চালান রাখুন পরামর্শ দফতরের

সূত্রের খবর, একই চালান ব্যবহার করে একাধিকবার নদী থেকে বালি, পাথর তোলা হচ্ছে বলে ভূমি সংস্কার দফতরে বহু অভিযোগ জমা পড়েছে।

Advertisement

শুভঙ্কর চক্রবর্তী

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:৫৬
Share:

বেআইনি: শিলিগুড়ি নৌকাঘাটের কাছে মহানন্দা নদী থেকে দেদার বালি পাথর তোলা চলছে সরকারি নিষেধাজ্ঞা অবজ্ঞা করেই। নিজস্ব চিত্র

বাড়ি করতে বালি, পাথর কিনলে এ বার সঙ্গে রাখতে হবে চালানও। অর্থাৎ যিনি বালি-পাথর কিনছেন তাঁকেই প্রমাণ করতে হবে সেগুলি বৈধ উপায়ে নদী থেকে তোলা হয়েছে কি না। বালি মাফিয়াদের কারবার রুখতে শিলিগুড়ি ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় এমন ব্যবস্থা চালুর কথা ভাবছে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর। এর ফলে দফতরের কর্মীরা নির্মীয়মান বাড়ি-বহুতলে গিয়ে মালিক বা প্রোমোটারের কাছে বালি-পাথর কেনার চালান চাইতে পারেন।

Advertisement

সূত্রের খবর, একই চালান ব্যবহার করে একাধিকবার নদী থেকে বালি, পাথর তোলা হচ্ছে বলে ভূমি সংস্কার দফতরে বহু অভিযোগ জমা পড়েছে। এই চক্রে তাদের কর্মীদের কেউ কেউ জড়িত থাকতে পারেন বলে মনে করছেন দফতরের পদস্থ কর্তাদের অনেকেই। পাশাপাশি ক্রেতাদের সতর্ক করতে চাইছেন তাঁরা। বালি পাথরের সরবরাহকারীর কাছ থেকে চালান নিয়ে নিজেদের কাছে রাখার জন্য ক্রেতাদের পরামর্শ দিয়েছেন ভূমি সংস্কার দফতরের কর্তারা।

নদী থেকে বালি, পাথর তোলার নিয়ম কী? দার্জিলিং জেলা প্রশাসনের এক পদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন গোটা বিষয়টি দেখভালের মূল দায়িত্বে আছে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর। কোন নদীর কোন এলাকা থেকে বালি, পাথর তোলা যাবে সেটা চিহ্নিত করে টেন্ডারের মাধ্যমে এলাকাগুলি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বরাত দেওয়া হয়। যে এলাকা থেকে বালি, পাথর তোলা হয় সেখানে ভূমি সংস্কার দফতরের কর্মীদের থাকার কথা। সেখান থেকেই প্রতিটি ট্রিপের জন্য আলাদা করে চালান কেটে টাকা জমা নেওয়ার কথা ওই কর্মীদের। অর্থাৎ একটি ট্রাক যতবার বালি বা পাথর তুলবে ততবারের জন্যই নতুন করে চালান কাটতে হবে।

Advertisement

কারচুপি কী ভাবে হচ্ছে? ওই আধিকারিক জানান, যিনি বালি বা পাথর কিনছেন তাঁকেই চালান দিয়ে দেওয়ার কথা ট্রাক চালক বা সরবরাহকারির। সেটাই হল ক্রেতার কাছে পণ্যের দাম মেটানোর বৈধ রসিদ। অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রে ক্রেতাকে চালান না দিয়ে সেটা ব্যবহার করে একাধিকবার তোলা হচ্ছে বালি, পাথর। এক্ষেত্রে ঘাটে নজরদারির দায়িত্বে থাকা ভূমি সংস্কার দফতরের কর্মীদের সঙ্গে কারবারীদের যোগসাজস রয়েছে বলে অভিযোগ। দফতরের আর এক আধিকারিক জানান, যেখানে বালি তোলা বৈধ সেখান থেকে একবার চালান কেটে তা ক্রেতাকে না দিয়ে নিজেদের কাছে রেখে দিচ্ছে ট্রাক চালকরা। তারপর যে এলাকা থেকে বালি পাথর তোলা নিষিদ্ধ তাঁরা সেখান থেকে বালি, পাথর তুলছে। রাস্তায় প্রশাসনিক কর্তা বা পুলিশ আটকালে রেখে দেওয়া সেই বৈধ চালান দেখানো হচ্ছে বলে অভিযোগ। ফলে প্রতিদিন লক্ষ-লক্ষ টাকা রাজস্ব ঘাটতি হচ্ছে সরকারের।

জেলা ভূমি সংস্কার দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ক্রেতারা সচেতন হলেই ওই কারবার আটকানো সম্ভব। ক্রেতাদের উচিত চালান নিজেদের কাছে রেখে দেওয়া।’’ শিলিগুড়ির প্রাক্তন মহকুমা ভূমি সংস্কার আধিকারিক শ্যামল দাস বলেন, ‘‘অনেক বছর আগে বাড়ি বাড়ি গিয়ে চালান যাচাইয়ের কাজ শুরু হয়েছিল। পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। ওই ব্যবস্থা চালু হলে বেআইনি কারবারে অনেকটা রাশ টানা সম্ভব হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন