বন্ধ এটিএম হয়রানি বাসিন্দাদের

লুধিয়ানার বাসিন্দা কর্ণ আরোরা তিন মাস আগে ইন্টারনেটে টয়ট্রেনের আসন বুক করেছিলেন। বুধবার সকালে দার্জিলিং স্টেশনে পৌঁছে দেখেন, টয়ট্রেন চলছে না। অশান্তির আশঙ্কা মাথায় নিয়েই যে গুটিকয়েক পর্যটক দার্জিলিঙে রয়ে গিয়েছিলেন, এমন নানা ঘটনায় দিনভর নাকাল হলেন তাঁরা।

Advertisement

অনির্বাণ রায়

দার্জিলিং শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৭ ০৫:০৫
Share:

ফেরা: দার্জিলিং ছাড়ছেন বিদেশি পর্যটকেরা। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক

হোটেলের পিওএস মেশিন (যে যন্ত্রের মাধ্যমে কার্ড ব্যবহার করে বিল মেটানো হয়) কাজ করছিল না। তাই বিলের টাকা তুলতে এটিএমের খোঁজে বেরিয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা রমেন্দ্র ওমলে। কিন্তু দার্জিলিঙের এইচডি লামা রোড থেকে চৌরাস্তা ঘুরে ফিরলেও, কোথাও খোলা এটিএম পাননি। জজবাজারে একটি এটিএম খোলা রয়েছে শুনে গিয়ে লাইন দেন। টাকা পেতে লেগে যায় পাক্কা এক ঘণ্টা। তখন আর গাড়ি ভাড়া করে দার্জিলিঙের আশপাশ ঘুরে দেখার সময় নেই।

Advertisement

লুধিয়ানার বাসিন্দা কর্ণ আরোরা তিন মাস আগে ইন্টারনেটে টয়ট্রেনের আসন বুক করেছিলেন। বুধবার সকালে দার্জিলিং স্টেশনে পৌঁছে দেখেন, টয়ট্রেন চলছে না। অশান্তির আশঙ্কা মাথায় নিয়েই যে গুটিকয়েক পর্যটক দার্জিলিঙে রয়ে গিয়েছিলেন, এমন নানা ঘটনায় দিনভর নাকাল হলেন তাঁরা।

কর্ণ যেমন গত মঙ্গলবার বন্‌ধের ফলে টাইগারে হিলে সূর্যোদয় দেখতে যাওয়ার গাড়িই পাননি। এ দিন দেখলেন টয়ট্রেনও বন্ধ। এর পরে দুপুরে যখন টিভিতে দেখলেন মোর্চা প্রধান বিমল গুরুঙ্গ পর্যটকদের পাহাড়ে থাকা নিয়ে সতর্ক করেছেন, আর কালক্ষেপ করলেন না কর্ণ। সোজা গাড়ি ভাড়া করে গ্যাংটক রওনা দিলেন।

Advertisement

পর্যটকেরা তো তাও অন্যত্র চলে যেতে পারছেন। কিন্তু স্থানীয় মানুষ কী করবে? মোর্চার ডাকে এ দিন কেন্দ্রীয় সরকারি কিছু অফিস বন্ধ ছিল। ব্যাঙ্ক-পোস্ট অফিসও খোলেনি। এর ফলে ভুগতে হয়েছে দার্জিলিঙের বাসিন্দাদেরও। বুধবার দার্জিলিঙে দোকানপাট প্রায় সবই খোলা ছিল। গাড়িঘোড়াও চলেছে স্বাভাবিক ভাবেই। কিন্তু দোকানে বিশেষ ভিড় ছিল না। অনেকেই বলছেন, থাকবে কী করে! পর্যটকদের হাতে তো তা-ও কার্ড আছে। পাহাড়ের সাধারণ মানুষের হাতে যদি টাকা না থাকে, তারা কেনাকাটা করবে কী ভাবে?

দৈনিক লেনদেন চলে যে সব জায়গায়, ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকায় সেখানেও সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে মাথায় হাত ব্যবসায়ীদের। শ্রমিকদের মজুরির জন্য নগদ জোগাড় করতে পারেননি বলে বুধবার কাজ করাতে পারেননি এক সরকারি ঠিকাদার। লাদেনলা রোডে একটি নির্মাণ কাজের বরাত পেয়েছেন ওই ঠিকাদার। তিনি বললেন, ‘‘ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে মজুরি দিই। আজ টাকা পাইনি। ফলে আমার কাজ তো বন্ধই রইল। গরিব শ্রমিকরাও কাজ পেলেন না।’’ মহাকাল মার্কেটের ব্যবসায়ী ছিরিং শেরপা বলেন, ‘‘দিনে গড়পরতা চার হাজার টাকার বিক্রি হয়। প্রতিদিনের টাকা ব্যাঙ্কে জমা করি। বেশি দিন বাড়িতে টাকা রাখাও সম্ভব নয়। কী হবে কে জানে!’’

এই সব আলোচনা এবং জল্পনার মধ্যে কিছুটা স্বস্তি আজ, বৃহস্পতিবারে। গুরুঙ্গদের দেওয়া শর্ত মতো এ দিন ব্যাঙ্ক খোলা থাকার কথা। কিন্তু এর পরে বড় আন্দোলন শুরু হলে কী হবে? এই প্রশ্নই এখন ঘুরছে পাহাড়ের আনাচে কানাচে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন