তরফে জানানো হয়েছে। বড়দিঘী চা বাগানের ম্যানেজার ইন্দ্রজিত সিংহ চহ্বাণ বলেন, ‘‘হাতির হামলা ঠেকাতে আমরা বনদফতরের ওপর ভরসা না করে নিজেরাই বাগানে রাতে টহলদারি শুরু করেছি। ১০ জুলাই থেকে পাঁচ শ্রমিককে ট্রাক্টরে করে রাত পাহারার কাজে লাগানো হয়েছে। কিন্তু গত রাতে এতই বেশি বৃষ্টি ছিল যে রাতপাহারা দেওয়া যায় নি। আর সেই সুযোগেই বিপত্তি ঘটে গিয়েছে।’’