প্রতীকী ছবি।
বহির্বিভাগে লম্বা লাইন রোগীদের। সেই ভিড় সামাল দিতে না দিতেই জরুরি বিভাগে দুর্ঘটনায় জখম এক রোগীকে নিয়ে হাজির আত্মীয় পরিজন। বহির্বিভাগ ছেড়ে তাই তখন ছুটতে হল জরুরি বিভাগে। ওই বিভাগে চিকিৎসা করেই ফের ছুটে আসতে হল বহির্বিভাগে।
রোগী দেখতে এমনই চড়কি পাক খেতে হচ্ছে মালদহের ভুতনির চর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একমাত্র চিকিৎসককে। শুধু চিকিৎসকই নয়, অন্য পরিকাঠামো সমস্যায় জর্জরিত চরের লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসা পরিষেবার জন্য থাকা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছেন ভুতনি চরবাসী।
উত্তর, দক্ষিণ চণ্ডীপুর এবং হিরানন্দপুর গ্রামপঞ্চায়েত নিয়ে অবস্থিত মালদহের ভুতনি চরটি। ফুলাহার ও গঙ্গা নদী মানিকচক ব্লক থেকে ওই তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। প্রায় এক লক্ষেরও বেশি মানুষের বসবাস রয়েছে চরটিতে।
লক্ষাধিক মানুষের চিকিৎসার ভরসা একমাত্র ভুতনি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। নদী পারাপারের সমস্যা থাকায় চরবাসী চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে ভিড় জমান। অতীতে শুধুমাত্র বহির্বিভাগের চিকিৎসা মিলত। তবে বর্তমানে স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি অন্তঃবিভাগের চিকিৎসা পরিষেবা চালু করা হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দশ শয্যা চালু করা হয়েছে। সন্তান প্রসব থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসা পরিষেবা চালু করা হয়। ঝাঁ চকচকে ভবনও তৈরি করা হয়েছে। তবে পরিকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিতে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মাত্র এক জন চিকিৎসক, দু’জন নার্স, এক জন করে ফার্মাসিস্ট, চতুর্থ শ্রেণির কর্মী এবং দু’জন সাফাইকর্মী রয়েছেন।
প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, দৈনিক বহির্বিভাগে কম পক্ষে পাঁচ শতাধিক রোগী চিকিৎসার জন্য ভিড় জমান। এ ছাড়া অন্তঃবিভাগেও রোগী ভর্তি রয়েছেন। ফলে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে নাজেহাল হতে হয় চিকিৎসকদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী বলেন, এই হাসপাতাল থেকে ব্লক সদরের দূরত্ব প্রায় আট কিলোমিটার। যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ থাকায় রোগীরা এই হাসপাতালেই ভিড় করেন। ফলে একজনকেই দৈনিক পাঁচ শতাধিক রোগী, অন্তঃবিভাগ, জরুরি বিভাগের চিকিৎসা করতে হচ্ছে। চিকিৎসার জন্য আসা আরমানি বিবি, তাজমুল হক প্রমুখেরা বলেন, ‘‘এমন রাস্তা যে হাসপাতালে আসার পথেই রোগীরা আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিষেবা উন্নতি করলে উপকৃত হবেন
চরের মানুষ।’’
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দিলীপকুমার মণ্ডল বলেন, হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নয়ন সহ চিকিৎসক, কর্মীর সংখ্যা বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। আশা করছি খুব শীঘ্রই সমস্যা মিটবে।