ভোটের মুখে তৃণমূলকে ‘আক্রমণ’ শুভেন্দুর
West Bengal Panchayat Election 2023

উত্তরবঙ্গ মানে আলাদা রাজ্য নয়: শুভেন্দু

ধূপগুড়ির সভায় এ দিন নশুভেন্দু বলেন, “উত্তরবঙ্গ বলা মানেই আলাদা রাজ্য নয়। উত্তরবঙ্গ হল আবেগ, দেশের আবেগ, পশ্চিমবঙ্গেরও আবেগ।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

উত্তরবঙ্গ শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৩ ০৮:৫৪
Share:

জলপাইগুড়ির অসম মোড়ে দলীয় সমর্থকদের মধ্যে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ছবি: সন্দীপ পাল।

‘উত্তরবঙ্গ বলা মানেই আলাদা রাজ্য নয়’ বলে তৃণমূলকে আক্রমণের পথে হাঁটলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সোমবার জলপাইগুড়ির ধূপগুড়িতে দলের প্রচার সভায় উত্তরবঙ্গকে রাজ্য ও দেশের ‘আবেগ’ বলে উল্লেখ করে শুভেন্দু আক্রমণ করেন তৃণমূলকে। তাঁর অভিষেক, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরবঙ্গকে ‘ঘৃণার চোখে’ দেখেন। তৃণমূলের পাল্টা বক্তব্য, রাজনৈতিক লাভের আশায় বিভাজনের ভাবনায় উস্কানি দিতে শুভেন্দু এ দিন ইচ্ছে করেই বক্তৃতায় ‘আলাদা রাজ্য’ কথাটি এনেছেন।

Advertisement

ধূপগুড়ির সভায় এ দিন নশুভেন্দু বলেন, “উত্তরবঙ্গ বলা মানেই আলাদা রাজ্য নয়। উত্তরবঙ্গ হল আবেগ, দেশের আবেগ, পশ্চিমবঙ্গেরও আবেগ।” তাঁর নিশানায় ছিল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি মন্তব্য। গত বছর ধূপগুড়িতেই একটি সভায় এসে অভিষেক জানিয়েছিলেন, ‘উত্তরবঙ্গ’ কথাটি তিনি মানেন না। গোটা রাজ্যই এক। পুরোটাই পশ্চিমবঙ্গ। সে সময় তিনি উত্তরবঙ্গকে পৃথক রাজ্যের দাবির বিরুদ্ধে বার্তা দিতে চেয়েছিলেন বলেই তৃণমূলের দাবি। এ দিন শুভেন্দু দাবি করেন, “গোটা উত্তরবঙ্গকে পিসি আর ভাইপো ঘৃণার চোখে দেখেন। উত্তরবঙ্গের বাসিন্দাদের উপরে অত্যাচার করেন, কালিয়াগঞ্জে হয়েছে। ভাইপো পকেটে হাত দিয়ে সাত হাজার পুলিশ নিয়ে ঘণ্টার পরে ঘণ্টা গাড়ি দাঁড় করিয়ে সভা করতে আসে। এবং বলে,উত্তরবঙ্গ বলে কোনও নাম হবে না।’’ দার্জিলিং, তরাই-ডুয়ার্স, ঠাকুর পঞ্চানন বর্মা, নেপালি কবি ভানুভক্তের উল্লেখ করে শুভেন্দু আরও বলেন, “উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে আর উত্তরবঙ্গের নাম বলা যাবে না?”

তৃণমূলের একাংশের অভিযোগ, শুভেন্দু এ দিন ইচ্ছে করেই বক্তৃতায় ‘আলাদা রাজ্য’ কথাটি এনেছেন। বিজেপি বরাবরই মুখে এক কথা বলে, আর বিভাজনের উস্কানি দিয়ে ভোট পাওয়ার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ তাদের। শিলিগুড়ির মেয়র তথা তৃমমূল নেতা গৌতম দেব বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী হয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেশের প্রথম কোনও শাখা সচিবালয় উত্তরবঙ্গে করেছেন, নাম রেখেছেন উত্তরকন্যা। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর তৈরি করেছেন। কয়েকশো বার উত্তরবঙ্গে এসেছেন, যা অভূতপূর্ব। তার পরেও কোনও যুক্তির ধার না ধরে শুধু রাজনৈতিক লাভের জন্য এমন মন্তব্যও করা যায়? এর প্রতিক্রিয়া উত্তরবঙ্গবাসীই ভোটে দেবেন।”

Advertisement

ঘটনাচক্রে, এ দিন গৌতম দেবের নামও শোনা গিয়েছে শুভেন্দুর বক্তৃতায়। ২০১২ সালে পুরভোটে ধূপগুড়ির তৎকালীন বাম বোর্ডের বিরুদ্ধে প্রচারে এসেছিলেন তিনি। শুভেন্দু এ দিন সে কথা মনে করিয়ে দাবি করেন, “তখন উত্তরবঙ্গেরনেতা গৌতম দেব আমাকে তোলামূল পার্টির হয়ে এনে ঘুরিয়েছিলেন। তখন যাঁরা (কয়েকজন স্থানীয় নেতার নাম করে) ছিলেন, পরে চোর-ডাকাত হয়েছেন। এখন শত শত কোটি টাকার মালিক।”

তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে পুলিশ বালি তোলায় মদত করে বলে অভিযোগ করে থানার আইসিদের নামে আয়কর দফতরে অভিযোগ জানানো বা কোনও কোনও থানার আইসিকে ‘টাইট’ করানোর মতোও ‘প্রচ্ছন্ন হুমকিও’ শোনা গিয়েছে শুভেন্দুর মুখে। এ দিন ধূপগুড়ি, নাগরাকাটা এবং ফুলবাড়িতেও সভা করেন শুভেন্দু। সর্বত্রই ভুয়ো ব্যালট ছাপানোর অভিযোগ তোলেন তিনি, বাক্স বদল হতে পারে বলে আশঙ্কাও করেছেন। এ দিন বৃষ্টিতে ভিড় সভার ছবি টুইট করেছেন শুভেন্দু। সেখানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিজেপির সর্ব ভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি। তাঁর টিপ্পনী, “গত পরশু ধূপগুড়িতে এসেছিলেন বাবুল সুপ্রিয়, ফাঁকা চেয়ার ছিল। বন্ধু বাবুল সুপ্রিয় এসে দেখে যান, আজও বৃষ্টি হচ্ছে, কিন্তু কোথাও ফাঁকা নেই।” বিজেপির হিসাবে শুভেন্দুর ধূপগুড়ির সভায় হাজার কুড়ি মানুষ ভিড় করেন। পুলিশ সূত্রের দাবি, ভিড় ছিল হাজার পাঁচেকের।

জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান খগেশ্বর রায় বলেন, ‘‘এ সব গুরুত্ব দিই না। উনি তো কত কী বলেন। পরে আবার সেগুলি গিলেও ফেলেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন