বামেদের আপ্যায়নে ত্রুটির অভিযোগ কাঞ্চনজঙ্ঘায়

উইলিস প্লাজার পা থেকে বলটা তির বেগে ছুটে যেতেই হাত মুঠো করলেন মন্ত্রী। কয়েকজন দর্শক চেয়ার ছেড়ে উত্তেজনায় উঠে দাঁড়িয়েছেন। হাত মুঠো করে বা পায়ের ওপর ডান পা তুলে দিয়ে কোনও ভাবে উত্তেজনা সামলে নিলেন মন্ত্রী।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০২:৩৬
Share:

মাঠে সেলফি তুলছেন ভাইচুং। নিজস্ব চিত্র।

উইলিস প্লাজার পা থেকে বলটা তির বেগে ছুটে যেতেই হাত মুঠো করলেন মন্ত্রী। কয়েকজন দর্শক চেয়ার ছেড়ে উত্তেজনায় উঠে দাঁড়িয়েছেন। হাত মুঠো করে বা পায়ের ওপর ডান পা তুলে দিয়ে কোনও ভাবে উত্তেজনা সামলে নিলেন মন্ত্রী। কাতসুমি বল নিয়ে লাল-হলুদের পেনাল্টিবক্সে ঢুকে পড়েছে দেখে তো শিশুর মতো দু’হাত মাথার ওপরে তুলে ফেলেছিলেন সাংসদ। বেশ কয়েকবার তো গোল-গোল বলে চেঁচিয়েই উঠলেন বিধায়ক। কখনও গা ভাসিয়ে দিলেন কখনও বা আশেপাশ দেখে নিজেকে সামলে নিলেন ভিভিআইপিরা।

Advertisement

যদিও খেলা শেষ হতেই দানা বেধেছে রাজনীতির বিতর্ক। পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব এবং ভারতীয় ফুটবল দলের প্রাক্তন অধিনায়ক তথা তৃণমূলের দার্জিলিং জেলার কোর কমিটির সদস্য ভাইচুং ভুটিয়াকে আপ্যায়ন করে ভিআইপি বক্সে বসানো হলেও, বাম সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্কর মালাকারকে অর্ভ্যথনা জানানো হয়নি বলে অভিযোগ। ম্যাচের আমন্ত্রণ না পাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন শিলিগুড়ির বাম মেয়রও।

ম্যাচ শুরুর আধঘণ্টারও বেশি আগে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে চলে এসেছিলেন রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব। ছোটবেলা থেকেই ইস্টবেঙ্গল সমর্থক তিনি। কাঞ্চনজঙ্গা স্টেডিয়াম ইস্টবেঙ্গলের ‘ঘরের মাঠ’। নিজের শহরে নিজের ক্লাবের খেলা দেখার সুযোগ ছাড়তে রাজি নন। তাই গত শনিবারই শিলিগুড়িতে ফেরেন তিনি। ম্যাচের কিক-অফ থেকে দেখতে চেয়েছিলেন বলে শুরুর আগেই হাজির হয়েছিল। মন্ত্রী স্টেডিয়ামে থাকায় তাঁকে দিয়েই ম্যাচের সূচনা করানো হয়। ভিআইপি বক্সে তিন ছেলে-মেয়েকে নিয়ে ছিলেন ভাইচুং ভূটিয়াও। প্রাক্তন ভারতীয় দলের অধিনায়ক ভাইচুং এখনও ইস্টবেঙ্গলের ঘরের ছেলে। লাল-হলুদের আক্রম দেখে ভাইচুং স্টেডিয়ামের গর্জনের সঙ্গে গলা মিলিয়েছেন। ভাইচুঙের ছোট্ট ছেলে জল খাবে বলে বাইরে যাওয়ার বায়না করেছিল। সে সময় মেহেতাব সবুজ-মেরুনের গোলের প্রায় কাছাকাছি। উত্তজেনা চেপে রাখতে না পেরে ভাইচুং ছেলেকে বলেছেন, ‘‘পিপাসা একটু চেপে রাখ, প্লিজ।’’

Advertisement

এ দিনের খেলা দেখার জন্যই শিলিগুড়িতে এসেছিলেন সিপিএমের রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি অবশ্য মোহনবাগান সমর্থক। গালে সবুজ-মেরুন রং আঁকা কাউকে দেখলেই হাত নেড়েছেন ঋতব্রত। পাশের স্টেডিয়ামে সবুজ এবং মেরুন রঙের রংমশাল জ্বালানো দেখে মোবাইল বের করে ছবি তুলেছেন।

বিধায়ক তথা দার্জিলিং জেলা কংগ্রেসের (সমতল) সভাপতি শঙ্কর মালাকার ঘোষিত ইস্টবেঙ্গল সমর্থক। গত বছরেও ডার্বিতে স্টেডিয়ামে ছিলেন তিনি। সে বার মেয়র অশোকবাবু এবং শঙ্করবাবু একসঙ্গে মাঠে এসেছিলেন। সে বারও অসৌজন্যের অভিযোগ তুলে মাঠ ছেড়েছিলেন দু’জনে। এ বার তাঁকে আমন্ত্রণই জানানো হয়নি বলে অভিযোগ তুলে অশোকবাবু বলেন, ‘‘আমাকে ক্রীড়া পরিষদ থেকে ফোন করে আমন্ত্রণ পত্র পাঠানোর কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।’’ ক্ষুব্ধ বিধায়ক শঙ্কর মালাকারও। তাঁর অভিযোগ, ‘‘খেলার মাঠে অন্তত রাজনীতি হবে না বলেই ধরে নিয়েছিলাম।’’ সাংসদ ঋতব্রত দলের খেলা দেখতে রাজ্য তো বটেই দেশের বিভিন্ন স্টেডিয়ামের নিয়মিত দর্শক। ঋতব্রতের কথায়, ‘‘সর্বত্র ভিআইপি বক্সে বসতে দেওয়া হয়েছে। আয়োজকরা এসে কথা বলেছেন। কিন্তু শিলিগুড়ির মতো অভিজ্ঞতা কোথাও হয়নি।’’

আইলিগের ডার্বি ম্যাচের যৌথ আয়োজক ছিল শিলিগুড়ি মহকমা পরিষদ এবং ইস্টবেঙ্গল ক্লাব। ক্রীড়া পরিষদের সচিব অরূপরতনবাবু বলেন, ‘‘রাজনীতির কোনও বিষয় নেই। ঋতব্রতবাবু খেলা দেখতে এসেছেন তা আমরা জানতাম না। ইস্টবেঙ্গল হয়ত জেনে থাকতে পারে। কেননা আয়োজক হিসেবে ইস্টবেঙ্গলই অ্যাপায়নের দায়িত্বে ছিল।’’ ইস্টবেঙ্গলের মাঠ সচিব বাবু চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ঋতব্রতবাবু বা শঙ্করবাবু এসেছেন তা জানা ছিল না। ভিআইপি বক্সে তো জায়গা ছিল। ওঁরা সেখানে বসতেই পারতেন।’’ তৃণমূল নেতা মনোজ বর্মার কটাক্ষ, ‘‘যে কিছুতেই অশোকবাবুদের অভিযোগ তোলা অভ্যেসে পরিণত হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন