নকশালবাড়ি

উড়ো ফোন পেয়ে গিয়ে বিয়ে রুখলেন বিডিও

বিয়েবাড়িতে তখন সবেমাত্র চাল-আনাজের বাজার ঢুকেছে। রাত পোহালেই বিয়ে। সকাল থেকে প্রস্তুতি চলছে। তখনই পুলিশ নিয়ে পৌঁছলেন বিডিও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০১৬ ০২:০৯
Share:

বিয়েবাড়িতে তখন সবেমাত্র চাল-আনাজের বাজার ঢুকেছে। রাত পোহালেই বিয়ে। সকাল থেকে প্রস্তুতি চলছে। তখনই পুলিশ নিয়ে পৌঁছলেন বিডিও। পরিবারের সদস্যদের কাছে পাত্রীর জন্মশংসাপত্র চাইলেন। শংসাপত্র অনুযায়ী, আগামী নভেম্বরে পাত্রীর বয়স ১৮ বছর হবে। সঙ্গে সঙ্গে বিডিও-এর নির্দেশ এখনই এই বিয়ে বন্ধ করতে হবে।

Advertisement

এ দিকে ‘ভাল পাত্র’ হাতছাড়া করতে রাজি নয় বলে পাত্রীর পরিবারের সদস্যরা প্রশাসনের কর্তাদের হাতে-পায়ে ধরে অনুরোধ শুরু করেছেন। পড়শিদেরও কেউ এসে দাবি করলেন, গরিব পরিবার অনেক ধারদেনা করে বিয়ের আয়োজন করেছে। সব শুনে বিডিওর সিদ্ধান্ত, পাত্রপক্ষের সঙ্গে তিনি নিজে যোগাযোগ করবেন। তাঁরা যাতে অন্যত্র ছেলের বিয়ে না ঠিক করেন তাও দেখবেন, আগামী নভেম্বরের পরে যে কোনও দিন বিয়ে হলে খরচও তিনি জোগড়া করবেন। শেষ পর্যন্ত পাত্রীপক্ষ বিয়ে স্থগিত রাখতে রাজি হয়। শিলিগুড়ি লাগোয়া নকশালবাড়ির দক্ষিণ কোটিয়াজোতের ঘটনা। বিডিও সহ ব্লকের আধিকারিকদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন দার্জিলিঙের জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব।

আজ, রবিবার কোটিয়াজোতের এক দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীর বিয়ের আয়োজন হয়েছিল। ছাত্রীর বাবা-মা দু’জনেই কৃষিশ্রমিকের কাজ করেন। সূত্রের খবর, নাবালিকার বিয়ে হতে চলেছে বলে এ দিন শনিবার নকশালবাড়ির বিডিও কিংশুক মাইতে ফোনে অভিযোগ করেন এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি। কিংশুকবাবু জানিয়েছেন, নিজের নাম জানাতে রাজি হননি অভিযোগকারীর। এরপরেই নকশালবাড়ি থানার সঙ্গে যোগাযোগ করেন কিংশুকবাবু। পুলিশ বাহিনী এবং ব্লক অফিসের কয়েকজন কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে সোজা বিয়েবাড়িতে উপস্থিত হন। আজ, রবিবার বিয়ে ভেস্তে গেলেও এ দিন নতুন করে বিয়ের তারিখ স্থির হবে বলে বিডিও জানিয়েছেন। পাত্র পক্ষের সঙ্গে ব্লক অফিস থেকেই যোগাযোগ করা হয়েছে। কিংশুকবাবুর কথায়, ‘‘ছাত্রীর পরিবারের অনুরোধেই পাত্রীপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। বিয়ের আয়োজনে ধার দেনা করা হয়েছিল বলে পরিবারের তরফে জানানো হয়। পাত্রী সাবালিকা হওয়ার পরে বিয়ের খরচ জোগাতে সাহায্য করব বলে জানিয়েছি।’’

Advertisement

ছাত্রীর পরিবারের এক সদস্যের কথায়, ‘‘অনেক কষ্ট করে ভালপাত্র পাওয়া গিয়েছিল। বিয়ের খরচ জোগাড় করতেও বেগ পেতে হয়েছে। কিন্তু বিডিও সাহেব পাত্রপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তাদেরও রাজি করিয়েছেন। খরচ নিয়েও আশ্বাস দিয়েছেন। তাই মেনে নেওয়া হয়েছে।’’ ব্লক প্রশাসনের তরফে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, পাত্রীপক্ষ মেনে না নিলে আইনি পদক্ষেপ করা হতো। সে কারণেই পুলিশবাহিনী সঙ্গে নিয়ে অভিযান হয়। তবে প্রথমে বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাজি করানো হবে বলে ঠিক হয়েছিল এবং সেই মতোই পদক্ষেপ হয়েছে বলে ব্লক অফিসের দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন