ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা আসলে ফস্কা গেরো

রাজবাড়ি সূত্রের খবর, নিরাপত্তার জন্য পুরাতত্ত্ব বিভাগের কর্মীদের পাশাপাশি একটি বেসরকারি সংস্থার সশস্ত্র রক্ষীরাও আছেন প্রাসাদের দেখভালে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৭ ০১:২৫
Share:

প্রশ্ন: চুরিতে প্রশ্নের মুখে রাজবাড়ির নিরাপত্তা । নিজস্ব চিত্র

নামেই ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা বলয়, বাস্তবে ফস্কা গেরো। কোচবিহারের রাজবাড়িতে ফের চুরির ঘটনায় ওই অভিযোগই সামনে এল। রাজবাড়ি সূত্রের খবর, নিরাপত্তার জন্য পুরাতত্ত্ব বিভাগের কর্মীদের পাশাপাশি একটি বেসরকারি সংস্থার সশস্ত্র রক্ষীরাও আছেন প্রাসাদের দেখভালে। সেই সঙ্গে রয়েছে রাজ্য পুলিশের ক্যাম্প। তারপরেও কী ভাবে পর পর চুরির ঘটনা ঘটছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

Advertisement

ওই প্রসঙ্গেই নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের সমন্বয়ের খামতির অভিযোগও উঠেছে। কোচবিহারের পুলিশ সুপার ভোলানাথ পাণ্ডে বলেন, “সমন্বয়ের কোনও অভাব রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সবাইকে নিয়ে একটি বৈঠক করা হবে। কোনও খামতি থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তিনি জানান, খুব শীঘ্রই ওই বৈঠকের দিন চূড়ান্ত করা হবে। পুরো বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।

পুরাতত্ত্ব বিভাগ সূত্রের খবর, রাজবাড়ির নিরাপত্তার দায়িত্বে পুরাতত্ত্ব বিভাগের ১৮ জন কর্মী রয়েছেন। এ ছাড়াও রয়েছেন বেসরকারি সংস্থার ৪ জন সশস্ত্র নিরাপত্তা রক্ষী। ক্যাম্পে পুলিশকর্মী থাকেন অন্তত ৫ জন। পালা করে পুরাতত্ত্ব বিভাগ ও বেসরকারি সংস্থার রক্ষীরা নজরদারির দায়িত্ব সামলান। পুলিশকর্মীরা থাকেন প্রাসাদের পিছনের দিকের একটি ঘরে। সেখানে কর্মী সংখ্যা প্রায় একই রকম থাকে। অভিযোগ, ওই সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়। কারণ রাজবাড়িতে ঘরের সংখ্যা ৬৪টি। তার উপর সর্বত্র সিসিটিভি নেই। যা আছে তাও মাঝেমধ্যে বিকল থাকে। গায়ত্রীদেবীর ছবিটি যেখানে ছিল, সেখানে সিসিটিভি ছিল না। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য প্রাসাদ খোলা থাকার কথা থাকলেও পরে সিঁড়ির ঘরের নজরদারি ঠিকঠাক থাকে না। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের সমন্বয় থাকলে এমন পরিস্থিতি তৈরি হত না। পুরাতত্ত্ব বিভাগের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক কর্মী জানান, কর্মীদের যাতায়াতের জন্য সিঁড়ির ঘরের দরজা খোলা রাখা হয়েছিল। ওই সুযোগ নিয়ে ছবি চুরির ঘটনা হবে সেটা তারা কেউ ভাবেননি।

Advertisement

বাসিন্দাদের অবশ্য অভিযোগ, নিরাপত্তা নিয়ে এমন ঢিলেঢালা অবস্থা দীর্ঘদিনের সমস্যা। ঘটনার পরে দায় এড়াতে নানা ব্যাখ্যা, আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু আখেরে কাজের কাজ কিছু হয় না। কোচবিহার হেরিটেজ সোসাইটির সম্পাদক অরূপজ্যোতি মজুমদার বলেন, “২০১৬ সালেও ওই রাজবাড়ির বিলিয়ার্ড টেবিলে রাখা একটি বল চুরির ঘটনা ঘটেছিল। ওই বল রেপ্লিকা ছিল। পরে রাজবাড়ির মাঠ থেকে তা উদ্ধার হয়েছিল। তখনও নিরাপত্তা নিয়ে নানা আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। বাস্তবে যা ছিল তাই রয়ে গিয়েছে।” গোটা ঘটনায় ১৮৮৭ সালে মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণের আমলে তৈরি ওই প্রাসাদে রাখা বিভিন্ন প্রাচীন সামগ্রী নিয়ে উদ্বেগ আরও বেড়েছে। রাজবাড়ি সূত্রেই জানা গিয়েছে, মিউজিয়ামে প্রাচীন মূর্তি, মুদ্রা তৈরির সামগ্রী, বিলিয়ার্ড টেবিল, রাজ আমলের ব্যবহৃত শিলমোহর, প্রাচীন মুদ্রা, পদক, ভূটান যুদ্ধের স্মারক, দুষ্প্রাপ্য ছবি,রাজাদের ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্রের সম্ভার প্রাসাদে রয়েছে। যদিও অনেক কিছু প্রকাশ্যে
আনা হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন