পরিদর্শন: আহতদের দেখতে মালবাজার হাসপাতালে পুরপ্রধান স্বপন সাহা। নিজস্ব চিত্র
বাজ পড়ে আহত হলেন কম পক্ষে ৪৯ জন চা শ্রমিক। সকলেই মহিলা। সোমবার বিকাল ৪টে নাগাদ বানারহাটের পলাশবাড়ি চা বাগানের ৮ নম্বর সেকশনে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে ৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাঁরা হলেন ফেপনি সাউ, সুমিত্রা বরাই, আশা গোরা, বালা গোপ, গীতাঞ্জল সাউ। তাঁরা প্রত্যেকেই মালবাজার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। সাম্প্রতিক কালে বজ্রাঘাতে এত জনের আহত হওয়ার নজির নেই।
অন্য দিনের মতো এদিনও সকাল থেকে বাগানে পাতা তোলার কাজ করছিলেন শ্রমিকরা। দুপুর পর্যন্ত রোদের তেজ থাকলেও বেলা ৩টে নাগাদ আকাশ কালো করে মুষলধারে বৃষ্টি নামে। ছাতা ছিল না অনেকেরই। বৃষ্টিতে ভিজেই কাজ চালিয়ে যান। বিকাল ৪টা নাগাদ পাতা তোলার পর শ্রমিকরা যখন ওই পাতা ওজন করার জন্য কারখানার সামনে জড় হন তখনই বাজ পড়ে।
আহত শ্রমিক বুধুনি মুণ্ডা বলেন, ‘‘এমনিতেই রোদ, বৃষ্টিতে ভিজে সারা দিন পাতা তোলার কাজ করে সবাই ক্লান্ত ছিলাম। পাতা ওজন দেওয়ার সময় ঝিরিঝিরি বৃষ্টি চলছিল। আমরা একটা গাছের নীচে বসে জিরিয়ে নিচ্ছিলাম। আচমকা বিকট আওয়াজ হয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটা আগুনের গোলার মতো কিছু উড়ে সেখানে পড়ে। আগুনে ঝলসে যায় আমাদের হাত, পিঠ। নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে দেখি আমার কয়েকজন সঙ্গী জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে আছেন। কেউ আবার কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। এরপর বাগানের অন্য শ্রমিকরা ছুটে এসে আমাদের উদ্ধার করে হাসপাতাল নিয়ে যান।’’
বাগানের ম্যানেজার জয়ন্ত সান্যাল বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার পরই প্রত্যেককে বাগানের গাড়িতে করে দ্রুত বানারহাট প্রাথমিক চিকৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে আহতদের বীরপাড়া স্টেট জেনারেল ও মালবাজার মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়। শ্রমিকদের চিকিৎসার খরচের বিষয়টি নিয়ে আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছি।’’ বীরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, হাসপাতালে বার্ন ইউনিট না থাকায় গুরুতর আহতদের দ্রুত মালবাজার সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে পাঠানো হয়। বাকিদের বীরপাড়াতে চিকিৎসা করার পর জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এ দিন বীরপাড়া হাসপাতালে আহতদের দেখতে যান বানারহাটের তৃণমূলনেত্রী সীমা চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘কয়েকদিন আগে বানারহাটের হলদিবাড়ি চা বাগানে বাজ পড়ে ৫ জন শ্রমিক আহত হন। আমরা চা বাগান মালিকদের বলব, যাতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ চলাকালীন শ্রমিকদের কাজ বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়াও যাতে শ্রমিকদের জন্য ছাতা এবং তাঁদের বিশ্রামের জন্য শেডের ব্যবস্থা করা হয়।’’ স্থানীয় বিধায়ক শুক্রা মুন্ডা বলেন, ‘‘শ্রমিকদের চিকিৎসার দায়ভার নিতে হবে বাগান কর্তৃপক্ষকে। আহতদের পাশে আছি।’’