এক মাস আগেই সাপে ছোবল দেওয়া এক শিশুকে প্রথমে হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে ওঝার কাছে ঝাড়ফুঁক করায় শেষ পর্যন্ত মৃত্যু ঘটেছিল তাঁর। রবিবার সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটল মালদহে। বদলেছে শুধু এলাকা। আগের ঘটনাস্থল ছিল হবিবপুরের রানাহাট, এ বার পুরাতন মালদহের সৈয়দপুর।
পুলিশ ও মালদহ মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম সাগর রাজবংশী (১৮)। সৈয়দপুরের বাসিন্দা এই কিশোর পাণ্ডুয়া হাই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল। রবিবার সকালে হাসপাতালে সে মারা যায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, টিনের চাল ও বাঁশের দরমা দেওয়া বাড়িতে একটি ঘরে শনিবার রাতে মশারি টাঙিয়েই ঘুমিয়েছিল সাগর। ভোর প্রায় চারটে নাগাদ তাঁর বাঁ পায়ে কিছু কামড়ে দেয়।
বিছানা থেকে লাফ দিয়ে উঠে ঘরের আলো জ্বালালে একটি কালো রঙের সাপকে বেড়ার ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যেতে দেখে। তাঁর চিত্কারে পরিবারের লোকজন ছুটে আসে। বাঁ পায়ের ক্ষতস্থানের ওপরের দিকে বাঁধন দিয়ে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় এক ওঝার কাছে।
অভিযোগ, ওঝা প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে কসরত করে এবং পায়ের বাঁধনও খুলে দেয়। সাগরের এক আত্মীয় বিশ্বনাথ সরকার বলেন, ‘‘ওঝার কাছেই সাগরের সারা গায়ে জ্বালা ও বুকে ব্যথা হতে শুরু করে। পরিস্থিতি বিগড়ে যাওয়ায় ওকে ভোরে মালদহ মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। সকাল ৯টার দিকে সে মারা যায়।’’
একমাস আগে ১৬ জুন ঠিক এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছিল রানাহাটের অজয় কিস্কু নামে আট বছরের এক শিশুর সঙ্গে। অভিযোগ, আগের দিন সন্ধ্যায় অজয়কে যখন সাপে ছোবল মারে তখন তাঁকে হাসপাতালে না নিয়ে গিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল স্থানীয় এক ওঝার কাছে। ওঝার কাছে দু’ঘণ্টারও বেশি সময় সে ছিল। ঝাড়ফুঁকের পর ওঝা নাকি নিদান দিয়েছিল যে সে সুস্থ হয়ে গিয়েছে। তাঁকে বাড়িও নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে প্রথমে বুলবুলচণ্ডী আরএন রায় হাসপাতাল ও পরে মালদহ মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। তবে শেষরক্ষা হয়নি,
সে মারা যায়।
হাসপাতালের ডেপুটি সুপার জ্যোতিষচন্দ্র দাস বলেন, ‘‘সাপে ছোবল দেওয়া রোগীকে একেবারে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে। চেষ্টা করেও বাঁচানো যাচ্ছে না।’’
পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞানমঞ্চের মালদহ জেলা সম্পাদক সুনীল দাস বলেন, ‘‘নানা কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আমরা জেলার বিভিন্ন ব্লকে নিরন্তর প্রচার করে চলেছি। তবুও বিক্ষিপ্ত ভাবে সাপে ছোবল দেওয়া রোগীকে হাসপাতালে না নিয়ে এসে ওঝার কাছে নিচ্ছে।’’