আইনগত ভাবে তো বটেই, দলের তরফেও কালচিনির তৃণমূল বিধায়ক উইলসন চম্প্রমারির বিরুদ্ধে রবিবারও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শনিবার তাঁর বিরুদ্ধে জেলাশাসকের নামে কটূক্তি করে এসডিও-বিডিও অফিসের সকলকে জ্বালিয়ে মারার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে। সম্প্রতি একটি সভায় বিধায়কের ওই বক্তব্য মোবাইলের ভিডিও ক্লিপিংস-এর মাধ্যমে সংবাদমাধ্যমের কাছে পৌঁছয়।
দলীয় সূত্রের খবর, তৃণমূলের তরফে উইলসনের বক্তব্যকে ঘিরে খোঁজখবর করা শুরু হয়েছে। তবে দলের তরফে এখনও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি, যাঁদের বিরুদ্ধে বিধায়ক গালিগালাজ করেছেন ও পুড়িয়ে মারার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ, তাঁদের তরফেও কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপার আভারু এ দিন জানিয়েছেন, রবীন্দ্রনাথ চম্প্রমারির বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ জমা পড়েনি। জেলাশাসকও এদিনও কোনও মন্তব্য করেননি। জেলা তৃণমূল সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী শুধু বিষয়টি দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন।
এই অবস্থায় সরকারি অফিসার এবং তৃণমূলের জেলার নেতাদের ভূমিকা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিরোধীরা। কংগ্রেসের আলিপুরদুয়ারের জেলা সভাপতি বিশ্বরঞ্জন সরকার বলেন, “কালচিনির বিধায়ক তথা জয়গাঁ উন্নয়ন পর্ষদের (জেডিএ) চেয়ারম্যান চম্প্রমারি যে কটূক্তি করেছেন, তা ভিডিওতে দেখেছি। জেলাশাসকের উচিত অবিলম্বে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া। না হলে জেলাশাসকের উচিত পদত্যাগ করা।’’ তিনি জানান, যে জায়গায় নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত, সেখানে অনেক তৃণমূল নেতা জমি দখল করেছে বলে তাঁর কাছে অনেকে অভিযোগ করেছেন।
আলিপুরদুয়ারের কংগ্রেস বিধায়ক দেবপ্রসাদ রায় বলেন, “ভিডিওটি দেখে আমার গ্লানি হচ্ছে। আমার ভাবতেই কেমন লাগছে, যে এঁদের সঙ্গে আমায় বিধানসভায় বসতে হয়।’’ তিনি জানান, মহিলা প্রশাসকের সঙ্গে মত-পার্থক্য থাকতেই পারে। তবে ন্যূনতম সৌজন্যবোধ যাদের নেই, তাদের এই জনজীবনে থাকার নৈতিক অধিকার নেই।
আলিপুরদুয়ারের আরএসপি-র প্রাক্তন বিধায়ক নির্মল দাসের বক্তব্য, চম্প্রমারি গোর্খা জনমুক্তির টিকিটে ভোটে জিতে ক্ষমতায় থাকার জন্য তৃণমূলে যান। তাঁর কথায়, ‘‘এখন তৃণমূলের রীতি মেনে তিনি কাজ করছে। দ্রুত বিধায়কের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।’’
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, সম্প্রতি জয়গাঁর গোপীমোহন ময়দানে পাঁচিল দিয়ে সরকারি জায়গা দখল রুখতে অভিযান চালায় আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসন। পুলিশের উপস্থিতিতে পাঁচিলের কিছুটা ভেঙে দেওয়া হয়। ওই এলাকা থেকে মোর্চার সমর্থনে নির্দল হিসেবে জিতেছিলেন উইলসন। পরে তৃণমূলে যোগ দিয়ে জেডিএ-র চেয়ারম্যান হন। উচ্ছেদের পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে সেই যুক্তি তুলে কয়েকজন অফিসারকে ফোন করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন জেডিএ চেয়ারম্যান। তার পরেই উত্তেজিতভাবে তিনি অফিসারদের পুড়িযে মারা এবং গালিগালাজ করেন বলে অভিযোগ।