পাড়ার মন্দির থেকে শুরু করে বাসস্ট্যান্ড। দিনভর সর্বত্র ঘুরেও ৫০ থেকে ১০০ টাকার বেশি উপার্জন করতে ঘাম ছুটে যেত মালদহের ইংরেজবাজার শহরের বাসিন্দা শ্যামলী দাস, তুলসি চৌহানের মতো ভিক্ষুকদের। তবে বাজারে খুচরো পয়সা বাড়তি হতেই, তাঁদের আয় বেড়েছে দ্বিগুণ। কিন্তু সেই খুচরো নিয়েই জেরবার শহরের অলি-গলিতে থাকা ভিক্ষুকেরা।
তাঁরা বলেন, ‘‘ভিক্ষা চাইতেই আমাদের হাত ভরিয়ে দিচ্ছে খুচরো পয়সা। সেই পয়সা পাড়ার মুদির দোকানে নিয়ে গেলে তারা আবার নিচ্ছে না।’’
ঊষা ঝা, জগতী মণ্ডলেরা বলেন, ‘‘তাই বাড়িতে হাজার হাজার খুচরো পয়সা থাকলেও দু’বেলা পেট চালাতে ভরসা হয়ে উঠেছে প্রতিবেশী বাড়ির বাসি খাবার।’’ আনাজ বিক্রেতা হোক কিংবা পাড়ার মুদির দোকান। সকলেই খুচরো নিতে অস্বীকার করছেন।
ইংরেজবাজার শহরের মনস্কামনা মন্দির চত্বরে সকাল বিকেল জনা দশেক বৃদ্ধ-বৃদ্ধা ভিক্ষা করেন। এ ছাড়া বাস স্ট্যান্ড, রথবাড়ি মোড়, রেল স্টেশনেও দেখা যায় ভিক্ষুকদের ভিড়। খুচরো পয়সা নিয়ে এখন নাজেহাল হতে হচ্ছে তাঁদের। থালা, বাটি ভর্তি খুচরো নিয়ে বসে রয়েছেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, আয় বেড়েছে, কিন্তু সে-ও তো খুচরোই। জগতী বলেন, ‘‘বার্ধক্যজনিত কারণে ভিক্ষাবৃত্তি করে পেট চালাতে হচ্ছে। খুচরো নিয়ে জটিলতা চলতে থাকলে সেই কাজও করতে পারব না।’’ শুধু ভিক্ষুকই নয়, খুচরো নিয়ে বিপাকে পড়ছেন বিভিন্ন ব্যবসায়ী বা সংবাদপত্র বিক্রেতা, এজেন্টরাও। বাজারে খুচরো নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের বচসা রোজকার হয়ে উঠেছে।
সংবাদপত্র বিক্রেতা খোকন মণ্ডল, স্বপন দাস, নব দত্তেরা বলেন, ‘‘সংবাদপত্রের দাম তিন থেকে চার টাকা করে। তাই গ্রাহকেরা আমাদের খুচরো দিয়ে সংবাদপত্র কিনছেন। আর সেই খুচরো এজেন্টদের দিলে তাঁরা নিতে অস্বীকার করছেন। কী ভাবে কাজ করব, কিছুই বুঝতে পারছি না।’’ সংবাদপত্রের এজেন্ট গোপাল সাহা বলেন, ‘‘আমরা নিরুপায়। কারণ ব্যাঙ্ক আমাদের কাছে কোনও খুচরো নিচ্ছে না। হাজার হাজার খুচরো নিয়ে আমরাই বা কী করব?’’
এ দিকে, খুচরো সমস্যা মেটাতে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ব্যবসায়ী সংগঠনগুলি। মালদহ মার্চেন্ট চেম্বার অফ কর্মাসের সম্পাদক উজ্জ্বল সাহা বলেন, ‘‘প্রশাসন দ্রুত কোনও পদক্ষেপ না করলে আমরা খুব শীঘ্রই পথে নামব।’’ মালদহের লিড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার রবীন্দ্র গুপ্তা বলেন, ‘‘পরিদর্শন করে দেখা গিয়েছে ব্যাঙ্কগুলি খুচরো নিচ্ছে। আর খুচরো পয়সা বাজারে হাত বদল হয়।’’