অপেক্ষা: বালুরঘাট কলেজে ভর্তির ভিড়। নিজস্ব চিত্র
সোমবার ভরদুপুর। ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে শুনশান কলেজ। তবে আনাচে-কানাচে গুটিকয়েক ছাত্রছাত্রী। কলেজ খাঁ খাঁ করলেও গমগম করছে ক্যান্টিন। বৃষ্টির দুপুরে মুড়ি-ঘুগনি, চা বানাচ্ছেন ক্যান্টিনের কর্মীরা। ক্যান্টিনের পাশেই চেয়ার-টেবিল পেতে বসে রয়েছেন একদল যুবক-যুবতী। এমনই ছবি দেখা গেল পুরাতন মালদহের গৌড় কলেজে।
কলেজ ফাঁকা, অথচ ক্যান্টিন চত্বরে ভিড় কেন? কলেজেরই এক কর্মী বলেন, “স্নাতক স্তরে ভর্তি চলছে। তাই ভাইবোনদের ভর্তি করাতে কলেজে এসে বসে রয়েছেন দাদা-দিদিরা! অনলাইনে ভর্তি পর্ব চললেও ওঁদের কাছে ‘কড়ি’ ফেললেই সক্রিয় হয়ে উঠবেন ওঁরা!” তাঁর কথার তির্যক ভঙ্গিতে ইঙ্গিতটা স্পষ্ট। যদিও কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, নিয়মের বাইরে ‘ভাইবোন’দের ভর্তি করানোর কোন সুবিধেই দেওয়া হবে না ‘দাদা-দিদি’দের।
মালদহের কলেজগুলিতে ভর্তিতে অনিয়মের অভিযোগ প্রায় শোনা যাচ্ছে। এমনকি, বিভিন্ন বিষয়ে নির্দিষ্ট আসনের থেকে বাড়তি ভর্তিও নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আগেও মালদহ কলেজে ভর্তিতে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। অভিযোগ, মেধা তালিকায় শেষদিকে নাম থাকা সত্ত্বেও নিয়মবহির্ভূত ভাবে ভর্তি নেওয়া হয়েছে। যদিও ভর্তি প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ভাবে করতে অনলাইন পদ্ধতি চালু করেছে রাজ্য শিক্ষা দফতর। জেলায় মোট ১১টি কলেজের প্রতিটিতেই অনলাইনে ভর্তি চলছে। বিগত কয়েক বছর ধরেই অনলাইনের মাধ্যমে ভর্তি প্রক্রিয়া চলছে কলেজগুলোয়। তারপরেও টাকার বিনিময়ে কলেজে কলেজে ভর্তির একটি চক্র চলছে বলে অভিযোগ।
কী ভাবে অনলাইনেও চক্রটি চলছে? কলেজের এক অধ্যাপক বললেন, “অনলাইনে ফর্ম ফিলাপের সময় ছাত্রছাত্রীদের মার্কশিট সাবমিট করতে হয় না। শুধুমাত্র বিষয়ের নম্বর উল্লেখ করতে হয়। আর তার ভিত্তিতেই মেরিট অনুযায়ী ভর্তি করানো হয়।” ফলে নম্বরে হেরফের হলেই মেধা তালিকায় চলে আসতে পারবেন ছাত্রছাত্রীরা। এখানে ধরা পড়বে না? তিনি বলেন, “এখানেই হস্তক্ষেপ দাদা-দিদিদের। কলেজের ভিতরে যোগ রাখলেই অবাধে ভর্তি সম্ভব।” যদিও নিয়ম অনুযায়ী, এমন করে কেউ ভর্তি হলে সেই আবেদনকারীর রেজিস্ট্রেশন বাতিল হয়ে যাবে। এমনকি, থানাতেও অভিযোগ জানালে গ্রেফতার হতে পারে।
এ বারে ভর্তি প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি রুখতে আরও সক্রিয় পুরাতন মালদহের গৌড় কলেজ। অধ্যক্ষ অসীম সরকার বলেন, “আবেদনকারীদের মার্কশিট ভেরিফিকেশন করার ক্ষেত্রে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এজন্য আটজনের একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছে। সেই কমিটিই ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া দেখবেন। এ ছাড়া কলেজে আমার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর দিয়েও বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে।”
রাজ্যের একটি কলেজে ভর্তিতে দুর্নীতির চক্র প্রকাশ্যে আসতেই কলকাতার মতো মালদহ পুলিশও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর চালু করে। খুব দ্রুত জেলার প্রতিটি কলেজে হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরের ফ্লেক্স ঝোলানো হবে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি প্রসূন রায় বলেন, “পুলিশের বিজ্ঞপ্তি সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা প্রচার করছি। এ ছাড়া ব্লক স্তরের নেতৃত্বদের নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে। কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে দলের হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া যাবে না। কেউ যুক্ত থাকলে দলীয় স্তরের পাশাপাশি আইনি পদক্ষেপও করা হবে।”