ব্যোমকেশের শুটিঙের ফাইল ছবি।
রিসর্টে চড়াও হয়ে দাবি মতো চাঁদা না পেয়ে শুটিং করতে আসা ব্যোমকেশের পরিচালক অরিন্দম শীল-সহ প্রযোজনা সংস্থার লোকেদের হেনস্থা, হুমকির অভিযোগ উঠল একটি ক্লাব সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত মঙ্গলবার রাতে মালবাজার থানার ক্রান্তি ফাঁড়ির লাটাগুড়ির এক রিসর্টে ঘটনাটি ঘটেছে। পুলিশ সূত্রের খবর, লাটাগুড়ির স্থানীয় নেতাজি সঙ্ঘের কিছু সদস্যদের সঙ্গে অরিন্দমবাবু এবং প্রযোজকদের কাছে মোটা টাকা চাঁদা চান। অভিযোগ, ক্লাব সদস্যদের সঙ্গে প্রযোজনা সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্তদের যখন চিৎকার চেঁচামেচি হচ্ছিল, সে সময়েই পরিচালক অরিন্দম শীলের ঘরেও জোর করে ঢুকে পড়তে চান কিছু ক্লাব সদস্যেরা। এরপরেই অরিন্দমবাবু প্রতিবাদ করেন। চাঁদা আদায়কারীরা পরে আবার আসবেন বলে হুমকি দিয়ে ফিরে যান।
এর পরেই জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপারের কাছে বিষয়টি জানিয়ে অভিযোগ করেন অরিন্দমবাবু। রাজ্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে বিষয়টি পৌঁছে যায়। সেখান থেকে পুলিশ সুপারকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সিনেমার প্রযোজনা সংস্থার তরফে শুভেন দাস মালবাজারের ক্রান্তি ফাঁড়িতে ক্লাব সদস্যদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেন। ছবির ইউনিটের লোকেদের অভিযোগ, ক্লাবের বেশিরভাগই তৃণমূলের কর্মী বলে দাবি করেছেন। তবে অভিযুক্তরা কেউ তৃণমূলের লোক নন বলে দাবি করেছেন দলের জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘ঘটনার সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের কোনও যোগ নেই৷ আমরা চাই অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে কড়া শাস্তি দেওয়া হোক৷’’
জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি বলেন, ‘‘মামলা দায়ের হয়েছে। অভিযুক্তদের চিহ্নিত করতে রিসর্টের সিসিটিভি ফুটেজ দেখা হয়েছে।’’
গত এক মাস ডুয়ার্সের নানা এলাকায় শুটিং করেছেন অরিন্দম শীল। নির্দিষ্ট সূচি মেনেই গত মঙ্গলবারই শুটিং-এর কাজও শেষ হয়ে যায়। এরপর ইউনিটের সকলে ফিরে গেলেও অরিন্দম শীল, আবীর চট্টোপাধ্যায়, ঋত্বিক চক্রবর্তী, সোহিনী সরকারো লাটাগুড়িতে মঙ্গলবার থেকে গিয়েছিলেন। মঙ্গলবার রাত ৯টা নাগাদই রিসর্টটিতে বাইক নিয়ে ৮/১০ চাঁদা নিতে আসেন। সে সময় অরিন্দমবাবু সোহিনী, আবীর, ঋত্বিক সকলে মিলে আড্ডা দিচ্ছিলেন। প্রযোজনা সংস্থার শুভেন দাসের কাছে ২০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। শুভেনবাবু ৩ হাজার টাকা দেবেন বলে জানিয়ে দিলে গোলমাল শুরু করেন অভিযুক্তরা। কিছু ক্লাব সদস্য অরিন্দম শীলের ঘরের দরজায় ধাক্কা মারেন। তিনিও বাইরে এসে প্রতিবাদে সরব হন।
অরিন্দমবাবু বলেন, ‘‘আমার ঘরে সোহিনী, ঋত্বিক সকলেই ছিল। সেখানে বিনা অনুমতিতে আচমকা এ ভাবে ওরা চড়াও হয়। দরজায় ধাক্কা দিতে থাকলে আমি দরজা খুলে চেঁচাতে থাকি। এরপর আমাকে রাগে ফেটে পড়তে দেখে পালিয়ে যায় ক্লাব সদস্যেরা।’’ পরিচালক জানান, প্রায় এক মাস ধরে ডুয়ার্সের এই রিসর্টে থেকেই সিনেমার পুরো কাজ করলাম সর্বত্র সহযোগিতা পেয়েছি। কিন্তু চাঁদা নিয়ে রিসর্টে ঢুকে এরকম জুলুম হবে ভাবতে পারিনি। এরকম চলতে থাকলে তো লাটাগুড়ির পর্যটন ব্যবস্থাই ধাক্কা খাবে। লাটাগুড়ি, তথা ডুয়ার্সের মানুষও এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ।
এ দিকে নেতাজি ক্লাবের তরফে সম্পাদক প্রসেনজিৎ ঘোষ জানান, ‘‘আমাদের ক্লাব ডুয়ার্সের ঐতিহ্যশালী ক্লাবগুলির মধ্যে একটি। ওঁরা শুটিং করেছেন, আমরাও সহযোগিতা করেছি। আগেই পুজোর চাঁদার কথা বলা হয়েছিল। শুভেনবাবুর ঘর ভেবেই ভুল করে অরিন্দম শীলের ঘরের দরজায় ক্লাব সদস্যেরা পৌছে গিয়েছিলেন। তাতেই উনি রেগে যান। পরিচালক, শিল্পীদের কোনও ভাবেই হেনস্থা করা হয়নি।’’