প্রতীকী ছবি।
গত বছর কালীপুজোর উদ্বোধনের জন্য মাদারিহাটে বিজেপির বিধায়ক মনোজ টিগ্গার ডাক পড়েছিল অন্য বিধানসভা এলাকা থেকেও। এ বার পেয়েছেন মাত্র ৫টি পুজো থেকে। সেখানে তৃণমূলের নেতাদের পুজো উদ্বোধনে দম ফেলার ফুরসৎ নেই।
কী এমন হল যে, পরিস্থিতি এতটাই বদলে গেল? জেলার প্রবীণ রাজনীতিকদের অনেকের বক্তব্য, অসমে নাগরিক পঞ্জি এবং সম্প্রতি জঙ্গি হামলার ঘটনায় বিজেপিকে নিশানা করে প্রচার তুঙ্গে নিয়ে গিয়েছে তৃণমূল। অসম ঘেঁষেই আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার এবং ডুয়ার্স। ওই প্রচারের জেরেই জনমানসে নানা অস্বস্তিতে পড়েছেন বিজেপি নেতারা। তৃণমূলের প্রচারের কারণেই কি বির্তক এড়াতে পুজো কমিটিগুলি দূরত্ব রাখছে গেরুয়া শিবিরের নেতাদের সঙ্গে?
নাম না করে এমন কয়েকজন উদ্যোক্তা বলছেন, তাঁদের পরিকল্পনা ছিল বিজেপির বিধায়ককে দিয়েই পুজোর উদ্বোধন করানোর। কিন্তু অসমের ঘটনার পরে এমন বিতর্ক শুরু হয়ে গেল যে, রাতারাতি সিদ্ধান্ত বদলাতে হল। মাদারিহাটের একটি বড় পুজোর আয়োজক বলেন, ‘‘আমাদের এখানে এমন অনেকে থাকেন, যাঁদের অসমে নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে। কারও কারও আত্মীয়ও সেখানে থাকেন। তাঁদের মনোভাব বুঝেই আমাদের সিদ্ধান্ত বদলাতে হয়েছে।’’ বিজেপির মনোজবাবুই বলেন, ‘‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে অসমের ঘটনার সঙ্গে জোর করে আমাদের জড়ানো হচ্ছে। এ বিষয়ে আর কিছু বলতে চাই না। তৃণমূল অপপ্রচার করছে।’’ তৃণমূলের সৌরভ চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘মানুষ সবই জানেন। বিজেপি বিভাজন করতেই অস্থিরতা তৈরি করছে। এ ছাড়া আর কিছু বলার নেই।’’
মনোজবাবুর ঘনিষ্ঠরা দাবি করলেন, গত বছর যে পুজো কমিটি উদ্বোধনে ডেকেছিল তাঁদের কয়েকটি অনুষ্ঠানে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছে কিন্তু উদ্বোধকের নাম বদলে গিয়েছে। সদ্য পঞ্চায়েত সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন এমন তৃণমূল নেতাদের যেখানে পুজো উদ্বোধনে দম ফেলার ফুরসত নেই, সেখানে বিজেপির জনপ্রতিনিধি, নেতাদের মণ্ডপে দেখা মিলছে কম।
দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে সোমবার আলিপুরদুয়ারের জটেশ্বরে এসেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ৷ বিজেপি সূত্রে জানানো হয়েছে, এ দিন ওই এলাকায় কয়েকটি পুজোর উদ্বোধ করেন তিনি৷ বিধায়ক মনোজবাবুর কথায়, “মঙ্গলবার অনেক পুজোর উদ্বোধন হবে৷ ফলে আরও কিছু ক্লাব আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইছে বলে শুনছি৷” সেই সঙ্গেই মনোজবাবুর দাবি, “তৃণমূল বাংলার মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছে এটা ঠিক। তবে তাতে মানুষ পা দিচ্ছেন না।” তবে বিজেপির আলিপুরদুয়ার জেলা সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা অবশ্য এ বার একটিও পুজোর উদ্বোধন করছেন না৷
তৃণমূলের আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সৌরভ ৩০টির উপর পুজোর উদ্বোধনে ডাক পেয়েছেন৷ তবে সময় কম থাকায় ১২টি পুজোর উদ্বোধনে তিনি রাজি হয়েছেন৷ ফালাকাটার বিধায়ক অনিল অধিকারীও অনেক পুজো উদ্বোধন ডাক পেলেও, উদ্বোধন করবেন ১০-১২টি পুজোর৷ জেলা সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মার পাল্টা অভিযোগ, “আমাদের নেতাদের পুজো উদ্বোধনে ডাকলে শাসকদলের রোষানলে পড়তে হবে৷ এই ভয়েই অনেক ক্লাব ইচ্ছা থাকলেও আমাদের ডাকতে পারছে না৷”
তবে কোচবিহার জেলা বিজেপি নেতাদের উদ্বোধন সূচিও একদিন আগেও স্পষ্ট নয়। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিজেপির কোচবিহার জেলা সভাপতি মালতি রাভাও এখনও পর্যন্ত আদৌ কোনও উদ্বোধন করবেন কি না, তা-ও অনিশ্চিত। মালতিদেবী অবশ্য দাবি করেন, “ডাউইয়াগুড়ি ও পুণ্ডিবাড়ি এলাকার দু’টি পুজোর উদ্যোক্তারা উদ্বোধনের জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন। আমি এখনও চূড়ান্ত কিছু জানাইনি।” বিজেপির কোচবিহার জেলা প্রাক্তন সভাপতি তথা আলিপুরদুয়ারের পর্যবেক্ষক নিখিলরঞ্জন দের কাছে একই কথা জানতে চাইলে তাঁর জবাব, “রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে কর্মসূচিতে ব্যস্ত রয়েছি।“
এর মধ্যে জলপাইগুড়ি এক বছরে সংখ্যা কমেছে অনেকটাই। উত্তরবঙ্গের দুই বিজেপি বিধায়কদের মধ্যে একজন মনোজাবাবু। ডুয়ার্সে কালীপুজোর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি।