এই বাংলোতেই থাকতেন নরবুজি। ফাইল চিত্র
দার্জিলিঙের তাকদার ছোট্ট পাহাড়ের মাথায় পাইনের জঙ্গলে মোড়া সুবিশাল শতাব্দী প্রাচীন বাংলো। শোনপুর মহারাজার হাত থেকে একসময় তা ব্রিটিশদের ক্যান্টনমেন্টে পরিণত হয়। সেই বাংলোর বর্তমান মালিকের নাম নরবুজি লামা।
সিসিটিভি ক্যামেরায় মোড়া গোটা বাংলোটি। নিরাপত্তার দায়িত্বে একাধিক সুঠাম যুবক। অনেকে বলেন, সবাই গোর্খাল্যান্ড পার্সোনেল (জিএলপি)। দুটি জার্মান শেফার্ড, একটি ডালমেশিয়ান কুকুর সমানে নজরদারি চালাচ্ছে। পাহাড়ের পাকদণ্ডি বেয়ে নীচে বিরাট লোহার দরজা। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা বাংলোটিকে দুর্গ বলাই ভাল। সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে।
সকাল থেকে বাংলোর সামনে চেয়ার পেতে বসে তিনি ‘দরবার’ চালান। কাউকে বাড়ি তৈরির চেক বিলি করেন, তো কারও ছেলের পড়াশোনা বা পরিবারের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। আর্থিক সাহায্যের জন্যও অনেকে লাইন দেন। বাংলোর দায়িত্বে থাকা যুবকদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পরেই ভিতরে যাওয়ার ছাড়পত্র মেলে।
২০০৭ সাল থেকেই মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গের ‘ডানহাত’ বলে পরিচিত নরবুজি। রংলি রংলিয়ট থানায় হামলা, বিডিও অফিসে আগুন, গাড়ি পোড়ানোর পরে বহু মোর্চা নেতা-কর্মীকেও তাঁর বাংলোয় ঘোরাফেরা করতে দেখা গিয়েছে বলে খবর। শনিবার তাঁকেই থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট, সাধারণ নীল টি-শার্টে দেখে চমকে উঠেছেন শিলিগুড়ির অনেকে। আপাতত তাঁর ঠিকানা সিআইডি হেফাজত। সিআইডি-র দাবি, গত ৮ জুন মন্ত্রিসভা বৈঠক চলাকালীন ভানুভবনকে ঘিরে যে রণক্ষেত্র হয়, তার অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী নরবুজি। যদিও এ দিন আদালতে যাওয়ার পথে তিনি সব ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন।
বছর পঁয়তাল্লিশের নরবুজি দার্জিলিং গর্ভমেন্ট কলেজের স্নাতক। সর্বদা কেতাদুরস্ত। দামি ওভারকোট, ডিজাইনার পোশাক ছাড়া কেউ তাকে দেখেননি। সকালে উঠে কখনও বোলেরো, আবার কখনও আই-১০ গাড়ি নিয়ে বার হয়ে পড়তেন তিনি। সম্প্রতি ‘গাড়িশালে’ এসেছে হার্লে ডেভিডসন মোটরবাইক। স্থানীয় দু’টি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের কর্ণধার নরবু। স্ত্রী একটি স্কুলের প্রিন্সিপাল। দুই ছেলে বাইরে থেকে পড়াশোনা করে। একসময় বলেছিলেন, ‘‘তাকদা গুম্ফা, বহু বাংলো থেকে শুরু করে অনেক কিছুই আমার পূর্বপুরুষদের হাতে তৈরি। দলের সভাপতির নির্দেশে এলাকার দেখাশোনা করতেই হয়।’’ তবে এলাকাকে পর্যটন মানচিত্রে তুলতে তাঁর কথা অস্বীকার করেন না সমতলের পর্যটন ব্যবসায়ীরাও।