Binay Tamang

কর্নাটক নির্বাচন নিয়ে বিজেপিকে কটাক্ষ, এ বার কি তবে কংগ্রেসের দিকেই পা বাড়িয়ে পাহাড়ের বিনয়

কর্নাটক নির্বাচন নিয়ে বিজেপিকে কটাক্ষ করলেন বিনয় তামাং। বিবৃতি দিয়ে প্রশংসা করলেন কংগ্রেসের। তবে কি শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের দিকেই ঝুঁকছেন প্রাক্তন তৃণমূল নেতা?

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

দার্জিলিং শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২৩ ১৮:১৮
Share:

বিজেপির দিক থেকে সাড়া না পেয়ে তবে কি কংগ্রেসের দিকে ঝুঁকছেন বিনয়! — ফাইল ছবি।

কর্নাটক বিধানসভা নির্বাচনে কেন কংগ্রেস জিতেছে, তা বিশ্লেষণ করে একটি বিবৃতি প্রকাশ করলেন বিনয় তামাং। বিবৃতিতে বিজেপির হারের কারণ নিয়েও পর্যালোচনা করেছেন। একই সঙ্গে প্রশংসা করেছেন কংগ্রেস, রাহুল এবং প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর। এমনকি, এই দাবিও করেছেন যে, পাহাড় যেটুকু পেয়েছে, তা কংগ্রেসের আমলে। পাহাড়বাসীকে তাই আগামী লোকসভা নির্বাচন নিয়ে ভাবনাচিন্তার ডাক দিয়েছেন। এই বিবৃতির পরেই জল্পনা শুরু হয়েছে। বিজেপির দিক থেকে সাড়া না পেয়ে তবে কি কংগ্রেসের দিকে ঝুঁকছেন বিনয়!

Advertisement

২০২২ সালের ডিসেম্বরে তৃণমূল থেকে ইস্তফা দেন বিনয়। অনীত থাপার ‘গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা’ (বিজিপিএম)-র সঙ্গে মিলে দার্জিলিং পুরসভার দখল নেয় তৃণমূল। তার জেরে ইস্তফা। এর পর অজয় এডওয়ার্ডের হামরো দলের সঙ্গে বিনয়ের ‘ঘনিষ্ঠতা’ বাড়তে থাকে। তবে সরকারি ভাবে সেই দলে কখনও যোগ দেননি তিনি। তবে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তিনি বলে খবর। যদিও বিজেপি তাঁকে দলে নেওয়ার বিষয়ে সদিচ্ছা প্রকাশ করেনি বলে মনে করছে রাজনীতিকদের একাংশ। সম্প্রতি বৈঠকে বসেছিল অনীতের বিজিপিএমের বিরোধী দলগুলি। বৈঠকে ছিলেন ‘গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা’র বিমল গুরুং, হামরো পার্টির অজয়। সেই বৈঠকে ছিল বিজেপিও। কিন্তু তাতে ডাক পাননি বিনয়। সূত্রের খবর, বৈঠকে পাহাড়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনের দাবি নিয়ে সরব হয়েছিল দলগুলি। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তারা জোট বেঁধে লড়াইয়ের ভাবনাচিন্তা করছে। সেই জোটে থাকার ইচ্ছাপ্রকাশ করলেও ডাক পাননি বিনয়। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, এর পর থেকেই ‘অস্তিত্ব’ সঙ্কটে ভুগছেন বিনয়।

এই পরিস্থিতিতে কর্নাটক ভোট কিছুটা হলেও অক্সিজেন জুগিয়েছে বিনয়কে। তিনি ফের আসরে নেমেছেন। এ বার বিজেপির বিরুদ্ধে। বিবৃতিতে তিনি কর্নাটকে বিজেপির হারের জন্য দায়ী করেছেন, তাদের সরকারের দুর্নীতি, বিএস ইয়েদুরাপ্পাকে যোগ্য স্থান না দেওয়ার ফলে তৈরি হওয়া গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে। পাশাপাশি বিনয়ের মত, ‘মোদী-হাওয়া’ আগের মতো আর কার্যকর নয়। মানুষকে প্রভাবিত করতে পারছে না। কর্নাটকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তোলা ‘জয় বজরঙ্গবলী’ স্লোগানও কাজে আসেনি বলে বিবৃতিতে জানিয়েছেন বিনয়। তিনি এ-ও মনে করেন, মোদী, অমিত শাহ, জে পি নড্ডা নিজেদের সরকারের কৃতিত্ব থেকে বিরোধীদের আক্রমণের উপরই বেশি জোর দিয়েছেন। ঔদ্ধত্য এবং অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসই ডুবিয়েছে তাদের বলে দাবি করেছেন বিনয়।

Advertisement

পাশাপাশি, প্রিয়ঙ্কার পরিণত কথাবার্তা, রাহুলের ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’র পরিণত রণকৌশল কর্নাটকে কংগ্রেসকে এগিয়ে দিয়েছে বলে বিবৃতিতে জানিয়েছেন বিনয়। তাঁর মতে, দলের থেকে পরিবার, আঞ্চলিকতাকে আলাদা রাখতে পেরেছে কংগ্রেস। সেটাও তাদের হাত শক্ত করেছে। এ প্রসঙ্গে কংগ্রেসের সভাপতি পদে মল্লিকার্জুন খড়্গের বসার কথাই মনে করিয়ে দিয়েছেন বিনয়। তার পর কংগ্রেস এবং বিজেপি এবং তাদের জোটশরিকদের দখলে ক’টা রাজ্য রয়েছে, তার তালিকাও প্রকাশ করেছেন। এখানেই থামেননি তিনি। সরাসরি প্রশ্ন তুলেছেন, ২০০৯ সাল থেকে টানা দার্জিলিং পাহাড়, শিলিগুড়ি তরাই, ডুয়ার্স বিজেপিকে তিন জন সাংসদ দিয়েছে। ওই সাংসদদের অনেকেই ভূমিপুত্র নয়। এত কিছুর পর গোর্খারা কী পেয়েছেন? অসমে গোর্খা উন্নয়ন পর্ষদ ছাড়া কিছুই দেয়নি বিজেপি বলে জানিয়েছেন বিনয়। তাঁর কথায়, ১৯৮৬ সালে রাজীব গান্ধীর আমলেই দার্জিলিং গোর্খা পাহাড় পর্ষদ তৈরি হয়েছে। ২০০৭ সালে কংগ্রেস সরকারের আমলে গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) গঠিত হয়েছে। ১৯৯২ সালে কংগ্রেস সরকারে আমলেই সংবিধান নেপালি ভাষাকে স্বীকৃতি দেয়। কংগ্রেস সরকারই সিকিম ভারতের অঙ্গরাজ্য করেছে। এর পরেই পাহাড়বাসীকে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন বিনয়।

বিনয়ের এই আবেদনের পরেই রাজনীতিকদের একাংশ মনে করছে, বিজেপি থেকে সবুজ সঙ্কেত না পেয়ে কংগ্রেসের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন তিনি। এর আগে বিজেপি নেতাদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগের কথা প্রকাশ্যে এসেছে। তখন প্রশ্ন করার পর বিনয় আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছিলেন, যখন তিনি বিজেপিতে যাবেন, জানিয়ে দেবেন। সেই সময় আর আসেনি। তবে কি এ বার লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেসেই যাচ্ছেন!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন