Jalpaiguri

রাতের রাস্তায় তেষ্টা! আছে চা বুড়ো

সারা রাত কাপের পর কাপ চা বানাতে থাকেন ৬০ ছুঁইছুঁই এক ব্যক্তি। মাথা জুড়ে টাক। গালভর্তি সাদা দাড়ি।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০২০ ০৬:৩৪
Share:

প্রতীকী ছবি।

এ এক আজব দোকান! তিন বছর ধরে নাকি এ দোকান এক ঘণ্টার জন্যও বন্ধ হয়নি! টিন-বেড়ার দোকান থেকে দুপুরে ভেসে আসে খুরমা ভাজার গন্ধ, নিশুতি রাতে শোনা যায় চায়ে চিনি গোলার চামচের টুংটাং। সারা রাত কাপের পর কাপ চা বানাতে থাকেন ৬০ ছুঁইছুঁই এক ব্যক্তি। মাথা জুড়ে টাক। গালভর্তি সাদা দাড়ি। কথা বেশি বলেন না। মুখে সারাক্ষণ মুচকি হাসি। পথচলতি গাড়ি চালকেরা তাঁকে ডাকেন, চা-বুড়ো।

Advertisement

অল্প বয়সীদের কাছে তিনি চা-দাদু। অনেকে বলেন, তিন বছরে কখনও চা বুড়োকে ঘুমোতে দেখেননি। জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া জাতীয় সড়ক দিয়ে গভীর রাতে যাতায়াত করা পণ্যবাহী ট্রাক চালক থেকে পুলিশকর্মী, অ্যাম্বুল্যান্স চালক সকলেই জানেন নিশুতি রাতে একটি দোকানই খোলা আছে, তা হল চা বুড়োর দোকান।

মঙ্গলবার দুপুরে চা খেতে আসেন শিলিগুড়ির দার্জিলিং মোড়ের বাসিন্দা রঞ্জিত বর্মণ। পিকআপ ভ্যানের চালক রঞ্জিত বললেন, “শিলিগুড়ি থেকে মাল নিয়ে প্রায়ই আমি ডুয়ার্সে যাই। জাতীয় সড়কের দোকানে এই একটি দোকানই খোলা থাকে। রাত একটা হোক বা দুটো তিনটে যখনই গোশালা দিয়ে গিয়েছি, এই দোকান বন্ধ দেখিনি।”

Advertisement

চা বুড়ো-র নাম সুধীর রায়। বাড়ি গোশালা মোড় থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে বাহাদুরে। কিন্তু তিন বছর ধরে দোকানেই থাকেন। খাওয়া-দাওয়া দোকানে। দোকানের ভিতরে জামা-কাপড় রাখা আছে। দোকানের মালিক সাধনা সরকার বলেন, “তিন বছর আগে আমার স্বামী মারা যান। তারপর থেকে দোকানের দেখাশোনা সুধীরবাবুই করেন। রাতে দোকান খোলাটা ওঁর ইচ্ছেতেই শুরু হয়েছে।”

একসময়ে ভাতের হোটেল ছিল। এখন শুধু চা-খুরমা বিক্রি হয়। দিনে তেমন বিক্রিবাট্টা নেই। সুধীরবাবু বললেন, “বিক্রি তো রাতে। একেক রাতে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকার বিক্রি হয়।” শুধু বিক্রির টানেই সারা রাত দোকান খোলা রাখেন? একগাল সাদা দাড়ি মুখ নিয়ে হাসেন সুধীরবাবু। তিনি বলেন, “বিয়ে-থা করিনি। কোনও পিছুটান নেই। তাই দোকান নিয়েই থাকি।” চা দাদু বলে তাকে ডাকা হয় তাও জানেন তিনি। হাসিমুখেই বলেন, “কেউ কেউ চা-কাকাও বলে ডাকে।” জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার এক পুলিশ অফিসারের কথায়, “শীতের রাতে চা খেয়ে শরীর উষ্ণ রাখতে হয়। ওই দোকানই ভরসা আমাদের।’’ রাতের বেলায় টানা স্টিয়ারিঙে থেকে চোখ বুজে আসে চালকদেরও। গোশালা মোড়ের চায়ের দোকানে তাঁদের চেনা।

রাতে চা বানান, দুপুরে খুরমা ভাজেন। তাহলে ঘুমোন কখন? সুধীরবাবু বলেন, “দিনে রাতে যখনই সময় পাই একটু একটু করে ঘুমিয়ে নিই। বেশি ঘুম আমার ধাতে নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন