লুচি ভেজে, মিষ্টি নিয়ে বোনফোঁটায়

উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, সমাজে পুরুষদের মঙ্গলকামনায় বছরভর নানা ব্রত, উপোস বা পূজার্চনা করেন মহিলারা। কিন্তু মেয়েদের মঙ্গল বা দীর্ঘায়ু কামনায় কোনও উৎসব হয় না।

Advertisement

অভিজিৎ সাহা

ইংরেজবাজার শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:১৫
Share:

বোনের কপালে: ইংরেজবাজারে বোনফোঁটার আসরে। নিজস্ব চিত্র

কেউ হাজির লুচি নিয়ে। কেউ আলুভাজা, কেউ পায়েস, দই নিয়ে। সঙ্গে ধান, দুর্বাও। এ ভাবেই অচেনা কয়েক জন মহিলা আয়োজন করলেন অভিনব ‘বোনফোঁটা’র। মঙ্গলবার সকালে তা ঘিরে উৎসবের আমেজ ছড়ায় ইংরেজবাজার শহরে।

Advertisement

কেন এই বোনফোঁটা?

উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, সমাজে পুরুষদের মঙ্গলকামনায় বছরভর নানা ব্রত, উপোস বা পূজার্চনা করেন মহিলারা। কিন্তু মেয়েদের মঙ্গল বা দীর্ঘায়ু কামনায় কোনও উৎসব হয় না। তা পূরণেই এ দিন গুরুপূর্ণিমায় নিজেরাই নিজেদের মঙ্গল কামনায় ‘বোনফোঁটা’র আয়োজন।

Advertisement

কেউ কাউকে চেনেন না। আলাপ ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপের মতো সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। তাঁদের কেউ পড়াশোনা করেন, কেউ করেন চাকরি, কেউ গৃহবধূ। মালদহের বিভিন্ন প্রান্তের এমনই কয়েক জন শামিল এই উদ্যোগে।

মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে সকলে ভিড় জমান ইংরেজবাজার শহরের মালদহের উঠোনে। হবিবপুর থেকে দই, ধান-দুর্বা নিয়ে লাল-হলুদ শাড়িতে আসেন কলেজ পড়ুয়া রুমা পোদ্দার, যুথিকা মণ্ডলেরা। বাড়ি থেকে গরম লুচি ভেজে হাজির স্কুলশিক্ষিকা মৌসুমী ঘোষ দাস। পায়েস নিয়ে আসেন প্রতিমা সাহা। তা ছাড়া অনেকে আসেন মিষ্টি, নিমকি, নাড়ু নিয়ে।

উঠোনের মার্বেলের মেঝে সেজে ওঠে আলপনায়। শুরু হয় বোনফোঁটা-পর্ব। এক দল আসনে বসেন ফোঁটা নিতে, অন্যেরা তাঁদের কপালে ফোঁটা দিয়ে মঙ্গলকামনা করলেন। এ ভাবেই দফায় দফায় চলে বোনফোঁটা। শতাধিক মহিলা তাতে শামিল হন। ফোঁটার পরে শুরু হয় মিষ্টিমুখ। পরে হিড়িক পড়ে নিজস্বীর।

আয়োজকেরা জানান, শুধু ফোঁটা দেওয়াই নয়, রীতি মেনে মন্ত্রও পড়া হয়। বোন ফোঁটার মন্ত্র লেখেন মালদহ কলেজের অধ্যাপিকা অনুরাধা কুণ্ডা। তিনি বলেন, ‘‘বোন দিচ্ছে বোনকে ফোঁটা, যমদুয়ারে পড়ল কাঁটা। দিদির হাতের আশীর্বাদে, বোনের সকল বিপদ কাটে— এমনই দশ লাইনের মন্ত্র লেখা হয়েছে। মেয়েরা মিলে এই উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়।’’

অনুষ্ঠানের অন্যতম উদ্যোক্তা সুদেষ্ণা মৈত্র বলেন, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন কথা জানাতেই জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভাল সাড়া মেলে। প্রথম বারের আয়োজনেই অনেক ভিড় হয়েছে। আগামী দিনে আমরা আরও ভাল করে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মেয়েদের নিয়ে বোনফোঁটার আয়োজন করব।’’ স্কুলশিক্ষিকা মৌসুমীদেবী বলেন, ‘‘সমাজে মেয়েদের জন্য তেমন অনুষ্ঠান নেই। নিজেদের জন্যই তা-ই নিজেরাই এমন আয়োজন করলাম।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন