falakata

ফালাকাটার ছোট্ট গ্রামে ‘উজ্জ্বল’ আশা

কোচবিহার থেকে চিকিৎসকেরা ‘রেফার’ করার পরে, শিশুর বাড়ির লোকেরা তাকে নিয়ে গেলেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে। সেখান থেকে শিশুটিকে ‘রেফার’ করা হয় কলকাতায়।

Advertisement

পার্থ চক্রবর্তী

ফালাকাটা শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৯:২৭
Share:

পাড়া-গাঁয়ের প্রত্যেকের কাছে তিনি যেন প্রকৃত অর্থেই ‘দশভুজা’। শুধু দুর্গাপুজোয় না। প্রতিদিন। বছরের যে কোনও সময়ে যে কোনও বিপদে। দশভুজার মতো তাঁকে আপদেবিপদে পেয়ে আসছেন সকলে। দিনে বা রাতে। তিনি উজ্জ্বলা সরকার। ফালাকাটার ময়রাডাঙা পঞ্চায়েতের বানিয়াপাড়ার বাসিন্দা, এক আশাকর্মী।

Advertisement

মাস কয়েক আগের ঘটনা। কোচবিহারে এক শিশুর জন্ম দিলেন ফালাকাটার এক প্রসূতি মা। জন্মের পর থেকেই সঙ্কটজনক অবস্থা শিশুর। কোচবিহার থেকে চিকিৎসকেরা ‘রেফার’ করার পরে, শিশুর বাড়ির লোকেরা তাকে নিয়ে গেলেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে। সেখান থেকে শিশুটিকে ‘রেফার’ করা হয় কলকাতায়। কিন্তু নবজাতককে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার আর্থিক ক্ষমতা ছিল না তার বাবা-মায়ের। ফলে, শিলিগুড়ি থেকে শিশুটিকে নিয়ে তাঁরা ফেরেন ফালাকাটায়। খবর পেতে দেরি হয়নি উজ্জ্বলার। নবজাতকের বাড়িতে ছুটে যান। জেলা স্বাস্থ্য দফতরে থাকা উচ্চ পদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে সে শিশুকে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে।

ময়রাডাঙার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, প্রায় একই অবস্থার কারণে মাস পাঁচ-ছয় আগে আরও এক শিশুকেও কলকাতার মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির ব্যবস্থা করেছিলেন উজ্জ্বলা। এক জন আশাকর্মী হিসাবে প্রতিদিনই যাকে তাঁর সব দায়িত্ব পালন করতে হয়। কিন্তু তার বাইরে কারও অ্যাপেন্ডিক্সের ব্যথা উঠল বা কারও কিডনিতে পাথর হল— সে সব রোগী বা রোগীর আত্মীয়দের পাশে সব সময় তাঁকে দেখা যায়। নিজের কাজের বাইরে গিয়ে, সরকারি প্রকল্পে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড বা অন্য সুবিধা থেকে বঞ্চিতদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তাঁদের সরকারি শিবিরে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে দেখা যায় তাঁকে। রাস্তায় দুর্ঘটনাগ্রস্তের জন্য দ্রুত অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করা থেকে শুরু করে বাল্য বিবাহ রোখার ব্যবস্থা করা— সবেতেই অগ্রণী ভূমিকা তাঁর।

Advertisement

উজ্জ্বলার কর্মকাণ্ড অনেকের মুখে ঘুরে বেড়ায়। তাঁর কথায়, “ছোটবেলায় বাবাকে হারিয়েছি। তার আগে, বাবার ভাল চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু কোথায় নিয়ে যাব, বাড়ির কেউ বুঝে উঠতে পারিনি। বাবাকে জলপাইগুড়ির একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যেতে পেরেছিলাম। কিন্তু বাঁচাতে পারিনি! তার পর থেকেই ঠিক করেছিলাম, এমন অবস্থা যেন আর কারও না হয়। তাদের জন্য আমি লড়াই করে যাব।”

আলিপুরদুয়ারের ডিস্ট্রিক্ট আশা ফেসিলিটেটর রাখী গোপের দাবি, উজ্জ্বলার এই লড়াইয়ে আরও অনেক আশাকর্মী উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। তাঁকে দেখে তাঁদের অনেকেও তাঁর মতোই মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন