আশ্রমের পুজোই নিজগুণে সর্বজনীন

গুনে গুণে একশো আটটা-ই পদ্ম চাই। জোগাড় করে আনবে পাড়ার ঝর্ণার মা। ভোর বেলায় ঘাসের থেকে শিউলি কুড়িয়ে নেবে টুম্পা-তিন্নি-পিউরা।

Advertisement
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:০৯
Share:

গুনে গুণে একশো আটটা-ই পদ্ম চাই। জোগাড় করে আনবে পাড়ার ঝর্ণার মা। ভোর বেলায় ঘাসের থেকে শিউলি কুড়িয়ে নেবে টুম্পা-তিন্নি-পিউরা।

Advertisement

প্রতিদিন বিপুল ভোগ রান্নার সব্জি কাটতে আসবেন পাড়ার মেয়ে বউরা। সকাল-সন্ধে ভিড় সামলাবে এলাকার কিশোর-যুবদের দল।

ওরা সকলেই সাহুডিঙির বাসিন্দা। পুজোর দিনগুলতো আশ্রমই ওদের ঠিকানা। শিলিগুড়ি লাগোয়া সাহুডাঙি আশ্রমের পুজো, আয়োজনে সর্বজনীন রূপ নিয়েছে।

Advertisement

মাত্র এক বছরেই। মূর্তি গড়ে পুজোর বড় মাপের পুজো আয়োজন এ বছর দ্বিতীয় বছরের। সর্বজনীন অনুরোধ-আবদার রেখেই গত বছর থেকে পুজোর শুরু করেন আশ্রম কর্তৃপক্ষ।

সাহুডাঙির রামকৃষ্ণ বিবেকানন্দ আশ্রমে ঠাকুরের জন্মতিথিতে ফি বছর ৫০ হাজারেরও বেশি জন ভক্তের সমাগম হয় বলে জানা গেল। প্রসাদ বিলির পরিসংখ্যানই ভক্ত সমাগমের প্রামান্য। ১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই আশ্রম সরাসরি বেলুর মঠের শাখা নয়, তবে মঠের পরামর্শে পরিচালিত হয়। মঠের অন্য আশ্রমের মতো এখানেও আগে থেকেই দুর্গাপুজো হয়ে আসছে। দেবীকে পটে পুজো করা হতো। গত বছর থেকেই মূর্তি গড়ে আয়োজনের ব্যাপ্তি বাড়িয়ে পুজো শুরু হয়। জন্মতিথির অনুষ্ঠানের বিপুল ব্যবস্থাপনা সামলানো গেলে দুর্গাপুজোর আয়োজন কেন সামলানো যাবে না?

রবিবার ছিল আশ্রমের বস্ত্র বিলির অনুষ্ঠান। এলাকার বাসিন্দা প্রান্তিক পরিবারের শিশু এবং বয়স্কদের তালিকা তৈরি করে দুপুর থেকে জামা-শাড়ি-ধুতি বিলি হয়েছে। দু’শোরও বেশি জনকে বস্ত্র দেওয়া হয়েছে। পুজোর জন্য আশ্রমের মন্দিরের সামনে সামিয়ানা খাটানো হয়েছে। শুরু হয়ে গিয়েছে ভোগের প্রস্তুতিও। সপ্তমী থেকে নবমী, তিনদিন ভোগ বিলির কথা আমন্ত্রণে পত্রে উল্লেখ্য করা হয়েছে। যদিও আশ্রম কর্তৃপক্ষ জানালেন, ষষ্ঠীর দিনও ভোগের আয়োজন হয়েছে। অষ্টমীর দিন অন্তত ২০ হাজার ভক্ত সমাগম হবে বলে অনুমান করেছে কর্তৃপক্ষ, অন্য দিন কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ হাজার জনকে প্রসাদ দেওয়ার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। এই বিপুল আয়োজন ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। নারকেলের নাড়ু হচ্ছে, ভাজা হচ্ছে নিমকিও। যেই আশ্রমে আসছেন হালুয়া প্রসাদ দেওয়া হচ্ছে মহালয়া থেকেই। আশ্রমের সম্পাদক স্বামী বিনয়ানন্দ বলেন, ‘‘সকলকে প্রসাদ দেওয়া হবে। নিষ্ঠাই আমাদের মূলমন্ত্র। বলতে গেলে এটাই আমাদের থিম।’’

বিপুল রান্নাবান্নার জন্য আগে থেকেই সব্জি কাটা শুরু হয়ে যায়। আশ্রমের আরেক সন্যাসী বিক্রমানন্দ জানালেন, যেদিন রান্না হবে তার আগের দিন দুপুর থেকে সব্জি কাটা শুরু না হলে পরদিন সকালে হাঁড়ি চাপানো যাবে না। সব্জি কাটাকাটি থেকে রান্নার কাজে সাহায্যের জন্য অন্তত ৫০ জনকে প্রয়োজন। আশেপাশের মহিলারা পুজোর ক’দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আশ্রমে থেকেই সেই তদারকি চালান। অন্তত দশরকমের ব্যঞ্জন দিয়ে দেবীকে ভোগ নিবেদন করা হয়। একদিন মাছও থাকে। সঙ্গে থাকে জিলিপিও। আশ্রমের সন্যাসী জীবনানন্দ মহারাজের কথায়, ‘‘ভোগ নিবেদনের পরে প্রসাদী জিলিপি ভক্তদের দেওয়া হয়। রামকৃষ্ণ ঠাকুর জিলিপি খেতে ভালবাসতেন, তাই আমাদের আশ্রমে জিলিপি অপরিহার্য।’’ মাছ-জিলিপি-হালুয়া ভোগে স্বতন্ত্র এই আশ্রমের পুজোপর্ব পরিচালনায় কলকাতায় গোলপার্কের মঠ থেকে আসছেন তিন সন্ন্যাসীও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন