প্রতিবাদে পথে ধর্মঘটের সমর্থনে শিলিগুড়ির রাস্তায় মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। শুক্রবার। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
পার্টি অফিসে পৌঁছেই তিনি খবর পান কর্মী-সমর্থকদের দেখা মাত্র পুলিশ গ্রেফতার করে নিচ্ছে। অনেকে আবার দলের অফিসের সামনে দাঁড়াতেও সাহস পাচ্ছেন না।
দলের কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে, বাইরে বেরিয়ে আসেন শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। সঙ্গে সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার। এক কর্মীর থেকে দলের পতাকা চেয়ে নিয়ে এরপর এগিয়ে যান হিলকার্ট রোড দিয়ে। ছুটে আসেন পুলিশ কর্মীরা। গ্রেফতার করা হয় অশোকবাবু-সহ দলের কর্মী সমর্থকদের। সকাল সাড়ে ন’টায় গ্রেফতারের পর সন্ধে পর্যন্ত থানাতেই কেটে যায় অশোকবাবুদের।
অশোকবাবুকে পতাকা হাতে এগোতে দেখে মিছিল শুরু করে দিয়েছিলেন দলের কর্মী সমর্থকরাও। মিছিলের মুখ হাসমি চকের দিকে। ধর্মঘট সমর্থকদের এগোতে দেখেই মিছিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ান পুলিশ কর্মীরা। বাধা পেয়ে রাস্তাতেই বসে পড়েন অশোকবাবু। শুরু করেন স্লোগান। কোনও মতে পুলিশ তাকে তুলে বাসে উঠিয়ে থানায় নিয়ে যায়। বামেদের দাবি, সাড়ে পাঁচটা নাগাদ কর্মী-সমর্থকেরা বিক্ষোভ শুরু না করলে তখনও অশোকবাবু-জীবেশবাবুদের ছাড়া হতো না। থানা থেকে বেরিয়ে পুলিশি হেনস্থার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়েরের হুমকি দিয়েছেন অশোকবাবু।
এ দিন সকালে হাসমিচকের ধারে সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ সমন পাঠক-সহ কয়েকজন নেতা বসে ছিলেন। এ সময় পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করে বলে অভিযোগ। তার প্রতিবাদেই অশোকবাবুরা মিছিল শুরু করেছিলেন বলে দাবি। সেই মিছিলকে কেন আটকানো হল তা নিয়ে দ্বিচারিতার প্রশ্ন তুলেছেন অশোকবাবু। এ দিন সকাল এগারোটা নাগাদ হিলকার্ট রোড-সেবক রোড-বিধান রোড দিয়ে সিঙ্গুর দিবসের মিছিল করে তৃণমূল। সে মিছিলে ছিলেন পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেবও। অশোকবাবুর প্রশ্ন, ‘‘পুলিশকে বলেছিলাম বনধের সমর্থনে নয়, কর্মী সমর্থকদের গ্রেফতারির প্রতিবাদে মিছিল করছি। কিছুই না শুনে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য দিকে, মন্ত্রীর মিছিলে পুলিশ পাহারা দিয়েছে। রাজ্যে গণতন্ত্র নেই। পুলিশ যে ভাবে হেনস্থা করেছে তা নিয়ে আদালতে মামলা করব।’’
অশোকবাবুদের সঙ্গে সিপিআইএমএল, এসইউসিআই কর্মীদেরও পুলিশ গ্রেফতার করে। পুলিশের দাবি, থানায় ,এক পুলিশ কর্মী মেয়রকে অনুরোধ করেছিলেন, ‘‘স্যার, ভিতরে বসুন। ফ্যান রয়েছে।’’ মেয়র পাল্টা বলেন, ‘‘সকলের সঙ্গেই বসব।’’ তখন সকাল দশটা। সন্ধে পৌনে ছ’টা পর্যন্ত থানাতেই কেটেছে অশোকবাবুদের। পুলিশ জল ও দুপুরের খাবারের প্যাকেট দিয়েছিল। তাও নেননি অশোকবাবু-জীবেশবাবুরা। কর্মী-সমর্থকদের মুড়ি-চিঁড়ে নিয়ে আসার নির্দেশ দেন তাঁরা। থানায় তখন একই সঙ্গে এসইউসিআই-নকশালপন্থী সংগঠনের নেতা কর্মীরাও ছিলেন। দু’দলের নেতা-কর্মীদেরও শুকনো খাবার এগিয়ে দেন অশোকবাবুরা। থানা থেকে বেরিয়ে অশোকবাবু বলেন, ‘‘পুলিশ ভেবেছিল আমাদের সারা রাত আটকে রাখবে। যদিও, থানাতেই মানুষের বিক্ষোভ দেখে সে সাহস পায়নি।’’