নাম আছে তো! উদ্বেগে চা বাগানের শ্রমিকেরা

অসমের নাগরিক পঞ্জি নিয়ে রাজনীতির দাবি-পাল্টা দাবি চলছে চা বলয়েও। বিজেপির চা বলয়ের নেতা জন বার্লার কথায়, “আমাদের আদিবাসী সমাজের বিপুল সংখ্যক মানুষ অসমে থাকেন। তাঁদের কারও নাম বাদ গিয়েছে কি না, খোঁজ নিচ্ছি। তবে তাঁরা সকলেই বৈধ নাগরিক। নাম বাদ পড়লেও সরকারি নিয়মে আবেদন করে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে।”

Advertisement

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ০৩ অগস্ট ২০১৮ ০৪:২৮
Share:

এনআরসি-তে নাম আছে কিনা, তা নিয়ে উদ্বিগ্ন চা বাগানের শ্রমিকরা। —ফাইল চিত্র

অসম দেশে চা বাগান ভরিয়া। চা বাগানের টানে উত্তরবঙ্গের বহু চা শ্রমিক পরিবারের ছেলে-মেয়ে অসমে চলে গিয়েছিলেন। এক শতক পেরিয়ে তারাই এখন নাগরিকত্বের সঙ্কটে। অসম সরকারের প্রকাশিত নাগরিক পঞ্জিতে অনেক চা শ্রমিক পরিবারের নাম নেই বলে অভিযোগ। তাঁদের কেউ কেউ ফিরে আসতে চাইছেন বাপ-ঠাকুর্দার ভূমিতে, কেউ বা অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন। জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ারের চা বাগানগুলিতেও উৎকন্ঠা ছড়িয়েছে। এই সব বাগানের শ্রমিকদের জ্ঞাতিগুষ্টি রয়েছে অসমে। জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া রায়পুর চা বাগানের প্রধান হেমব্রম যেমন। তাঁর কথায়, “আমার এক আত্মীয় থাকেন অসমের চা বাগানে। তাঁর নাম তো ওঠেনি। ওঁরা জলপাইগুড়ি চলে আসতে চাইছে।”

Advertisement

অসমের নাগরিক পঞ্জি নিয়ে রাজনীতির দাবি-পাল্টা দাবি চলছে চা বলয়েও। বিজেপির চা বলয়ের নেতা জন বার্লার কথায়, “আমাদের আদিবাসী সমাজের বিপুল সংখ্যক মানুষ অসমে থাকেন। তাঁদের কারও নাম বাদ গিয়েছে কি না, খোঁজ নিচ্ছি। তবে তাঁরা সকলেই বৈধ নাগরিক। নাম বাদ পড়লেও সরকারি নিয়মে আবেদন করে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে।”

রাজ্যের শাসক দলকে বিঁধে জন বার্লার দাবি, “অসমের অনুপ্রবেশকারীদের তৃণমূল মদত দিচ্ছে। অনুপ্রবেশকারীদের ডুয়ার্সে এনে আদিবাসীদের জমিতে বসাচ্ছে।” তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা সভাপতি সৌরভ চক্রবর্তী পাল্টা বলেন, “বিজেপি ইচ্ছে করে বিভাজনের রাজনীতি করছে অসমে। সবটাই ভোট ব্যাঙ্কের জন্য। যে চা শ্রমিকরা যুগযুগ ধরে অসমে বাস করছে তাঁদেরও অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে বিজেপি।”

Advertisement

চা বাগানে কাজের খোঁজে অসমমুখো হওয়ার কথা ছড়িযে রয়েছে লোকগানেও। তালিকায় নাম না থাকা অসমের বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়াতে ঐক্য সংহতি মঞ্চ তৈরি হয়েছে জলপাইগুড়িতে।

মঞ্চের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা লোকশিল্পী নজরুল হকের কথায়, “বিখ্যাত সেই গানটির কথা ভাবুন—‘চল মিনি আসাম যাব।’ এটি বিখ্যাত গান। কাজের খোঁজে হাজার হাজার আদিবাসী ছেলেমেয়ে অসম চলে গিয়েছিল। কয়েক পুরুষ ধরে তাঁরা সেখানে বাস করে। আজকে তাঁদের নাম বাসিন্দার তালিকা থেকে কেটে দেওয়া অমানবিক নয় অপরাধও বটে।’’ গত বছরের গুয়াহাটি হাইকোর্টে চা শ্রমিক তথা আদিবাসী সংগঠনের তরফে আবেদন করা হয়। জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি অফ টি ট্রাইবাল আদিবাসী অসম নামে একটি সংগঠনের তরফে আবেদন জানানো হয়, চা শ্রমিকদের ক্ষেত্রে প্রমাণ জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হয়। সেই দাবি অসম সরকার মেনে নেয়নি বলে অভিযোগ। তার জেরেই অন্তত ২০ হাজার চা শ্রমিকের নাম তালিকায় নেই বলে দাবি।

চা শ্রমিক ভূমিচ পরিবারের অনেকেই অসমে থাকেন। দরমা বাড়ির উঠোনে বসে ছিলেন জলপাইগুড়ির বাসিন্দা সোনিয়া ভূমিচ। বৃহস্পতিবার দুপুরে বাগানের কাজ সেরে জিরিয়ে নিচ্ছিলেন কিছু ক্ষণ। বললেন, “কেউ শিবসাগর জেলায়, কেউ জোরহাটে থাকে। অনেকেই ফোন করেছে ওদের নাম নেই বলে। ওরা ফিরে আসতে চায়। কি হবে কে জানে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement