অদম্য জেদেই স্কুলে সেরার সেরা

চরম আর্থিক অনটনের মধ্যে পড়াশোনা করে এ বারের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় স্কুলের ইতিহাসে সর্ব্বোচ্চ নম্বর পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিল আনোয়ার। তুফানগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রাম নাগুরহাট। সেই নাগুরহাট হাইস্কুল থেকেই কলা বিভাগের ওই কৃতী উচ্চ মাধ্যমিকে ৫০০ নম্বরের মধ্যে ৪৩৪ নম্বর পেয়েছে। হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান আনোয়ার হোসেন বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে এ বার বাংলায় ৮৩, ইংরেজীতে ৮৬, ভূগোলে ৯০, দর্শনে ৯৩ এবং সংস্কৃতে ৮২ নম্বর পেয়েছেন। আনোয়ারের ওই সাফল্যে স্কুলের সহপাঠী, শিক্ষকেরা তো বটেই, খুশির হাওয়া গোটা গ্রামে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তুফানগঞ্জ শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৫ ০২:১৬
Share:

চরম আর্থিক অনটনের মধ্যে পড়াশোনা করে এ বারের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় স্কুলের ইতিহাসে সর্ব্বোচ্চ নম্বর পেয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিল আনোয়ার।

Advertisement

তুফানগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রাম নাগুরহাট। সেই নাগুরহাট হাইস্কুল থেকেই কলা বিভাগের ওই কৃতী উচ্চ মাধ্যমিকে ৫০০ নম্বরের মধ্যে ৪৩৪ নম্বর পেয়েছে। হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান আনোয়ার হোসেন বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে এ বার বাংলায় ৮৩, ইংরেজীতে ৮৬, ভূগোলে ৯০, দর্শনে ৯৩ এবং সংস্কৃতে ৮২ নম্বর পেয়েছেন। আনোয়ারের ওই সাফল্যে স্কুলের সহপাঠী, শিক্ষকেরা তো বটেই, খুশির হাওয়া গোটা গ্রামে।

স্কুলের প্রধানশিক্ষক তপেশচন্দ্র সাহা বলেন, “আনোয়ার বরাবর মেধাবী হিসেবে পরিচিত। শুধু এ বছর নয়, ১৯৯৮ সালে স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক চালুর পরের ইতিহাস ঘেঁটেও দেখা গিয়েছে আনোয়ারের নম্বরই সর্ব্বোচ্চ। ফলে বাড়তি আনন্দ, গর্ব হচ্ছে। ও সাহায্য পেলে ভাল হয়।”

Advertisement

স্কুল ও স্থানীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে, তুফানগঞ্জের বক্সিরহাট থানা এলাকার ওই গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ারের বাবা রিয়াজুল হক দিনমজুরি করে সংসার চালাতেন। কয়েক মাস আগে তিনি মারা গিয়েছেন। তার পর থেকেই মা আলেয়া বেওয়া এক রকম গুটিয়ে গিয়েছেন। তেমন কথা বার্তাও বলেন না। চার ভাই-সহ পাঁচ জনের সংসারের উপার্জনের এক মাত্র ভরসা বলতে এক দাদা। যিনি দরজির দোকানে দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কাজ করেন। তা দিয়েই চলে নুন আনতে পান্তা ফুরনোর সংসার। ফলে রেফারেন্স বই, পর্যাপ্ত খাতাকলম, ভালমন্দ খাবার দূরঅস্ত্, মাঝেমধ্যে আধপেটা খেয়ে স্কুল করতে হয়েছে। দরমার বেড়ায় পুরনো খবরের কাগজ সাঁটা বিদ্যুৎ সংযোগহীন এক চিলতে ছাপড়া ঘরে গাদাগাদি করে থেকে শীতে ঠান্ডায় কাঁপুনি সহ্য করে আর গরমে গলদঘর্ম হয়ে পড়াশোনা করতে হয়েছে। দু’জন গৃহশিক্ষক বিনা বেতনে পড়ান। স্কুলের শিক্ষকেরা সকলেই অবশ্য সাহায্য করেন।

কিন্তু কলেজ শিক্ষা বা ভবিষ্যৎ লক্ষ্যপূরণ যে এ ভাবে সম্ভব নয়, তা স্পষ্ট হয়েছে আনোয়ারের বক্তব্যেও। সে বলে, “ভবিষ্যতে ডব্লুবিসিএস পরীক্ষায় সফল হয়ে প্রশাসনিক আধিকারিক হওয়ার ইচ্ছে রয়েছে। আপাতত লক্ষ্য অবশ্য ইংরেজি নিয়ে পড়াশোনা করে স্নাতক হওয়া। কিন্তু কলেজে ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় টাকাটুকুও ঘরে নেই। জানি না কী করে সেটা জোগাড় হবে। তাই ভাল ফল করার পরেও কিছুই ভাল লাগছে না।” তুফানগঞ্জ ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি স্বপন সাহা বলেন, “বিষয়টি জানা ছিল না। কৃতীর উচ্চশিক্ষায় যাতে সমস্যা না হয় দেখব।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন